ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিতদের আজও অনুপ্রাণিত করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিতদের আজও অনুপ্রাণিত করে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত। এটি শুধু একটি ভাষণই ছিল না, বাঙালী জাতিসহ সারাবিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে এই ভাষণটি আজও যে শক্তি, অবলম্বন ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আবারও তা প্রমাণ হয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল, ৭ মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরবে, ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরে- ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির মাধ্যমে সেটাই আজ প্রমাণ হয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে আনীত একটি ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে সংস্থাটির ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ সরকার ও বিরোধী দলের ৫৭ সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখেন। আলোচনা শেষে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি সমর্থন করে বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালী জাতি স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত হয়েছিল। বাঙালী জাতির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মার যে গভীর একাত্মতা ছিল এই ভাষণে মর্মে মর্মে সেটি ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, মাতৃভাষার অধিকার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ছিল চরম মুহূর্ত। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতারই ঘোষণাই দেননি, বাঙালী জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের কথাও বলেছিলেন। একটা জাতিকে কীভাবে গড়ে তোলা হবে, তার সবকিছুই বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিক এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন বাঙালী জাতির শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে অসহযোগ আন্দোলন এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করতে কী কী করতে হবে সে নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন, পাকিস্তানের শাসকরা তাঁকে হয়তো আর কথা বলতে নাও দিতে পারে, সেজন্যই বলেছিলেন আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমাদের যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানী শাসকরাও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বন্ধ করতে পারেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো বন্ধ করে দিয়েছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ওই সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। মনে হচ্ছিল পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এসে দেশ চালাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম, নিশানা মুছে ফেলতে চেয়েছিল, ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরবে, ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরে- আজকে এটিই প্রমাণ হয়েছে। সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যে, সে দেশে একটি ভাষণ ৪৬ বছর ধরেই মানুষ শুনে যাচ্ছেন। যা এখনও এতটুকু পুরনো হয়নি, আবেদন হারায়নি। বরং মানুষ এই ভাষণ শুনে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। তিনি বলেন, আড়াই হাজার বছর ধরে যে ভাষণগুলো জাতিকে উজ্জীবিত করেছে, পৃথিবীর তেমন একশ’টি ভাষণের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্থান পেয়েছে। ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী এই ভাষণটিই ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রমাণ্য ঐতিহ্যে স্থান পেয়েছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদেরও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন বাজানো হতো। আমরাও ওই সময় গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় অপেক্ষায় থাকতাম কখন জাতির পিতার ভাষণটি শুনতে পারব। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী বক্তব্য প্রদানের আগে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার আগে বঙ্গবন্ধুকে অনেক নেতা অনেক কথা বলেছেন। অনেকে অনেক কিছু লিখেও দিয়েছেন। জনসভায় যাওয়ার আগে আমার মা (বেগম মুজিব) বাবাকে (বঙ্গবন্ধু) ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, কিছু সময় রেস্ট নাও, তোমার সামনে অনেক দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুর বিছানার পাশে মোড়া নিয়ে বসে আমার মা বললেন, অনেকে অনেক কথা বলবে। এ দেশের মানুষের কিসে ভাল হবে তোমার থেকে কেউ বেশি জানে না। জনগণের হাতে বাঁশের লাঠি, আর হানাদারদের হাতে বন্দুকের নল। লাখো মানুষের জীবন তোমার হাতে। তাই কারোর কথা শোনার দরকার নেই, তোমার মনে যা আসবে সেটিই তুমি বলবে। ৭ মার্চের ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর কাছে কোন লিখিত বা পয়েন্ট ছিল না। তিনি অলিখিত এই কালজয়ী ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আবেদন যুব সমাজের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। প্রতিবছর ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে একটি স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হচ্ছে। ওইসব বক্তব্য দিয়ে বই প্রকাশ করা হচ্ছে। ভাষণটি আজ ১২ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ ঐতিহাসিক দলিল- রওশন এরশাদ ॥ বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালী জাতি জেগে উঠে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। এই ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ায় গোটা বাঙালী জাতির সঙ্গে আমরাও গর্বিত, আনন্দিত। ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী ভাষণের মূল মর্মার্থই ছিল স্বাধীনতা। সারা পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শুধু ভাষণ ছিল না, স্বাধীনতা যুদ্ধের রণকৌশলের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। একটি অনন্য ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু রাজনীতির মহাকবি হয়েছিলেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু জন্ম নিয়েছিলেন বলেই একটি স্বাধীন দেশ, মানচিত্র, পতাকা পেয়েছি। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ ও রাজনীতির মহাকাব্য ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রমাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বসম্মতিক্রমে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতীয় সংসদ। পৃথিবীর অন্যতম এই শ্রেষ্ঠ ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ধন্যবাদ প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে দীর্ঘ আলোচনার পর সরকার ও বিরোধী দলের স্বতস্ফূর্ত সমর্থনে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ ও রাজনীতির মহাকাব্য’ উল্লেখ করার পাশাপাশি দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর দীপ্ত কণ্ঠের কালজয়ী এই ভাষণ কেবল বাঙালী জাতিকে আলোড়িত করেনি, বিশ্ব বিবেককেও নাড়া দিয়েছে। ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতি তারই প্রমাণ। তবে ভয় হয়, ইতিহাসের খলনায়ক দানবের দল (বিএনপি-জামায়াত) যদি কোন দিন ক্ষমতায় আসে, তবে আবারও বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী এই ভাষণ নিষিদ্ধ করবে, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ বন্ধ করে দেবে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে কার্যপ্রণালী বিধি ১৪৭ বিধির প্রস্তাবের (সাধারণ) ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম মাহমুদ আলী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষ বিষয়কমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সরকারী দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, অধ্যাপক আলী আশরাফ, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, ডাঃ এনামুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, সানজিদা খানম, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, উম্মে রাজিয়া কাজল, এনামুল হক, সাবিনা আখতার তুহিন, পংকজ দেবনাথ, বেগম আখতার জাহান, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, শামসুল হক টুকু, ইসরাফিল আলম, এটিএম আবদুল ওয়াহহাব, তাজুল ইসলাম, কাজী নাবিল আহমেদ, মোসলেম উদ্দিন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী, তাহজীব আলম সিদ্দিকী এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ফখরুল ইমাম ও পীর ফজলুর রহমান। প্রস্তাবে বলা হয়- ‘সংসদের অভিমত এই যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রমাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দেশ ও জাতির সঙ্গে আমরা গর্বিত এবং এজন্য ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জাতীয় সংসদ ধন্যবাদ জানাচ্ছে।’ বিকেল পৌনে পাঁচটা থেকে আলোচনা শুরু হয়ে মাঝে ২০ মিনিটের বিরতি শেষে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত চলে। দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘণ্টার আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিভাবে তা গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ আজ তা প্রমাণিত। ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতি ছিল অত্যন্ত প্রত্যাশিত। বঙ্গবন্ধুর অলিখিত ১৮ মিনিটের এ ভাষণ বাঙালী জাতিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর দীপ্ত কণ্ঠের এই ঘোষণা কেবল বাঙালী জাতিকে আলোড়িত করেনি, বিশ্ব বিবেককেও নাড়া দিয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছি, এবারও তার নেতৃত্বে পেলাম জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, প্রতিটি বাঙালী একজন যোদ্ধায় পরিণত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ হচ্ছে বিশ্বের নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের অনুপ্রেরণার ভাষণ। এই ভাষণ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি পংক্তিতে উঠে এসেছে বাঙালী জাতির ইতিহাস, শোষণ-বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনৈতিক কবি। নিরস্ত্র বাঙালী জাতিকে একটি মাত্র ভাষণে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম মাহমুদ আলী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে অতি তাৎপর্য বিষয়ই ইউনেস্কোর রেজিস্টারে স্থান পায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং স্বাধীনতা অর্জনে অনুপ্রেরণার উৎস্য ছিল। ঐতিহাসিক এই ভাষণটি মূলত বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য চিরদিন এই ভাষণ অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে নিরস্ত্র জাতি সশস্ত্র জাতিতে পরিণত হয়েছিল, জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কয়েকটি বাক্যের এই কালজয়ী ভাষণে বাঙালী জাতির ২৩ বছরের শোষণ, বঞ্চনার কথা বিশ্ববাসী জানতে পেরেছিল। জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি ইতিহাস বিকৃতকারী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের মুখে চপেটাঘাত। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার রণনীতি ও রণকৌশল ঘোষণা করেন, সশস্ত্র যুদ্ধের কৌশলও বাতলে দেন। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণে ২৬টি বাক্যের মাধ্যমে গোটা জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছেন। এই ভাষণ শুধু বাংলাদেশের নয়, সারাবিশ্বের বাঙালী জাতির অহংকার, গর্বের। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের কালজয়ী এই ভাষণের প্রতিটি অক্ষর নিয়ে একটি করে প্রবন্ধ লেখা সম্ভব। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই ভাষণটি বাজাতে দেয়া হয়নি। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরই সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অন্য কারোর ঘোষণার প্রয়োজন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী এই ভাষণেই বাঙালী জাতি বুঝে গিয়েছিল কী করতে হবে। জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালী জাতির অস্তিত্বকে সৃষ্টি করেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করতে অনেক দিন লেগেছে। এখন অনেক দেশের পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কূটনৈতিক ও দূরদর্শী ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। গেরিলা যুদ্ধের সমস্ত রণকৌশল ১৮ মিনিটের ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মহাকাব্য। গোটা বাঙালী জাতি সেই মহাকাব্য শুনে হানাদারদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার মর্মবাণী, স্বাধীনতার মহাকাব্য সৃষ্টির সূচনা। চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাঙালী জাতির মুক্তির সনদই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইউনেস্কোর ৪৭৭টি দালিলিক সংগ্রহের মধ্যে ভাষণ মাত্র একটি, সেটি হলো জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণ। এই ভাষণ অবিনশ্বর। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ একটি কালজয়ী ভাষণ, রাজনীতির মহাকাব্য। বিএনএফের চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণার দাবি জানান। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, পৃথিবীর অনেক বড় বড় নেতার ভাষণ রয়েছে, কিন্তু তাঁদের কারো ভাষণ ইউনেস্কো গ্রহণ করেনি, করেছে একটি মাত্র ভাষণ। সেটি হলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। কারণ মাত্র ১৮ মিনিটের কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির মহাকবি, দার্শনিক, রাজনীতির শিক্ষক। জাতি এমন একটি মহামানবের জন্য হাজার বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন।
×