ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিসম্যাটিক সেবাস্তিয়ান কুর্জ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

ক্যারিসম্যাটিক সেবাস্তিয়ান কুর্জ

উন্ডারউজ্জি, হতে চলেছেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর। সবচেয়ে কম বয়সে কোন দেশের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করবেন তিনি, যা বিশ্বের ইতিহাসে এক অসামান্য রেকর্ড। নাম সেবাস্তিয়ান কুর্জ, কেউ কেউ তাকে উন্ডারউজ্জি বলে ডাকেন। জন্ম ভিয়েনাতে ১৯৮৬ সালের ২৭ আগস্ট এবং বড় হয়েছেন দেশটির একটি জেলা শহর মিডলিংয়ে, থাকছেন সেখানেই। বয়স মাত্র ৩১ বছর। বয়স কম হতে পারে কিন্তু তার রয়েছে চমকপ্রদ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। একটি জিমনেসিয়ামে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৪ সালে অবলিগেটরি মিলিটারি সার্ভিসের পর ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তবে ২০১১ সালে ৭ বছর পর কোন ডিগ্রী না নিয়েই তা বাদ দেন এবং পুরোদমে রাজনীতিতে নামেন। অবশ্য আজ থেকে আট বছর আগেই ২৩ বছর বয়সে রাজনীতিতে আসেন ওভিপি এর যুব শাখার নেতা হিসেবে আর ধীরে ধীরে স্মার্টনেস আর ক্যারিসম্যাটিক কাজের জন্য সকলের মনে এক বিশেষ জায়গা করে নেন। ২০০৯ সালে, ২৩ বছর বয়সে অস্ট্রিয়ার রাজনৈতিক দল দ্য পিপলস পার্টির যুব শাখার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি ভিয়েনা সিটি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১০ ও ২০১১ সালে। ২০১১ সালে নবসৃষ্ট ‘ইনটেগ্রেশন’-এর সেক্রেটারির দায়িত্ব পান, এ ‘ইনটেগ্রেশন’ হল দেশটির মিনিস্ট্রি অব ইনটেরিওরের একটি অংশ। এরপর ২০১৩ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছর ডিসেম্বরে তিনি অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান, তখন তার বয়স দাঁড়া ২৭-এ এবং এটি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সুবাধে তার সুযোগ হয়েছে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে নিউক্লিয়ার চুক্তি নিয়ে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে বৈঠক হয়েছিল তা আয়োজন করার এবং চুক্তিটি ২০১৫ সালে ভিয়েনাতেই স্বাক্ষর করা হয়। মি. কুর্জ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার প্রথম বছরেই ‘কমিটি অব মিনিস্টার্স অব দ্য কাউন্সিল অব ইউরোপ’-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের নেতৃত্ব দেন এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালে ইউরোপের অভিভাসন সমস্যা নিয়ন্ত্রণ কিভাবে আরও জোরদার করা যায় সে ব্যাপারে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন এবং ভাষা ও শিক্ষা, শ্রম ও চাকরির বাজার এবং আইন বিষয়ে ৫০ দফা প্রস্তাব রাখেন। ২০১৫ সালে ইসলামী আইনেরও একটি প্রস্তাব রাখেন এবং আইনটি ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই পাস করে অস্ট্রিয়া সরকার। এ আইনের দ্বারা বিদেশী কোন দেশ থেকে দেশের অভ্যন্তরে থাকা মসজিদগুলোতে অর্থায়ন ও ইমামদের বেতন প্রদানে বাঁধার সৃষ্টি করা হয়। পাশাপাশি মুসলিমদের হালাল খাবারের অধিকার থেকে শুরু করে সব রকম সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়। কুর্জের মধ্যে অনেকেই দেশের ভবিষ্যতে দেখতে পেলেও তা এতটা তাড়াতাড়ি সত্য হয়ে যাবে এমন কেউই কল্পনা করতে পারেননি। অনেকেই বলছেন যে, অবৈধ অভিবাসীবিরোধী ক্যাম্পেনের কারণেই সবার মনে জায়গাটা পোক্ত করে ফেলেন তিনি। এমনকি নির্বাচন চলাকালীন সময়েও এই অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত একটি কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার অর্থাৎ ২০ অক্টোবর অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভ্যান দের বেলেন আনুষ্ঠানিকভাবে কুর্জের ওভিপিকে সপ্তাহের ভেতরেই সরকার গঠন করতে আমন্ত্রণ জানান। তবে ওভিপিকে অবশ্যই সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট কিংবা ফ্রিডম পার্টিকে সাথে নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে যেহেতু নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় সেবাস্তিয়ান কুর্জের দল। কুর্জও মিডিয়াকে বলেছেন যে, তিনি এ নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবেন যদিও ওভিপি যদিও সংখ্যা গরিষ্ঠতা দিতে পারবে কেবল উল্লিখিত এই দুই দলই। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার আগে তিনি ব্রাসেলসে গিয়েছেন তার পক্ষে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সমর্থন নিশ্চিত করতে। চোখ রাখতে হবে শেষ পর্যন্ত, দেখতে হবে কি হতে চলেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে বা রহস্যজনকভাবে রিনহোল্ড মিটেরলেহনার পদত্যাগ করলে চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের শুরুর দিকে তিনি তার রাজনৈতিক দল দ্য অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টির (ওভিপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং দু’মাস যেতে না যেতেই তিনি দলের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়ে যান। লিঞ্জে দলীয় সম্মেলনে কুর্জের পক্ষে ভোট পড়েছিল ৯৮.৭০ শতাংশ। এই সম্মেলনে কিছু বড় রকমের পরিবর্তন আনা হয় যা বিভিন্ন নীতিনির্ধারণ কর্মে দলীয় প্রধানের হাত লম্বা করা হয়, এ ছাড়া নির্বাচন কারা প্রার্থী হবেন এবং দল সরকার গঠন করলে কারা মন্ত্রী হবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও দলীয় প্রধানকে দেয়া হয়। এ ক্ষমতা সেবাস্তিয়ান কুর্জের চলার পথ আরও মসৃণ করে দেয়। শুরুতেই তিনি রির্বান্ডিং করেন, ‘এখন সময় নতুন কিছু করার’ স্লোগান নিয়ে দলের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘দ্য নিউ পিপলস পার্টি।’ সেবাস্তিয়ান কুর্জ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, বাবা প্রকৌশলী এবং মা শিক্ষিকা। এখনও বিয়ে করেননি তবে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন বলে জানা যায়। চলমান ডেস্ক সূত্র : পলিটিকো, রয়টার্স এবং আল জাজিরা
×