ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তানিয়া হক ভূইয়া

বরফ গলতে শুরু করেছে রিয়াদ-আঙ্কারা সম্পর্কের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

বরফ গলতে শুরু করেছে রিয়াদ-আঙ্কারা সম্পর্কের

সৌদি আরব ও তুরস্কের মধ্যে গুণগত ও পরিমাণগত সম্পর্ক দ্রুত উন্নতির সম্মুখীন হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে এটি প্রধান আকর্ষণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। কেননা দুদেশের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এজন্য প্রধান স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছে বলে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ইউনুস ডেমিরার মনে করেন। তুর্কি জাতীয় দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মত ব্যক্ত করেন। আরব নিউজ। তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের সম্পর্কের গভীরতা ও বৈচিত্র্য, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক কল্যাণের জন্য যৌথ প্রতিশ্রুতি, সচ্ছতার স্বার্থগুলো দেশদুটির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে উচ্চতর স্তরে উন্নীত করার জন্য পরিচালিত করেছে। আমরা দুই ভাতৃপ্রতিম দেশ ঐতিহাসিকভাবে দৃঢ় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ। সৌদি আরব ইসলামের জন্মস্থান। দুটি পবিত্র মসজিদ সেখানে স্থাপিত। তুর্কিদের হৃদয়ে ও মননে সৌদি আরবের একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ ও দৃঢ় অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। তুর্কি রাষ্ট্রদূত মনে করিয়ে দেন যে, যদি সবদিক থেকে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীরতর না হয় তাহলে তা আমাদের জনগণের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না। শুধু তাই না আঞ্চলিকভাবেও কল্যানকর কিছু হবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংলাপের কেন্দ্রবিন্দু সবসময় আনুষ্ঠানিক সফরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। উদাহরণস্বরূপ গত দুই বছরে তুর্কি ও সৌদি আরবের মধ্যে ২৫টি উচ্চপর্যায়ের আনুষ্ঠানিক সফর ছিল। সৌদি ও তুরস্কের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তুর্কি রাষ্ট্রদূত ডেমিরার বলেন, দুদেশের সম্পর্ক কেবল রাজনীতিবিদ বা কূটনীতিকদের কাছেই নয় বরং এই সম্পর্কগুলোও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে সুদৃঢ় করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, গত কয়েক বছরে তুরস্ক ভ্রমণে সৌদি নাগরিকদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৬ সালে পাঁচ লাখেরও বেশি লোক তুর্কি ভ্রমণ করেছে। ২০১৬ সালের একই সময়ে তুলনায় ২০১৭ সালের প্রথম সাত মাবে এই সংখ্যা ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্প ক্রমবর্ধমানহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তুরস্ক হালাল পর্যটন পণ্য ও সেবা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে। সৌদি আরব ও তুরস্কের প্রতিষ্ঠিত বিশেষ পরিষদের কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি-তুর্কি সমন্বয় পরিষদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকে আমাদের যোগাযোগ ও বিনিময় একটি নতুন বিশেষ চ্যানেল খুঁজে পেয়েছে। সৌদি-তুর্কী সমন্বয় পরিষদ আমাদের দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রাকৃতিক উদ্দীপনা এই বছরগুলোতে বেড়েছে। আট ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বার্ষিক আলোচনার প্রথম রাউন্ডের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন বিশেষ কাজের গ্রুপগুলোর আকারে সঠিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, কাঠামোগত ব্যবস্থার সঙ্গে বিদ্যমান সম্ভাব্যতাটি অবশেষে পাওয়া যায় বলে বলা হয়। ২০১৭ সালে আঙ্কারায় এই নতুন কাউন্সিল পরিচালনার জন্য মূল্যায়ন কৌশল ও অর্থানুগ নিখুঁত ছিল। কাউন্সিল সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, ক্রীড়া, শ্রম সম্পর্ক ও আবাসন উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সহযোগিতার দিক নির্দেশনা দেয়। সৌদি-তুর্কি সহযোগিতা পরিষদের কাঠামোর মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের উদ্যোগের সুযোগ ও তীব্রতার একটি ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পাব। সিরিয়া, ইয়েমেন ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় তুরস্কের অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি আরব ও তুরস্কের একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ফিলিস্তিনের দুর্দশার মতো সিরিয়ার আঞ্চলিক বিষয়ে অভিন্ন মত রয়েছে। সিরিয়া যুদ্ধ, ইরাকের পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় উভয় দেশ একই মত পোষণ করে থাকে। বলা হচ্ছে, এটি একটি আশ্চর্য বিষয় হিসেবে আসা উচিত নয় যে উভয় দেশের মধ্যে কাঠামোগত উদ্যোগগুলো আমাদের উভয় দেশের সংহতির সঙ্গে যুক্ত এমন মনোভাবকে প্রতিফলিত করবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে উভয়দেশই ঘনিষ্ঠ বন্ধন তৈরি করেছে। আমাদের বাণিজ্যের গঠন সম্পর্কে সতর্কভাবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে একটি সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। যা আমাদের আমদানি ও রফতানিতে একে অপরকে ভাল করার ক্ষেত্রে ভালভাবে উদ্ভাবন করেছে। তুর্কিদের মোট আমদানির শতকরা ৯০ শতাংশ তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল সৌদি আরব থেকে সমন্বয় করা হয়। অন্যদিকে সৌদিতে তুরস্কের প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছে শিল্পপণ্য। সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ উদীয়মান উদ্দীপক ও আগ্রহের সঙ্গে তুরস্কও অনুসরণ করে থাকে। আমাদের সরকার ভিশন ২০২৩ নামে একটি অনুরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা আমাদের প্রজাতন্ত্রে শত শত বছরের উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরে এটি একটি কৌশলপূর্ণ অবস্থান। সৌদি আরব এজন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার ও নিশ্চিত বন্ধু হিসেবে খুঁজে পেতে তুরস্ককে মনে করতে পারে।
×