ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও একমাত্র টি২০ ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ। এই আসরের প্রথম দুই সংস্করণেই সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন বিশ্বসেরা টি২০ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এরপর আর তিনি সেরা হতে পারেননি। আর এবার পঞ্চম আসরে এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে আহামরি কোন পারফর্মেন্স দেখা যায়নি। ব্যাট হাতে পুরোপুরিই ব্যর্থ সাকিব অবশ্য বল হাতেও নিষ্প্রভ। ৪ ম্যাচ খেলে তিনি মাত্র ৩ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি রান করেছেন মাত্র ৬২! অথচ তিনিই গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক এবং আইকন। আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটে-বলে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়েছেন এ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তিনি সম্প্রতিই জাতীয় দলের টি২০ ফরমেটেও নেতৃত্ব পেয়েছেন। নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য অবশ্য সাকিবের যথেষ্ট সময় বাকি আছে। এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি করে ম্যাচ হয়েছে চলতি বিপিএলে। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী এ ক্রিকেটার যে কোন দলের জন্যই অনেক বড় শক্তি। কারণ অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি ব্যাটিং-বোলিংয়ের সম্মিলিত নৈপুণ্যে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কারণেই গত বিপিএল এবং চলতি আসরে তিনিই সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া দেশী ক্রিকেটার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি দলকে কিছুই দিতে পারেননি। যদিও তার নেতৃত্ব চলতি আসরেও ঢাকা ডায়নামাইটস দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছে। চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতে এখন শীর্ষে আছে দলটি। কিন্তু চেনা সেই সাকিবকে দেখতে পাননি ক্রিকেটভক্ত-সমর্থকরা। গত চার ম্যাচে ব্যাট হাতে তার রান- ২৩, ১, ১৮* ও ২০। আর বল হাতে একটা ম্যাচে ২ উইকেট নেয়াটাই সেরা নৈপুণ্য। সবমিলিয়ে মাত্র ৩ উইকেট শিকার করতে পেরেছেন তিনি। বেদম পিটুনি খাওয়ার কারণে মাত্র ১১ ওভার বোলিং করেছেন এই চারটি ম্যাচ খেলে। ওভারপ্রতি ৮.১৮ করে রান দিয়েছেন। অথচ বিপিএলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ৫২ ম্যাচ খেলে ৬৪ উইকেট নিয়ে তিনিই সেরা বোলার। ব্যাটিং পরিসংখ্যানেও বিপিএলের ইতিহাসে তৃতীয় অবস্থানে আছেন। বিপিএলে এখন পর্যন্ত যে চার ক্রিকেটার এক হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তার মধ্যে সাকিবও আছেন। সেই সাকিবকে এবার খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। টি২০ ক্রিকেটে সাকিব মহাতারকা হিসেবে সারাবিশ্বেই স্বীকৃত। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এই ফরমেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের স্থানটা ধরে রেখেছেন। এ কারণে বিশ্বের সেরা টি২০ লীগে খেলেন তিনি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ আসরে প্রতিবারই প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু সাকিব কি হঠাৎ করেই ফুরিয়ে গেলেন? এবার বাংলাদেশ দলের টি২০ ফরমেটে অধিনায়কত্বও পেয়েছেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। কিন্তু সেখানেই দুই ম্যাচে ব্যাটে-বলে একেবারে অনুজ্জ্বল ছিলেন সাকিব। দুই ম্যাচে করেছেন ১৩ ও ২ রান এবং উইকেট নিয়েছেন ১ ও ২টি। সর্বশেষ গত বছর ১৬ মার্চ টি২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি অপরাজিত ফিফটি (৫০*) রান করতে পেরেছিলেন। এরপর ১০ ম্যাচে তার তিনটি আছে ত্রিশোর্ধ ইনিংস। বাকিগুলোতে হয়েছেন ব্যর্থ। একই ম্যাচ থেকে শুরু করে সর্বশেষ টি২০ পর্যন্ত ১১ আন্তর্জাতিক টি২০তে সাকিব বল হাতেও আহামরি কোন সাফল্য পাননি। নিতে পেরেছেন মাত্র ১২ উইকেট। ক্ষুদ্রতম ফরমেটে এটিকে ভদ্রস্থ পরিসংখ্যান হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। কিন্তু এর মধ্যে তিনি চার ম্যাচেই ছিলেন উইকেটশূন্য। এবার বিপিএল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে প্রতি ম্যাচের একাদশে ৫ জন বিদেশী খেলানো নিয়ে। আর সে কারণে দেশী ক্রিকেটাররা নৈপুণ্য দেখানোর সুযোগটা সেভাবে পাচ্ছেন না এমন অভিযোগও আছে। কিন্তু বরাবরই সাকিব অন্তত বিশ্বসেরা তারকাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই খেলেন এবং ভাল নৈপুণ্যও দেখান। তাই এক্ষেত্রে বিষয়টি কোনভাবে তার জন্য প্রযোজ্য নয়। সাকিব সেটা বিপিএলেও করে দেখিয়েছেন। এবার চলতি আসরে তার ব্যাটে-বলে জ্বলে ওঠার অপেক্ষা। চ্যাম্পিয়ন ঢাকাও সে আশাতেই আছে। আর আগামী আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ নেয়ার আগে সাকিব বিপিএলেই নিজেকে ভালভাবে পুরনো রূপে ফিরে আসবেন এমনটা প্রত্যাশা দেশের সব ক্রিকেটপ্রেমীদেরই।
×