ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৬০ বছর পর বিশ্বকাপ থেকে বাদ ইতালি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

৬০ বছর পর বিশ্বকাপ থেকে বাদ ইতালি

১৯৫৮ সালের পর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসরে খেলা হচ্ছে না দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের, প্লে-অফের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে আজ্জুরিদের রুখে দিয়ে বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে সুইডেন, ব্যর্থতা স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন ইতালির ফুটবলার ও কোচিং স্টাফরা জাহিদুল আলম জয় ॥ এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সবচেয়ে আলোচিত দল আর্জেন্টিনা। দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশের ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা হবে কিনা তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত ছিল শঙ্কা। নিজেদের শেষ ম্যাচে অধিনায়ক লিওনেল মেসির জাদুকরী পারফর্মেন্সে ভর করে অবশেষে বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে খেলা নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা বাদ যেতে যেতে বিশ্বকাপে উঠে এসেছে। তখন পর্যন্ত কেউ ভাবেনি এই যন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে ইতালিকে। অবাক করে দিয়ে ইউরোপীয় অঞ্চলের বাছাইপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে রেকর্ড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ১৯৫৮ সালের পর অর্থাৎ ৬০ বছর পর বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে দেখা যাবে না ইতালিকে। প্লে-অফে সুইডেনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার কারণেই এ করুণ পরিণতি। রাশিয়া বিশ্বকাপে যেতে সোমবার রাতে নিজেদের মাঠ মিলানের সানসিরোতে সুইডেনের বিরুদ্ধে কমপক্ষে দুই গোলের ব্যবধানে জয় প্রয়োজন ছিল জিয়ানলুইজি বুফনের দলের। ১-০ গোলে জিতলেও ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে গড়াত। কিন্তু জয় দূরে থাক গোলের দেখা পায়নি স্বাগতিকরা। গোলশূন্যভাবে ম্যাচ শেষ করে আজ্জুরিরা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলের জয় নিয়ে বিশ্বকাপের টিকেট কেটেছে সুইডিশরা। প্রথম লেগে সুইডেন নিজেদের মাঠে পেয়েছিল ১-০ গোলের মহামূল্যবান জয়। বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে ইতালি এখন শোকের দেশ। অপ্রত্যাশিতভাবে বাদ পড়ে দেশটির ফুটবলই এখন দুশ্চিন্তার ঘনঘটার মধ্যে পতিত হয়েছে। তবে এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য ইতালিয়ানদের যেমন ব্যর্থতা আছে তেমনি আছে দুর্ভাগ্যও। তাদের দুর্ভাগ্য, বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপে ছিল বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। তাদের টপকে গ্রুপের সেরা হওয়া হয়নি বুফন, চিয়েল্লিনিদের। তাইতো গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে খেলতে হয় প্লে-অফে। সেখানেও অন্য ছয়টি দেশের চেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ সুইডেনকে পায়। শেষ পর্যন্ত এই বাধা টপকাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। ম্যাচ শেষে তাই ইতালির ফুটবলার ও কোচিং স্টাফরা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। গত দুটি বিশ্বকাপেও খুব একটা ভাল কাটেনি ইতালির। সর্বশেষ ২০০৬ সালে জার্মান বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে। সুইডেন ২০০৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বের টিকেট পেয়েছে। সানসিরোতে ৭৪ হাজার স্বাগতিক সমর্থকদের মাঝে অসাধারণ এক পরিবেশ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে আজ্জুরিরা। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের আসরে দেখা যাবে না ইতালিকে। ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপের প্রথম আসর ছাড়াও ১৯৫৮ সালে সুইডেনে খেলতে ব্যর্থ হয়েছিল ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা। ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেয়া সুইডিশ তারকা জøাতান ইব্রাহিমোভিচের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও এবার সুইডেন বাছাইপর্বে আলো ছড়িয়েছে। ইব্রাহিমোভিচ যা পারেননি তা করে দেখিয়েছেন জোহানসনরা। ম্যাচের শুরু থেকেই ইতালি সুইডিশদের ওপর চেপে বসে। এ্যান্টোনিও কানড্রেভার পর আলেসান্দ্রো ফ্লোরেনজি ও সিরো ইমোবিলের শট সুইডিশ গোলরক্ষক রবিন ওলসেন রুখে দেন। সুইডিশ ডিফেন্ডার মিকালে লাস্টিং আত্মঘাতী গোলের লজ্জায় প্রায় ফেলেই দিয়েছিলেন সফরকারীদের। কিন্তু তার ডিফ্লেকটেড বল বারে লেগে ফেরত আসে। ম্যাচে ইতালিয়ান দলে ছিলেন না বেশ কয়েকজন তারকা। মার্কো ভেরাত্তি নিষিদ্ধ, অন্যদিকে সিমোনে জাজা ও লিওনার্ডো স্পিনাজোলা দু’জনই ইনজুরিতে। ড্যানিয়েল ডি রোসি ও আন্দ্রে বেলোত্তি পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। এ কারণে কোচ গিয়ান পিয়েরো ভেঞ্চুরা বাধ্য হয়েই ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত জরগিনহোকে প্রথমবারের মতো মূল একাদশে সুযোগ দেন। এছাড়া ফ্লোরেনজি ও মানোলো গাব্বিয়াডিনি ফের মূল দলে ফেরেন। নেপোলির ইন-ফর্ম উইঙ্গার লোরেনজে ইনসিগনেকে আরও একবার বদলি বেঞ্চে বসেই প্রথমার্ধের ম্যাচ উপভোগ করতে হয়। সুইডেনের লাস্টিং নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরেন। ইনজুরি আক্রান্ত আলিকন একডালের স্থানে প্রথম দলে সুযোগ পান জোহনসন। ম্যাচের শুরুতেই ডি বক্সের মধ্যে মার্কো পারোলোকে পিছন দিক থেকে ট্যাকেল করেন লুডউইগ অগাসটিনসন। কিন্তু এর বিপরীতে স্বাগতিকদের পেনাল্টির আবেদন নাকচ করেন দেন স্প্যানিশ রেফারি এ্যান্টোনিও মাটেও। ১৫ মিনিটের মধ্যে সুইডেন তাদের প্রথম লেগের গোলদাতা জোহানসনকে হারায়। বাম হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত ভালভাবেই স্বাগতিকদের রুখে দিয়ে বিশ্বকাপে নাম লেখায় সুইডেন। ম্যাচ শেষে সুইডিশ কোচ জেনে এন্ডারসন বলেন, আমি সত্যিই বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। আমি খুব খুশি, আনন্দিতও। এই ম্যাচটি কার্যত আমাদের সংঘবদ্ধ শক্তিরই বহিঃপ্রকাশ ছিল। ইব্রাকে নিয়ে আমরা ভিন্ন একটি দল ছিলাম। সে একজন অসাধারণ চ্যাম্পিয়ন। তাকে ছাড়া আমাদের সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে এবং অন্যভাবে নিজেদের গুছিয়ে নিতে হয়েছে।
×