ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পাঠকের আনন্দের ঠিকানা লালমাটিয়ার বেঙ্গল বই

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

পাঠকের আনন্দের ঠিকানা লালমাটিয়ার বেঙ্গল বই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সবাই হতে পারে না বইপোকা। কেউ কেউ হেঁটে যায় সেই সৃজনের পথে। তাদের জন্য অবসরের সবচেয়ে ভাল বন্ধুটি হচ্ছে বই। নিজেকে সমৃদ্ধ করতেও বিকল্প নেই বইয়ের। সৃজনশীল কিংবা মননশীল মানুষ গড়তেও একই কথা প্রযোজ্য। তেমনই এক চমৎকার উদ্যোগ বেঙ্গল বই। প্রকৃত পাঠকের জন্য আনন্দের ঠিকানা হয়ে উঠবে বই বিতানটি। আর এখানে শুধু বই পড়া নয়, রয়েছে আর অনেক কিছু। হতে পারে জমিয়ে আড্ডা কিংবা সুযোগ থাকছে শিল্পের রস আস্বাদনের। ‘বইয়ের মাঝে ডুব’ প্রতিবাদ্যে রাজধানীর লালমাটিয়ায় যাত্রা করল বইয়ের এ বিপণিবিতান বেঙ্গল বই। যেখানে মিলবে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য সব প্রকাশনীর উল্লেখযোগ্য বই। প্রশস্ত আঙ্গিনায় বসে পড়া যাবে বই বা সাময়িকী। পড়তে পড়তে সেই বই বা ম্যাগাজিনটি পছন্দ হলে বাড়িতে নিয়েও যাওয়া যাবে। তবে বিনিময়মূল্য হিসেবে নিজের সংগ্রহ থেকে দুটি বই এখানে দিয়ে যেতে হবে। বই পড়া ও দেখার পাশাপাশি চা, কফি ও ফ্রেশ জুস পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা। রয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য স্বপ্নরাজ্য ‘আকাশ কুসুম’। শিশুরা এ কর্নারে বসে বই পড়তে পারবে, আঁকতে পারবে। খেলতেও পারবে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার যাত্রা করল বই বিতান বেঙ্গল বই। বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু ও অধ্যাপক নিয়াজ জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ব্যক্তিক আখ্যান ‘স্টোরিস ফ্রম দি এজ : পারসোনাল নেরেটিভস অব দি লিভারেশন ওয়ার’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে গওহর রিজভী বলেন, ঢাকা শহরে খুব বেশি বুকশপ ক্যাফে নেই। বেঙ্গল বই এসে সে শূন্যতা পূরণ করল। পুরো ভবন ঘুরে এসে সত্যি অসাধারণ লাগল। আশা করি আগামীতে রাজধানীর গুলশানে এ ধরনের একটি বুকশপ ক্যাফে খুলবে বেঙ্গল ফাউন্ডেভন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, তরুণ প্রজন্ম বই থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। তারা এখন আধুনিক প্রযুক্তির কী সব নতুন খেলা নিয়ে ব্যস্ত, কথা বলতে গেলে তাদের চোখ থাকে মোবাইলে। এই প্রজন্মকে আমাদের বইয়ের জগতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের ২৫টি ও ভারতে ১৫টি প্রকাশনার বই পাওয়া যাবে এখানে। গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে মিলবে শিল্পকলা, সাহিত্য, স্থাপত্যবিষয়ক বইও। বাংলাদেশের প্রকাশিত যে কোন বই ২০ শতাংশ ছাড়ে কিনতে পারবেন। তবে ভারতীয় বইয়ের ক্ষেত্রে মূল্যের দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। পরিবেশকে মনোরম করে তুলতে দেয়ালজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন শিল্পীর চিত্রকর্ম। আছে শিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের একটি ভাস্কর্য। সময়ে সময়ে দেয়ালজুড়ে থাকবে চিত্র প্রদর্শনীর আওতায় নানা শিল্পকর্ম। একটু সবুজও দেখা মিলবে ভবনের ফাঁক গলে। প্রবীণদের জন্য রয়েছে বইয়ে বিশেষ ছাড় এবং বাগানে বসে আড্ডা দেয়ার পরিবেশ। ভবনের তিনতলার প্রায় পুরোটাই শিশুদের জন্য। ‘আকাশ কুসুম’ নামে সেই রাজ্যে শিশুবান্ধব পরিবেশে বইপড়া ছাড়াও গল্প বলা, আবৃত্তি, ছবি দেখা ও আঁকাআঁকির মধ্য দিয়ে শিশুদের কল্পনার জগৎ লালিত হবে। বইয়ের পাশাপাশি আছে লেখাপড়ায় সহায়ক নানা আকর্ষণীয় সামগ্রী। বেঙ্গল বই-এ নিয়মিত পাঠচক্র, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন থাকছে। ছুটির দিনগুলোয় প্রিয়জনদের নিয়ে বাগানে বসে চলতে পারে আড্ডা। বেঙ্গল বই-এর যাত্রা শুরু উপলক্ষে ১৮ নবেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার ছিল অনুষ্ঠানমালার উ™ে^াধনী। আগামী চার দিনই সকাল-সন্ধ্যা গান, আড্ডা, গল্প, বই প্রকাশনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে মুখরিত হবে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ১/৩ ঠিকানায় বেঙ্গল বই প্রাঙ্গণ। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে বয়সী কল্যাণ সমিতির সদস্যদের নিয়ে অগ্রজদের জন্য গান, গল্প ও আড্ডা। কিশোরগঞ্জে গানে আলোচনায় হুমায়ূন স্মরণ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়’ এমন কালজয়ী গানের কারিগর জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদকে কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতিকর্মীরা গানে-আলোচনায় স্মরণে আনেন। লেখকের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় শহরের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে কিশোরগঞ্জ সংস্কৃতি মঞ্চ ‘চান্নি পশরে কে আমায় স্মরণ করে...’ শীর্ষক আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উপ-সচিব তরফদার মোঃ আক্তার জামীল। বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ। সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি মোঃ জিয়াউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ৭ই মার্চের ভাষণের স্বীকৃতির সাংস্কৃতিকসন্ধ্যা ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ‘বিশ্ব প্রমাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ এ যুক্ত হওয়ায় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সোমবার সন্ধ্যায় একাডেমির নন্দনমঞ্চের এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান, কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং বাংলাদেশ বেতারের সাবেক উপপরিচালক আশফাকুর রহমান খান। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যদল। ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাওগো, ‘ধন্য মুজিব ধন্য, বাংলার হিন্দু বাংলার মুসলিম, ‘দুঃখিনী বাংলা জননী বাংলা, যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা, ‘মুজিব আছে বাংলার ঘরে ঘরে, সাড়ে সাত কোটি মানুষের আর একটি, ‘মুজিব মানে আর কিছু না, শোন একটি মুজিবরের থেকে, ‘বিদ্রোহী, ‘তুমি বলেছিলে এবারের সংগ্রাম, মুজিব মানে বিজয়ের গান ইত্যাদি গানের কথায় নৃত্যের ছন্দে আয়োজনকে মনোজ্ঞ করে তোলে শিল্পীরা। এতে কবিকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, আসলাম সানী, আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফ। শিল্পকলা একাডেমির এ্যাক্রোবেটিক দলের পরিবেশনায় এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
×