ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব

হারিয়ে যাওয়া নবান্নের গল্প ফিরে আসছে নতুন করে...

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

হারিয়ে যাওয়া নবান্নের গল্প ফিরে আসছে নতুন করে...

সমুদ্র হক ও মামুন-অর-রশিদ হারিয়েই গিয়েছিল সেই কথা- গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ। হারানো সেই গল্প ফিরে আসছে নতুন গল্প হয়ে। বাঙালীর শিকড়ের সংস্কৃতির একান্নবর্ত্তী পরিবারের নবান্ন এখন সার্বজনীন উৎসব। নবান্নকে সামনে রেখে আজও নিকটজন আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের মিলন মেলা বসে। গ্রামের কৃষক পারিবার নতুন ধান কেটে ঘরে তোলে। তারপর সিদ্ধ শুকনো করে ধান ভেনে চাল। সেই চালের প্রথম খাবার তৈরি হয় ফিরনি পায়েস। মুখ মিষ্টি করে নতুন চালের ভাত এবং মাছসহ কয়েক পদের সবজির তরকারিতে নবান্নের ভোজন হয়। সবজি আর মাছের ঝোলে চেটেপুটে খাওয়ার এক মহাআনন্দ। এই আনন্দ এখন গ্রামের গৃহস্থ ও কৃষকের উঠোন হয়ে পৌঁছে যায় রাজধানী এবং নগর-মহানগরে। কংক্রিটের বনে ভেসে আসে নবান্নের গানের সুর....। তরুণীরা মেতে ওঠে নাচে গানে। এই সময়টায় প্রকৃতিতে সকাল ও সন্ধ্যায় কুয়াশার আস্তরনে ঢেকে যায়। শীতের আবহ দিনে দিনে পোক্ত হচ্ছে। শীতের পিঠার সময় এগিয়ে আসছে। গাছিরা খেজুর গাছে উঠেছে। খেজুর রসের গুঁড়েও তৈরি হবে পিঠা। নবান্নের উৎসবকে ঘিরে কত যে আয়োজন......। যাদের নিয়ে নবান্নের উৎসব, যারা রোদ ঝড় বৃষ্টি খরা বন্যা মোকাবেলা করে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মুখে আহার তুলে দিয়ে বাড়তি খাদ্য বিদেশে রফতানি করছে, অন্তরালে থাকা বাংলার সেই চাষী কৃষক নবান্নের সুর মিলিয়েছে মাঠে প্রান্তরে। যন্ত্র কৃষির উন্নয়নে গ্রামে ঢেঁকির দেখা মেলে না তবে সংস্কৃতির চিরন্তন সুর ‘ও ধান ভানিরে ঢেঁকিত পাড় দিয়া....’ আজও সেই গীত কণ্ঠে বেঁধে রেখেছে গাঁয়ের বধূরা। দেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর সেদিনের সকল মানুষের মুখে আহার জোগাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন বাংলার কৃষক আজ তা সার্থক করেছে। জমিতে চাষ করা চারা রোপন থেকে ধান কেটে আঙিনায় মাড়াই করে বস্তায় ধান ভরা পর্যন্ত সবই এখন যন্ত্রে। কৃষক শুধু চায় সরকারের সহযোগিতা। সরকারও নানাভাবে প্রনোদনা দিয়ে কৃষককে টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে সার ডিজেল কৃষকের দুয়ারে পৌঁছেছে। তেল কোম্পানিগুলো আগাম সতর্ক হয়ে জ্বালানি সরবরাহ ঠিক রেখেছে। গ্রামে এখন গরু ছাগল হাঁস মুরগি পালন করা হয় ডেইরি ফার্ম ও পোলট্রির আদলে। অনেক গ্রামে মিনি ডেইরি ও পোলট্রি ফার্ম গড়ে উঠেছে। পুকুর লিজ নিয়ে অথবা নিজেদের পুকুরে বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষ হয়। বেড়েছে মাছের উৎপাদন। এখন গৃহস্থ বাড়িতে ধানের গোলা নেই তবে ধানের বড় ডাবর আছে। যার কোনটি মাটির তৈরি, কোনটি বাঁশ চাটাই বেতের তৈরি। পুকুর ভরা মাছ ফিরে এসেছে। বর্তমানে গ্রামীণ সড়ক পাকা হওয়ায় এবং গ্রাম বিদ্যুতায়িত হওয়ায় কৃষকের জীবন মানেও পরিবর্তন এসেছে। যেখানে নবান্নের পালা একটি সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বছরের কোন না কোন সময়ে নতুন ধানের চালের ভাত ফিরনি পায়েশ হাড়িতে উঠছে। বরেন্দ্রর মাঠে মাঠে উৎসব ॥ হেমন্তের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন ফসলের মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠে মাঠে সোনালি আমনের ঢেউ। শিশির ভেজা সোনাবর্ণের এ আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে। মাঠে মাঠে কেউ ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। কেউ কেউ ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠানে। দম ফেলার ফুরসত নেই কারও। মহাব্যস্ততায় দিন কাটছে কৃষকদের। আমন ধান কাটার এমন চিত্র এখন বরেন্দ্র অঞ্চলে। মাঠে মাঠে যেন শুরু হয়েছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ঘরে তোলার উৎসব। মাগুরায় ভাল ফলন হয়েছে ॥ জেলায় রোপা আমন ধানের ভাল ফলন হয়েছে। বর্তমানে পুরাদমে ধান কাটা চলছে। কৃষকরা ধান কেটে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ধানের চাতাগুলো কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে।
×