ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাওয়া তারকা বাউচার্ড

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

হারিয়ে যাওয়া তারকা বাউচার্ড

সেরেনা উইলিয়ামস, মারিয়া শারাপোভা, ক্যারোলিন ওজনিয়াকি কিংবা আনা ইভানোভিচদের ভিড়ে ইউজেনি বাউচার্ড নামটা খুব বেশি উজ্জ্বল ছিল না মোটেও। কিন্তু ২০১৪ সালে টেনিস কোর্টে একগুচ্ছ সাফল্যের বদৌলতে হঠাৎ করেই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় প্রমীলা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তার। প্রথম কানাডিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে সে বছরই উইম্বলডন টেনিসের ফাইনালে খেলার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফরাসী ওপেনের সেমিফাইনালে ওঠার গৌরব অর্জন করেন। যদিও এই ৩ গ্র্যান্ডস্লামের কোনটারই শিরোপা জয়ের সৌভাগ্য হয়নি তার। তারপরও অসাধারণ পারফর্মেন্সের সৌজন্যে সে বছরই বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সর্বোচ্চ পঞ্চম স্থানে ওঠে আসেন তিনি। তবে সেই বাউচার্ড এখন যেন নিজের ছায়া! এ বছরে কোন গ্র্যান্ডস্লাম জয় তো দূরের কথা। কোন ডব্লিউটিএ শিরোপাই জিততে পারেননি তিনি। সর্বশেষ মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনেও লজ্জাজনক পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছেন এই কানাডিয়ান তারকা। প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যান ইউজেনি বাউচার্ড। তিন বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে থাকালেই দেখা যায়, হঠাৎ করেই প্রাদপ্রদীপের আলোয় ওঠে আসেন ইউজেনি বাউচার্ড। মেজর কোন শিরোপা জিততে পারেননি সেবার। কিন্তু তারপরও তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে পুরো মৌসুমজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। সেই মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফানালে উঠেন বাউচার্ড। চীনার লি নার কাছে হেরে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ চার থেকে বিদায় নেন পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এই টেনিস তারকা। ধারাবাহিক পারফর্মেন্সের সৌজন্যে ফ্রেঞ্চ ওপেনেও শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করেন বাউচার্ড। এবার থাকে থামিয়ে দেন রাশিয়ান টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল মারিয়া শারাপোভা। তারপরও দমে যাননি তিনি। মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট উইম্বল্ডনে নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নেন প্রতিভাবান এই তারকা। প্রথম কানাডিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডনের ফাইনালে উঠার বিস্ময়কর কীর্তিও গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সেবার চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভার কাছে পরাজয় মানেন বাউচার্ড। মৌসুমের প্রথম তিন মেজর টুর্নামেন্টের তিনটিতেই ব্যর্থ। তারপরও বিশ্ব টেনিসকে চমকে দিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেন তিনি। তবে দুই বছর আগে দুর্দান্ত শুরুর সেই চমক খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি এই কানাডিয়ান। টেনিস কোর্টে গত দুটি বছর তো একেবারেই বাজেভাবে কেটেছে তার। মেজর কোন টুর্নামেন্টেই নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন তিনি। আর ২০১৭ সালটা আরও বাজে কাটে তার। যে কারণেই শীর্ষ পাঁচ তো দূরের কথা! বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ আশিতেও খুঁজে পাওয়া যায়নি তার নাম। এই মুহূর্তে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ৮১তম স্থানে রয়েছেন বাউচার্ড। শুধু টেনিস কোর্টে নয়, ক্যারিয়ারের শুরুতে মডেল হিসেবেও দ্যূতি ছড়ান তিনি। তার খেলার কৌশল, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও সুন্দর মুখ অবয়বের জন্য মডেলিংয়েও নাম করেন বাউচার্ড। কিন্তু কানাডিয়ান এই গ্ল্যামারগার্ল টেনিস কোর্টে নিস্প্রভ থাকার কারণে মডেলিং থেকেও যেন আড়ালে হারিয়ে গেলেন। কোর্টে এ বছর নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও আলোচনায় ছিলেন ঠিকই। বিশেষ করে এপ্রিলে শারাপোভা যখন নিষেধাজ্ঞা থেকে কোর্টে ফিরেন। দীর্ঘ ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে স্টুটগার্ট ওপেনের কোর্টে নেমেই জয় তুলে নেন রাশিয়ান টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল। কিন্তু তার সেই ফিরে আসা যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি বাউচার্ড। বরং শারাপোভাকে প্রতারক আখ্যায়িত করে টেনিস থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি। শারাপোভার বিরুদ্ধে মন্তব্য করে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন বাউচার্ড। সেসময় তিনি বলেন, ‘সে একজন প্রতারক। যে কোন ধরনের খেলাতে একজন প্রতারককে আবারও খেলার অনুমতি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি, ডব্লিউটিএ থেকে একটা ভুল বার্তা দেয়া হয়েছে। যারা সৎ এবং সঠিক নিয়ম মেনে খেলাধুলা করে, এটা তাদের জন্য রীতিমতো অন্যায়।’ এ বিষয়ে শারাপোভার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে মোটেও কান দেননি বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান এই তারকা। বরং নিজেকে খেলায় ফেরানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন পাঁচটি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। সেই শারাপোভার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে যেন বাউচার্ড তার ক্যারিয়ারকে আরও কলঙ্কিত করে। এরপর আলোচনায় আসেন বাজি ধরে! এনএফএল ফাইনালে আটলান্টা ফ্যালকনের বিপক্ষে তখন ২১-০ পয়েন্টে পিছিয়ে নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়ট। টম ব্র্যাডির মতো কিংবদন্তি কোয়ার্টারব্যাক থাকলেও প্যাট্রিয়ট ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচ থেকে। হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে শিরোপা জয়ের আগাম উৎসবও করছিল ফ্যালকন সমর্থকরা। শতভাগ নিশ্চিত জয় ভেবে টুইট করেন টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল ইউজেনি বাউচার্ড, ‘আমি নিশ্চিত আটলান্টা জিততে যাচ্ছে।’ কিছুক্ষণ পর আরেকটি টুইট করে জানালেন, ‘কেবল ভবিষ্যদ্বাণী করলাম।’ মানতে না পেরে এক মার্কিন ফুটবল লীগ ভক্তের টুইট, ‘প্যাট্রিয়ট জিতলে আমার সঙ্গে ডেটিংয়ে যাবে?’ এরপর অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্যাট্রিয়ট সুপার বোল ফাইনালটা জিতে যায় ৩৪-২৮ পয়েন্টে। বাজিতে হেরে অপরিচিত সেই টুইটার ব্যবহারকারীর সঙ্গে অভিসারে যেতে রাজি হন কানাডিয়ান তারকাও। শুধু বাউচার্ডই নন, টেনিস কোর্ট থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাওয়ার পথে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা, পেত্রা কেভিতোভা, ক্যারোলিন ওজনিয়াকির মতো তারকারাও। এছাড়া আনা ইভানোভিচ তো বিদায়ই বলে দিয়েছেন টেনিসকে। তবে নতুন কয়েকজন তারকাও উদয় হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।
×