ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধোনির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন-বিতর্ক

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

ধোনির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন-বিতর্ক

ঘরের মািটতে নিউজিল্যান্ডের কাছে দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর ভিভিএস লক্ষণ বলেছিলেন, ‘টি২০ খেলার যোগ্যতা নেই মহেন্দ্র সিং ধোনির।’ অজিত আগারকার তাতে সমর্থন দিয়ে বিতর্কটাকে উস্কে দিয়েছিলেন। তবে গ্রেট সুনীল গাভাস্কার, বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব, সাবেক তারকা বীরেন্দর শেবাগ, বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি, এমনকি প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রীও ধোনির পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভারতীয় কিকেটে হঠাৎই তৈরি হওয়া এই বিতর্কে কৌশলী জবাব দিয়েছেন আরেক সাবেক তারকা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। সেদিন নিউজিল্যান্ডের তোলা ১৯৭ রানের বিশাল ইনিংস তাড়া করতে ধোনি যখন ক্রিজে কোহলির সঙ্গে যোগ দেন, তখন ভারত ৯.১ ওভারে ৬৭-৪। রানের চাকা সচল রেখে কোহলি ৪২ বলে ৮টি চার আর একটি ছক্কায় করেন ৬৫ রান। কোহলি যখন বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছিলেন, তখন ধোনি সিঙ্গেলের ওপরই নিভর্রশীল ছিলেন। ৩৭ বলে ৪৯ রান করলেও প্রয়োজনের সময় আউট হয়ে যান সাবেক অধিনায়ক। স্ট্রাইক রেট ১৩২.৪৩। খারাপ নয়। ৩ ছয় ২ চারে ২৬ রানই করেছেন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে, অর্থাৎ বাকি ২৩ রান করতে খেলেছেন ৩২ বল। ম্যাচেবড় হারের পর এটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ভিভিএস লক্ষণ, অজিত আগারকার, আকাশ চোপড়ার মতো সাবেকরা। লক্ষণ বলেন, ‘কোহলির স্ট্রাইক রেট যখন ছিল ১৬০, তখন ধোনির ছিল ৮০। যতদিন খেলবে ততদিন ধোনির চার নম্বরে নামা দরকার। কারণ, তার সেট হতেই সময় বেশি লাগছে। এটা জাতীয় দলের কাম্য নয়। টি-টোয়েন্টিতে সেট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এবার বোধ হয় ধোনির তরুণদের জায়গা ছেড়ে দেয়া উচিত। সে ওয়ানডে দলে অপরিহার্য ঠিকই, কিন্তু টি২০তে জায়গা ছাড়লে কোনো তরুণের সামনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশের সুযোগ আসবে।’ আগারকারও একই সুরে কথা বলেছেন, ‘ধোনি শুরু থেকেই ব্যাট চালিয়ে খেললে ভারতের জেতার একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এটা শুধু সেই ম্যাচেই নয়, ইদানীং দেখা যাচ্ছে ধোনি শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে পারছে না। ধোনিকে ভারতের মতো দলে জায়গা দখল করে রাখার ক্ষতিটাও বুঝতে হবে!’ এরপরই লক্ষণ-আগারকারদের একহাত নিতে শুরু করেন গাভাস্কার, শাস্ত্রী, কোহলি, কপিলরা। শেবাগ বলেন,‘হ্যাঁ ধোনিকে রান তোলার গতি বাড়াতে হবে। প্রতি বলেই রান করতে হবে। ব্যাপারটা তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব টিম ম্যানেজমেন্টের। আমার মতে, ধোনিকে এখনও ভারতীয় দলে দরকার, এমনকি টি২০তেও। আমি ওকে ভাল করেই জানি। সময় হলে সে ঠিকই সরে যাবে। তার জন্য কখনও কোন উঠতি খেলোয়াড়কে আটকে থাকতে হবে না।’ আর গ্রেট গাভাস্কারের মন্তব্য, ‘আমরা ৩০-এর কমবয়সী খেলোয়াড়দের ভুলগুলো এড়িয়ে যাই। হার্দিক পান্ডিয়া গুগলি বুঝতে না পেরে আউট হয়েছে, কিন্তু আমরা তা দেখব না। আমরা এটাও দেখব না যে ওপেনাররা ভাল শুরু এনে দিতে পারেনি। আমরা শুধু ধোনিকেই দোষ দেব। এটা খুবই দুঃখজনক, আর এটাই ভারত।’ বর্তমান অধিনায়ক কোহলি বলেন, ‘সবারই উচিত একটু ধৈর্য ধারণ করা। আমাদের কারওরই উচিত না ধোনি ভাইয়ের পেছনে লাগা। দিল্লীতে ধোনি ভাই যে ছক্কাটি মেরেছিলেন, সেটি পোস্ট ম্যাচ শোতে পাঁচবার দেখানো হয়েছে। সবাই তখন তাঁর ওপর খুশি ছিল। হঠাৎ করেই তিনি যখন একটা ম্যাচে ব্যর্থ হলেন, আমরা সবাই তাঁর পেছনে লেগে গেলাম।’ কোহলি মনে করেন, ক্রিকেটটা ধোনি খুব ভালই বোঝেন। জানেন, কোথায় তাঁকে থামতে হবে, ‘ধোনি অভিজ্ঞতায় পূর্ণ একজন ক্রিকেটার। তিনি জানেন, কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। আর কতটুকু পথচলা তাঁর বাকি। আমি মনে করি, তাঁর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার অন্য কারও নেই।’ ধোনির বয়স ৩৫ হয়ে গেছে বলেই কি তাঁকে নিয়ে এত আলোচনা? কোহলি মনে করছেন সেটিই, ‘আমি টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হলে কেউ আমাকে নিয়ে এসব বলবে না। কারণ, আমার বয়স ৩৫ নয়। কিন্তু ধোনি ভাইয়ের বয়স ৩৫ হলেও তিনি পুরোপুরি ফিট। সব ফিটনেস পরীক্ষা উতরেই তিনি ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি দলের সাফল্যে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছেন। কেবল ব্যাটিংয়ে কিংবা কিপিংয়েই নয়, কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতেও ওর অবদান দুর্দান্ত।’ তবে সৌরভ গাঙ্গুলীর বক্তব্য বেশ কৌশলী ‘ধোনির টি২০ রেকর্ড ওয়ানডের মতো ভাল নয়। আশা করি, অধিনায়ক বিরাট কোহলি আর টিম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নিয়ে ওর সঙ্গে আলাদা করে বসে কথা বলবে। খেলোয়াড় হিসেবে ধোনির সামর্থ্য তো সত্যি অবিশ্বাস্য। টি২০টা ও যদি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খেলে, এখানেও হয়ত সাফল্য আসবে!’ ঘুড়িয়ে বললেও সৌরভের কথায় কিন্তু ধোনির টি২০ সীমাবদ্ধতারই ইঙ্গিত মেলে! ধোনি এখন ওয়ানডেতেই বেশি সফল বলেই মনে করেন সাবেক অধিনায়ক। সৌরভ আরও যোগ করেন,‘আমি মনে করি, ওর ওয়ানডে খেলে যাওয়া উচিত। আর টি২০টা ওকে অন্যভাবে খেলতে হবে। এখানে ওকে অনেক স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে হবে। এখন নির্বাচকদের দায়িত্ব হলো ওকে কীভাবে খেলানো হবে, সেটি ঠিক করে দেয়া।’ একদিন আগেই বিশ্বকাপজয়ী ভারত অধিনায়ক কপিল দেব বলেছিলেন, ‘ধোনিকে নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন? শচীন তো ৩৮ বছরে এসে বিশ্বকাপ জিতেছে। ধোনি ২০২০ টি২০ বিশ্বকাপেও খেলতে পারে। যদিও তখন ওর বয়স প্রায় ৪০ হয়ে যাবে।’ নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর সাবেক তারকা ও ভারতের কোচ বাছাই কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা লক্ষণের মতে, ধোনির আসলে টি২০ খেলার যোগ্যতাই নেই! তবে গ্রেট সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, বীরেন্দর শেবাগ, বর্তমান অধিনায়ক কোহলিও ধোনির পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুখ খুলেছেন ধোনি নিজেও, ‘সবারই নিজস্ব মতামত আছে। আমার আসলে কিছু বলার নেই!’ ও হ্যাঁ, কোহলির পর ভারতীয় দলে বর্তমানে অন্যতম ক্ষমতাধর মানুষ রবি শাস্ত্রীও (প্রধান কোচ) ধোনির হয়ে ব্যাট ধরেছেন। বলেছেন, ‘ওর মতো একজন কিংবদন্তি জানে, কখন অবসর নিতে হবে।’ টেষ্ট ছেড়েছেন, রঙিন পোশাকের নেতৃত্ব ছেড়ে ৩৬ বছর বয়সী ধোনি এখন ওয়ানডে-টি২০তে খেলছেন সাধারণ সদস্য হিসেবে।
×