ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সময়ের তরুণ মুখ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

সময়ের তরুণ মুখ

তারা ধারণ করেছেন সময়কে। সময়ের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে উঠে এসেছেন আলোচনায়। তারা তরুণ। সাহসী এবং ব্যতিক্রম। বুকে ধারণ করেন স্বদেশ। আছে নিজ সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা। সে দায়বদ্ধতা থেকেই তৈরি তাদের চলার পথ। বিশ্ব পরিম-লে প্রতিনিধিত্ব করছেন নিজ দেশের। বলা হয় আজকের তরুণ বদলে দেবে আগামী দিনের পৃথিবী। এমন কিছু অগ্রগামী তরুণের গল্প যাদের বলা যায় সময়ের তরুণ মুখ। লিখেছেন আকিল জামান ইনু গুরমেহের কাউর (ভারত) কাউর ও তার দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের সতীর্থরা সিদ্ধান্ত নেন সময় হয়েছে প্রতিবাদের। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি কর্তৃক পরিচালিত ক্যাম্পাস ভায়োলেন্সের। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে করলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট। প্ল্যাকার্ড হাতে নিজের একটি ছবি। প্ল্যাকার্ডের বক্তব্য ছিল, ‘আমি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি এবিভিপির ভয়ে ভীত নই এবং আমি নই একা।’ বিষয়টি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সে সূত্রে আলোচনায় উঠে আসে তার পূর্বে করা একটি পোস্ট। পোস্টটি তার বাবাকে নিয়ে। বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। কাশ্মীরের বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে যিনি জঙ্গীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। এ জঙ্গীদের পেছনে পাকিস্তানী মদদের কথা আজ ওপেন সিক্রেট। কিন্তু কাউরের প্ল্যাকার্ডের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। তার বক্তব্য ছিল ‘পাকিস্তান আমার পিতার ঘাতক নয়, আমার পিতার ঘাতক যুদ্ধ’। তার বক্তব্য পছন্দ হয়নি ক্ষমতাসীনদের। পরেন তাদের রোষানলে। ক্রিকেটার থেকে চিত্র তারকা একযোগে আক্রমণ করেন তাকে। সঙ্গে যোগ দেন রাষ্ট্রের জুনিয়র মন্ত্রী। বিষয়টি বাক আক্রমণে থেমে থাকেনি। জীবনের হুমকি দেয়া হয় তাকে। এসব কিছুই দমাতে পারেনি তার কণ্ঠ। আগামী বছর প্রকাশ পেতে যাচ্ছে তার আত্মজীবনী। তার ভাষায়, ‘আমি যখন গঠনমূলক কিছু বলছি এবং লোকে তা শুনছে, তখন আমি কেন থেমে যাব?’ কাউর বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়িয়ে অগ্রাহ্য করেছেন জীবনের হুমকি। পরিণত হয়েছেন নিজ প্রজন্মের কণ্ঠস্বরে। লিন্ডা মুগারুকা (কঙ্গো) লিন্ডার ভাবনা তার স্বদেশের আর্থিক উন্নতিকে ঘিরে। তিনি বিশ্বাস করেন মানসম্মত কফি উৎপাদনের মাধ্যমে কঙ্গোর অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব। গৃহযুদ্ধে প্ল্যানটেশনগুলো ধ্বংস হবার পূর্বে কঙ্গো ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কফি উৎপাদনকারী দেশ। যুদ্ধ পাল্টে দিয়েছে সে অবস্থা। লিন্ডা বিশ্বাস করেণ কফি চাষ বদলে দিতে পারে কঙ্গোর অর্থনীতি। কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধিই সব নয়। চাই মানসম্মত কফি দানা। সে জন্য চাই পেশাদার কফি পরীক্ষক ও প্রশিক্ষিত চাষী। কঙ্গোতে এ বিষয়ে যে অল্প কয়জন বিশেষজ্ঞ আছেন ২৫ বছর বয়সী লিন্ডা তাদের একজন। তিনিই একমাত্র নারী পরীক্ষক। লিন্ডা মনে করেন, মানসম্মত কফি উৎপাদনের মাধ্যমে বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব। কি করে মানসম্মত কফি উৎপাদন করা যায় এ বিষয়ে নিজ দেশের নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছেন লিন্ডা। তার ভাষায়, ‘এ বিষয়ে কঙ্গোতে আমি প্রথম কিন্তু শেষ নই।’ লিন্ডা নিজেও এখন শিখছেন। তিনি মনে করেন তিনি যত বেশি জানবেন তত শেখাতে পারবেন। লিন্ডার প্রত্যাশা, ‘আমরা সবাই মিলে এটি নিশ্চিত করতে চাইÑ কঙ্গো শব্দটি যুদ্ধ আর ধ্বংস নয় প্রতিনিধিত্ব করবে কফির।’ এভাবেই নিজের দেশের পরিচয় বদলে দিতে চান ‘কুইন অব বিনস’ খ্যাত লিন্ডা মুগারুকা। লিনা আতালাহ্্ মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাতাহ আল সিসিকে আর যাই হোক মিডিয়াবান্ধব বলা যাবে না। তার শাসনামলে কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে গায়েব হওয়া সাংবাদিকের তালিকাটি বেশ লম্বা। ফেসবুক পোস্টের কারণে যে কারও ঠাঁই হতে পারে শ্রীঘরে। চার শ’রও বেশি ওয়েবসাইট বন্ধ সরকারী আদেশে। সাংবাদিক কয়েদের বিষয়ে মিসরের স্থান বিশ্বে তৃতীয়। এ পরিস্থিতিতেও সংবাদ পরিবেশনে মিসরের জনগণের আস্থা ধরে রেখেছে একটি ওয়েবসাইটÑ ‘মাডা মাসর’। এই আস্থা অর্জনের মূল কারিগর সাইটের প্রধান সম্পাদক লিনা আতালাহ্। তার ভাষায়, ‘এমন নয় যে আমরা একাই বাক স্বাধীনতা বাঁচিয়ে রাখছি। কিন্তু এও সত্যি যে, সে অধিকার সংরক্ষণে আমাদের কিছু অবদান আছে।’ আতালাহ্্র নেতৃত্বে পরিচালিত ‘মাডা মারস’ এখন নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রতীক। দুর্নীতিবিরোধী যুদ্ধের সৈনিক। সরকারের গোপন চরিত্র উন্মোচনে যার জুড়ি নেই। সরকার গত মে‘তে মাডা মারসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও তাকে থামানো যায়নি। প্রতি দিনই তা প্রকাশিত হচ্ছে। যদিও মিসরের অভ্যন্তরে তা পাঠকের পড়তে হচ্ছে ফেসবুকে বা বিকল্প ব্যবস্থায়। আতালাহ ও তার সহকর্মীরা কাজ করছেন সেন্ট্রাল কায়রোর এক ছোট নিউজ রুমে। সারাক্ষণ মোকাবেলা করছেন সরকারের রক্তচক্ষু। নিজেকে নিয়ে আতালাহর ধারণা পরিষ্কার। তার ভাষায়, ‘আমি কখনই এমনটা ভাবিনি যে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। আমি তাই করছি যা করা আমি প্রয়োজন মনে করি।’
×