ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিটাগংকে হারিয়ে এগিয়ে গেল খুলনা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

চিটাগংকে হারিয়ে এগিয়ে গেল খুলনা

মিথুন আশরাফ ॥ সিলেটপর্বে দুই দলই একটি করে জয় পেয়েছিল। ঢাকাপর্বে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে নামে দুই দল। খুলনা টাইটান্স ও চিটাগং ভাইকিংসের মধ্যে যে দল জিততো, তারাই পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে যেতো। খুলনা এগিয়েও গেল। চিটাগংকে ১৮ রানে হারিয়ে এগিয়ে গেল খুলনা। তিন ম্যাচে টানা দুই জয় তুলে নিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রবিবার দিনের প্রথম ম্যাচে টস জিতে চিটাগং আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। শনিবার রংপুর রাইডার্স টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ম্যাচ হেরেছিল। এরপর মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেনও ভুল হয়েছে। চিটাগং যেন সেই চিন্তা থেকেই আগে ফিল্ডিং করার ভাবনা করেছে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। শুরুটা দুর্দান্ত করলেও, খুলনাকে বিপদে ফেললেও, মাঝপথ থেকেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৪০), আরিফুল হক (৪০) ও কার্লোস ব্রেথওয়েট (৩০) মিলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৭০ রান করে খুলনা। বিশাল স্কোরই গড়ে। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে আবু জায়েদ রাহির (৪/৩৫) অসাধারণ বোলিংয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫২ রানের বেশি করতে পারেনি চিটাগং। চিটাগংয়ের পক্ষে সিকান্দার রাজা সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন। খুলনা টাইটান্স ও চিটাগং ভাইকিংসের মধ্যকার এর আগে দুইবার লড়াই হয়। গত বছর বিপিএলেই। এর আগে ২০১৫ সালের তৃতীয় বিপিএলে খুলনা দলটিই ছিল না। আর প্রথম দুই আসরে তো খুলনা অন্য নামে, অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর চিটাগং ভাইকিংস তৃতীয় আসর থেকেই যোগ হয়। গত আসরে খুলনা টাইটান্স আবার যোগ হওয়ায় চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে লড়াই হয়। একবার জিতে খুলনা। আরেকবার জিতে চিটাগং। এবার দুই দলের মধ্যকার লড়াইয়ে প্রথম ম্যাচটিতে আবারও খুলনাই জিতল। খুলনা যে স্কোর গড়ে তাতে যেন চাপে পড়ে যায় চিটাগং। আবু জায়েদ রাহি এমনই বোলিং ঝড় তোলেন, ২১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে চিটাগং। প্রথম তিন উইকেটই রাহি শিকার করেন। এরপর ৩৮ রানে গিয়ে যখন এনামুল হক বিজয়কে সাজঘরে ফেরান ব্রেথওয়েট, তখন ম্যাচ খুলনার নিয়ন্ত্রণেই চলে আসে। এরপর দর্শকহীন স্টেডিয়ামে ঝিমিয়ে পড়া ম্যাচটিতে যেন জান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মিসবাহ উল হক ও সিকান্দার রাজা। দুইজন মিলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। পঞ্চম উইকেটে দু’জন মিলে ৫৯ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। এ দু’জন যখন ব্যাটিংয়ে থাকে তখন যেন আবারও চিটাগংয়ের জেতার আশা জেগে যায়। কিন্তু ৯৭ রানের সময় সিকান্দার (৩৭) আউট হওয়ার পর আবার যেন ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে চিটাগং। যখন ১০৭ রানে গিয়ে মিসবাহও (৩০) সাজঘরে ফেরেন তখন খুলনা সমর্থকরা যেন জয়ের আনন্দে মাততে প্রহর গুনতে শুরু করে দেন। শেষ মুহূর্তে লুইস রিচি (২২) ও তানভির হায়দার (১৪*) মিলে দলকে দেড় ’শ রানের ওপরে নিয়ে যান। কিন্তু তাতে হারই হয় নিয়তি। খুলনা যে বিশাল স্কোর আগেই গড়ে ফেলে। অবশ্য খুলনার শুরুটা কিন্তু খুবই খারাপ হয়। ১০ ওভারে ৬৮ রান করতে পারে। তাও আবার ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। এমন অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলেন মাহমুদুল্লাহ, আরিফুল ও ব্রেথওয়েট। ৬৮ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর যখন খাদের কিনারায় পড়ে যায় খুলনা, সেখান থেকে মাহমুদুল্লাহ ও আরিফুল মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন। জুটিটি অনেক বড় নয়। কিন্তু এমন সময়ে এই জুটি হয় যখন খুব প্রয়োজন ছিল। দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং দলকে একটু আস্থা দিতে এই জুটি খুব দরকার ছিল। তা করেনও মাহমুদুল্লাহ ও আরিফুল। আবার ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংও করতে থাকেন। ১০ ওভারে ৬৮ রান হয়। সেখান থেকে ম্যাচ বের করে আনতে বড় স্কোরের কোন বিকল্প ছিল না। বড় স্কোর গড়তে হলে মারমুখী হয়ে খেলতেই হবে। কোন পথ খোলা ছিল না। সেই কাজে সফলও হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ ও আরিফুল। ১০৩ রানে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ আউট হয়ে যান। ততক্ষণে আরও ৫ ওভারে ৩৫ রান যোগ হয়। হাতে থাকে ৫ ওভার। এই ওভারে যদি ধুমধাড়াক্কা কিছু করা না যায় তাহলে জেতা সম্ভব নয়। আরিফুল ও ব্রেথওয়েট সেই কাজটি করে দেন। এমনই ব্যাটিং করতে থাকেন, ছক্কা-চারের বাহার লাগিয়ে দেন। ১৯ ওভার শেষ হওয়ার আগেই আরও ৫৫ রান যোগ হয়ে যায়। তাতে করে খুলনা ১৫৮ রানে চলে যায়। এমন সময়ে ব্রেথওয়েট আউট হন। শেষ ওভারে গিয়ে আরিফুল ও জোফরা আরচার মিলে আরও ১২ রান যোগ করে ফেলেন। ইনিংস শেষ হওয়ার শেষ বলে গিয়ে আরিফুলও আউট হন। আরচার ১১ রানে অপরাজিত থাকেন। যে স্কোর গড়ে খুলনা তাতেই জয়ের আশা জেগে যায়। শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ই মিলে। স্কোর ॥ খুলনা-চিটাগং ম্যাচ খুলনা টাইটান্স ইনিংস ১৭০/৭; ২০ ওভার (আরিফুল ৪০, মাহমুদুল্লাহ ৪০, ব্রেথওয়েট ৩০, আরচার ১১*; তাসকিন ৩/৪৩)। চিটাগং ভাইকিংস ইনিংস ১৫২/৭; ২০ ওভার (সিকান্দার ৩৭, মিসবাহ ৩০, রিচি ২২, বিজয় ১৮, তানভির ১৪*; রাহি ৪/৩৫)। ফল ॥ খুলনা টাইটান্স ১৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আবু জায়েদ রাহি (খুলনা টাইটান্স)।
×