ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের আগমনী বার্তা

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

শীতের আগমনী বার্তা

পপি দেবী থাপা ॥ হালকা কুয়াশায় নিমজ্জিত ভোরে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু আর ঝরে থাকা শিউলী ফুলের মিষ্টি সৌরভ যেন কানে কানে পৌঁছে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বাতাসে পাতা ঝরার মরমরানী। প্রকৃতির বুকে রুক্ষতার টান। হালকা শীতল উত্তরে হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে গেলেও কোথায় যেন বিষণ্ন তার হাতছানি। ষড় ঋতুর এ দেশে ঋতুর পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যাপিত জীবন ও পরিবেশে পরিবর্তন আনে। শীতের আগমনের শুরুতেই আমাদের শরীর, পোশাক, খাবারে হতে হয় অধিক যত্নশীল। এ কারণেই শীতের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে আজকের আলেখ। ১.আলমারিতে রেখে দেয়া লেপ তোষক , কম্বল বের করে এক্ষুনি কড়া রোদে রেখে গরম করে ব্যবহার উপযোগী করুন। আর লেপ, কম্বলের কাভার থাকলে তা ধুয়ে করা রোদে শুকানোর পর ব্যবহারের জন্য তৈরি করুন। লেপ কম্বল কাভারসহ ববহার করা উত্তম। এতে ময়লা হবার সম্ভাবনা কম থাকে, আর পরিষ্কার করাটাও সহজ হয়। ২. আর যদি লেপ, কম্বল, কাঁথা, জাজিম নতুন করে তৈরির প্রয়োজন হয় তাহলে এক্ষুণি তৈরি করতে দিন। ৩. শীত আসার এই পূর্ব মুহূর্ত থেকে শীতের পোশাক কিনে রাখুন। যাতে করে শীত আপনাকে দুর্বল করতে না পারে। ৪. শীত আসার আগের এই সময়ে আলমারিতে তুলে রাখা শীতের পোশাক ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিন। কেননা অনেকদিন তুলে রাখা শীতের পোশাক সরাসরি ব্যবহারে হাঁচি, এলার্জি, এ্যাজমা সংক্রান্ত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনার আলমারিতে অবশ্যই নেপথলিন ব্যবহার করুন। ৫. পূর্বে পরিষ্কার করে কাভারে ঢেকে রাখা ব্লেজার, কোট, জাকেট নরম ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করুন। ৬. শীতে মেঝেতে বিছানোর জন শতরঞ্জি, ফ্লোরম্যাট এখনই কিনে রাখা উত্তম। যদি পূর্বের তুলে রাখা শতরঞ্জি বা ফ্লোরম্যাট ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে তা পরিষ্কার করে, রোদে দিয়ে তারপর ব্যবহার করুন। ৭. ঘরের দরজা, জানালা, জানালার কাঁচ যদি নষ্ট থাকে তা দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নিন। না হলে শীতের ঠান্ডা হাওয়া আপনার ঘরে প্রবেশ করে আপনার ঘরকে আরও ঠান্ডা করে তুলবে। কাঁচের জানালার জন্য ভারি পর্দা রেডি রাখুন। ৮. শিশু, বৃদ্ধদের শীত লাগে বেশি এবং সর্দি, কাশি, জ্বর, আমাশয় ইত্যাদি ঠা-াজনিত সমস্যা তাদের বেশি দেখা দেয়। তাই শীতের শুরু থেকেই তাদের শরীরের যত্নে অতিরিক্ত যত্নশীল হোন। ৯. এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার যেমন: আমলকি, কমলা, পেয়ারা খান। যাতে করে আপনার শরীরে ভিটামিন-সিয়ের কোন অভাব না থাকে। আপনার শরীর যদি ভিটামিন-সি এ পরিপূর্ণ থাকে তাহলে ঠা-া এবং ঠা-া জনিত কোন রোগ আপনাকে দুর্বল করতে পারবে না। ১০. এ সময় বাজারে নানারকম শীতকালীন শাক সবজি পাওয়া য়ায়। সেগুলো খেয়ে শীত আসার পূর্বেই নিজেকে সতেজ রাখুন। এসব সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের সুরক্ষায় উপকারী। ১১. ঠা-াজনিত সমসা যেমন: সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা ইত্যাদির হাত থেকে রেহাই পেতে মধু খুবই উপকারী। তাই এখন থেকেই ১-৩ ভাগ কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ মধু ও অল্প পরিমাণে লেবুর রস মিশিয়ে রোজ সেবন করলে ঠান্ডাজনিত সমসা হয় না বললেই চলে। এ সময়ে আদা, লেবু, গোলমরিচের চা খান যা ঠা-াজনিত সমসা দূর করতে সহায়ক হবে। ১২. এ সময়ে রান্নার ক্ষেত্রে, ভর্তা জাতীয় খাবারে সরিষার তেল ববহার করুন। কালোজিরার তেল শরীরের জন্য খুব উপকারি। রান্নায় মসলা হিসেবে কালোজিরার ব্যবহার ও কালোজিরা ভর্তা খাওয়া বাড়িয়ে দিন। যা ঠান্ডা জনিত সমসায় প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। ১৩. বেশি করে পানি পান করুন। ১৪. গোসলে অতিমাত্রায় গরম পানি ব্যবহার না করে এখন থেকেই কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। কেননা বেশি গরম পানি চামড়ার শুষ্কতা বাড়িয়ে দেয়। ১৫. শীত আসলে ত্বক রুক্ষ হয়ে ত্বকের উপরিভাগ ফেটে যায় তাই ত্বকের যত্নে এখন থেকে প্রস্তুত হোন। কিনে রাখুন অলিভ ওয়েল, লোশন, পেট্রোলিয়াম জেলি, গ্লিসারিন। ১৬. শীত পুরোপুরি জেঁকে ধরার আগেই ত্বকের ওপর মরা কোষ জমতে থাকে। তাই এখন থেকে নিয়মিত স্ক্রাবি করলে মরা কোষ ঝরে যাবে, ত্বক বেশি আদ্রর্তা ধরে রাখতে পারবে। ত্বকের ভিতর ময়েশ্চারাইজার ভালভাবে প্রবেশ করতে পারবে। ত্বক পরিষ্কারে কেমিক্যাল যুক্ত সাবান ব্যবহার না করে ময়েশ্চারাইজি সাবান ব্যবহারে যত্নশীল হোন। ১৭. শীতের শুরু থেকেই ঠোঁটের যত্নে সচেতন হোন। জিব্বাহ্ দিয়ে বারবার ঠোঁট ভেজানো থেকে বিরত থাকুন। ঠোঁট ফাটা থেকে রেহাই পেতে এখন থেকে ওলিভ ওয়েলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত ঠোঁটে লাগান। ১৮. হাত পায়ের বিশেষ যত্ন নিন। হাতের যত্ন অধিক ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ লোশন বা ক্রিম ববহার করুন। পায়ের যত্নে এখন থেকেই নিয়মিত পা পরিষ্কার করে গ্লিসারিন লাগান। সকল প্রস্তুতি নিয়ে স্বাগত জানান শীতকে। উপভোগ করুন শীতের প্রতিটি মুহূর্ত।
×