ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টাংগুয়ার হাওরে গাছ কাটা ও মাছ শিকারের মহোৎসব

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১২ নভেম্বর ২০১৭

টাংগুয়ার হাওরে গাছ কাটা ও মাছ শিকারের মহোৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা সুনামগঞ্জ ॥ রামসার সাইট খ্যাত অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর ৩২২ বর্গ কি.মি জুড়ে বিস্মৃত। বর্ষায় হাওরের থৈ থৈ পানি আর শীতে দিগন্ত বিস্মৃত মাঠ খুব সহজেই পর্যটকদের মন কাড়ে। হাওরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। হাওরে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ জনের সংখ্যা বাড়লেও হাওরে মাছ, গাছ ও শীতকালে পাখির সংখ্যা কমছে। এছাড়াও স্থানীয় কিছু প্রভাশালী ব্যাক্তিদের ছত্রছাঁয়ায় রাতের আঁধারে হাওরের গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। আবার দিনে দুপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরে কোনাজাঁল, বেড়জাঁল দিয়ে মাছ আহরণ করছে অসাধু কিছু মৎস্যজীবিরা। এ নিয়ে হাওরে বসবাসরত জনগণ ও হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হাওরবাসীর অভিযোগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিইউএন দায়িত্ব নেয়ার পর আর কোনো গাছ লাগানো হয়নি। রাতের আঁধারে হাওরের দায়িত্বে থাকা কতিপয় আনসার সদস্যকে ম্যানেজ করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ে বসবাসরত খসরু মিয়া জানান, আমাদের গোয়ালভরা ধান, হাওরভরা মাছ ছিল। এখন আর তা নেই। পাখির অভয়ারণ্যও আর নেই। রাতের আঁধারে কিছু কতিপয় লোকেরা হাওরের কাছ কেটে নিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ঠ করে দিচ্ছে। জানা যায়, টাংগুয়ার হাওর কে ১৯৯৯সালে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষনা করা হয়। পরে ২০০০সালের ২০ জানুয়ারী রামসার সাইট হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ২০০৩সালের নভেম্বর থেকে ইজারা প্রথা বাতিল করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় হাওরের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা ও রামসার নীতি বাস্থবায়নের উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৯সালে হাওরে ১৪১প্রজাতির মাছ,২শত প্রজাতির উদ্ভিদ,দু-শত ১৯প্রজাতির পাখি, ৯৮ প্রজাতির পরাযায়ী পাখি, ১২১ প্রজাতির দেশিও পাখি, ২২প্রজাতির পরাযায়ী হাঁস, ১৯প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানী, ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১প্রজাতির উভচর প্রানী এখন হুমকির মুখে। উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, হাওর পাড়ের বাসীন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করলে ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার-প্রচারনার ব্যবস্থা করলে পর্যটন সমৃদ্ধ টাংগুয়ার হাওর তার ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে। তা না হলে টাংগুয়ার হাওর দিন দিন মাছ,পাখি ও গাছ-পালা শূন্য হয়ে য় পড়বে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-পর্যটন সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী টাংগুয়ার হাওর মাছ, পাখি শিকার, গাছকাটা বন্ধ করে রক্ষা করার জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাতœক চেষ্টা অব্যাহত আছে। হাওর পাড়ের প্রতিটি গ্রামে সচেতনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে সভা, সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। টাংগুয়ার হাওরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা বিশ্বম্ভরপুর ইউএনও সমীর বিশ্বাস জানান, টাংগুয়ার হাওরে অবৈধ ভাবে মাছ ও পাখি শিকারের খবর পেলে দ্রুত অভিযান চালিয়ে তা প্রতিহত করা হয় এবং তা অব্যাহত থাকবে।
×