ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশজুড়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে মৌলবাদী গোষ্ঠী

প্রকাশিত: ০২:০১, ১১ নভেম্বর ২০১৭

দেশজুড়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে মৌলবাদী গোষ্ঠী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘পূঁজিবাদ নয়-সমাজতন্ত্রই মানবমুক্তির পথ’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শেষ হলো অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাপনি সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা হয়। ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত সমাবেশে বাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, রংপুরে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দুদের বাড়িঘরে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এভাবে সারাদেশে মৌলবাদী গোষ্ঠী ‘পরিকল্পিভাবে’ সাম্প্রদায়িকতা ছাড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার ছোবল মারল আবার রংপুরে, পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। যা আমরা কখনও আশা করি না। কিন্তু বারবার একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। আর তাই আমাদের সামনে একটি বিকল্প এখনো রয়েছে। সেই বিকল্প হচ্ছে সমাজতন্ত্রে পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। এজন্য ২১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন তিনি। মেনন বলেন, পূর্ণ সমতা ভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। আর সেই লক্ষে আমাদেরকে এগিয়েম যেতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার কথা আপনার জানেন, কক্সবাজারে শুধু মানুষে আসে নাই। সেই সাথে এসেছে আর্ন্তজাতিক নানা চক্রান্ত। বিমানমন্ত্রী মেনন বলেন, সমাজতান্ত্রিক আদর্শনীতি গ্রহণ করা না হলে উন্নয়নের সুফল জনগণ পাবে না।, সমাজতন্ত্র অলীক কল্পনা নয়, এটা বাস্তব। রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এটি বাস্তবে প্রয়োগ হয়েছিল। আমাদের সংবিধানে আমরা সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছি। সুতরাং তার বাস্তবায়ন সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটা দুঃখজনক যে, দেশের অর্থনীতি নয়া উদারনীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে তার নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে লুটেরা পুজিপতিদের হাতে। সৃষ্ট হচ্ছে আয় বৈষম্য। গ্রাম-শহরের মধ্যে বৈষম্যের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শনীতি গ্রহণ করা না হলে উন্নয়নের সুফল জনগণ পাবে না। মহান অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষে ওয়ার্কার্স পার্টি গত ২৬ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশনে সেমিনারের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী ঘোষণা করা হয়। দেশব্যাপী সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিছিল, সমাবেশ, আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে অক্টোবর বিপ্লব পালনের আহ্বান জানানো হয়। দেশের অধিকাংশ জেলাতে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। সমাবেশে ঘোষণা পাঠ করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা, সভা পরিচালনা করেন পার্টির পলিটব্যুারো সদস্য নুর আহমদ বকুল। সভায় পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় নের্তৃবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে র্যালী বের করা হয়। মন্ত্রী বলেন, সমাজতন্ত্র অলীক নয়, সমাজতন্ত্র কাঙ্খিত নয়, সমাজতন্ত্র বাস্তব। সেটার বাস্তব হয়েছি রুশো দেশে। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শোষণের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষও জেগে উঠেছিল। সমাজতন্ত্রের বিপ্লব পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, লেলিনের আহ্বানে শ্রমিকজীবী মানুষ জীবন বিরুদ্ধে পুঁজিবাদকে রুখে দিয়ে, সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন করেছিল। আমরা যারা পরাধীন দেশে ছিলাম, যারা পরাধীন ছিলাম, তারা মুক্তির পথ পেয়েছিলাম, এই অক্টোবর বিপ্লবে। এই বিপ্লবেই এদেশের মানুষকে উজ্জিবীত করেছিল লড়াই সংগ্রামে। ষাটের দশকে যুবক শ্রমিকরা লড়াইয়ে নেমে পড়েছিল। আর উনসত্তুর সালে গ্রামের কৃষক, শিল্পাঞ্চলের শ্রমি শ্লোগান তুলেছিল- ‘শ্রমিক কৃষক অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। এই যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন পথ চলা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সংবিধানে সমাজতন্ত্র থাকলেও স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর রাষ্ট্রে সেই সমাজতন্ত্রের বাস্তব ভিত্তি নেই। সংবিধানে সেই বাস্তবতার অর্ন্তগত হয়েছিল সমাজতন্ত্র। সংবিধানের মূলনীতির চার মূলনীতির এক নীতি সমাজতন্ত্র। শোষণ মুক্তি রাষ্ট্রগঠনের মূলনীতি বলাও হয়েছিল। বলা হয়েছিল, সকল মানুষের ন্যার্য অধিকার প্রতিষ্ঠা,সমতা অর্জনের আমাদের লক্ষ। আজকে ৪৬ বছর পওে সেই সমাজতন্ত্র শুধু কল্পনা, তার বাস্তব ভিত্তি নেই। এই বাংলাদেশ তাকিয়ে দেখুন, বাংলাদেশের দিকে সংবিধানের দিকে সমাজতন্ত্রের পূর্ণবহাল হয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রে কোন থিওরি চলছে । কি হচ্ছে আজকে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে কোন সন্দেহ নেই। দেশ এগিয়ে চলছে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কার জন্য, কার কাছে, কার মাধ্যমে এই সষ্টি হয়েছে ধন বৈষম্য। উপরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটিপতি আর নিচে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে তিনকোটি মানুষ। হতদরিদ্র দুইকোটি মানুষের উপরে। অনুষ্ঠানে পার্টির ‘ঘোষণা পাঠে’ সাধারণ সম্পাদক ফজলে হাসান বাদশা বলেন, সামাজিক ন্যায্যতা-সমতা প্রতিষ্ঠাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিমুখে এগিয়ে যাবে।
×