ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান নির্মূল কমিটির

প্রকাশিত: ০১:২৮, ১১ নভেম্বর ২০১৭

সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান নির্মূল কমিটির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তথাকথিত ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। শনিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি গত ৫ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় গত ১০ নবেম্বর রংপুরের পাগলাপীর ঠাকুরবাড়ি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত হামলা, গৃহে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত টিটু রায় আদৌ ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর কিছু পোস্ট করেছে কিনা, এ অভিযোগের তদন্ত হওয়ার আগেই এলাকায় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর প্রধান উদ্দশ্যে হচ্ছে, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে বিব্রত করা এবং বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের আফগানিস্তান আর জিয়াউল হকের পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘২০১২ সালে কক্সবাজারের বৌদ্ধদের উপর এবং ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের উপর হামলার জন্য যেভাবে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অজুহাত তৈরি করা হয়েছিল একই পদ্ধতিতে রংপুরের পাগলাপীর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে। রংপুরে হামলাকারীদের প্রতিরোধের সময় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত এবং কয়েজকন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অতীতে এ ধরনের হামলার সময় আমরা দেখেছি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামায়িকভাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও এই সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।’ ‘আমরা অবিলম্বে রংপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। এসব হামলাকারীদের বিচার ও শাস্তি না হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় অধ্যুষিত জনপদে আমরা এরকম আরও হামলার আশঙ্কা করছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য।’ বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন, বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, অধ্যাপক অজয় রায়, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, কর্ণেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, স্থপতি রবিউল হুসাইন, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন (অবঃ) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন শাহাবউদ্দিন বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অবঃ) শামসুল আলম বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), ডাঃ আমজাদ হোসেন, সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, সাংবাদিক চলচ্চিত্রনির্মাতা শামীম আখতার, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, সমাজকর্মী খোন্দকার আবদুল মালেক শহীদুল্লাহ, ড. ফরিদা মজিদ, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, এডভোকেট জেয়াদ আল মালুম, এডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন প্রমুখ।
×