ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁয় ভার্কের অর্থ আত্মসাত ও কর্মকর্তা উধাও নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১১ নভেম্বর ২০১৭

নওগাঁয় ভার্কের অর্থ আত্মসাত ও কর্মকর্তা উধাও নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ বেসরকারি সংস্থা ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার ভার্ক’র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করে বেকায়দায় পড়েছেন ওই সংস্থার নওগাঁ ও রাজশাহী অঞ্চলের ১১ শাখা কর্মকর্তা। মামলা প্রত্যাহারের ভয়ে স্থানীয় ৫ শাখা কর্মকর্তা আত্মগোপনে গেলেও সংস্থার পক্ষে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা একযোগে উধাও হয়েছেন। এদিকে পরস্পর বিরোধী এমন অভিযোগ সচেতন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। সংস্থার গা ঢাকা দিয়ে যারা আছেন তারা হলেন, মান্দার পাঁজরভাঙ্গা শাখার কর্মকর্তা রোমেনা আফরোজ শারমিন, সতিহাট শাখা কর্মকর্তা নীল রতন বর্মণ ও হিসাব রক্ষক জামাল হোসেন, নিয়ামতপুর শাখা কর্মকর্তা কামাল হোসেন, রাজশাহীর মোহনপুর শাখা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ ও কেশরহাট শাখা কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেন। শনিবার পর্যন্ত তারা কেউ অফিসে হাজির হননি। কর্মকর্তা না থাকায় স্থানীয় অফিসগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে করে শংকিত হয়ে পড়েছেন সংস্থার সাধারণ গ্রাহকরা। মামলার অভিযোগে জানা গেছে, সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন থেকে কর্তন করে রাখা প্রভিডেন্ট ফান্ড, কো-অপারেটিভ, ষ্টাফ ওয়েল ফেয়ার, গ্রাচ্যুইটিসহ বিভিন্ন ফান্ডের প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকসহ ৯ জনকে বিবাদি করে নওগাঁ ও রাজশাহী অঞ্চলের ১১ শাখা কর্মকর্তা নওগাঁ ও রাজশাহীর আমলী আদালতে পৃথকভাবে ১১টি মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এর মধ্যে পাঁজরভাঙ্গা শাখা কর্মকর্তা রোমেনা আফরোজ শারমিনের নওগাঁর ২ নম্বর আমলী আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি আগামি ২০ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ ঘটনার পর সংস্থার পক্ষ থেকে মামলাগুলো তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে তৎপরতা চালানো হচ্ছিল। এর এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে সংস্থার ৫ শাখা কর্মকর্তা অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এ প্রসঙ্গে ভার্ক মান্দার এরিয়া ম্যানেজার গোলাম মাওলার অভিযোগ, সংস্থার ক্ষতিসাধনের লক্ষে পরিকল্পিতভাবে ৫ জন শাখা কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অফিসে আর আসছেন না। তারা সংস্থার এসব শাখা থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উধাও হয়েছেন। তারা অফিসের সঙ্গে সবধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তিনি ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করেন নি বলে জানান। এদিকে পাঁজরভাঙ্গা শাখার কর্মকর্তা রোমেনা আফরোজ শারমিন সংস্থার কোনো অর্থ ও কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন থেকে কেটে সংস্থার ফান্ডে জমাকৃত অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে পেরে গত মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় বোর্ড সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরতের দাবি জানান। এ নিয়ে অর্থ উদ্ধারে তৎপরতা চালাতে গিয়ে গত আগস্টে মান্দার তৎকালিন এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল মালেক সিদ্দিকিকে চাকরি হারাতে হয়েছে। এ অবস্থায় বিষয়গুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন। এর এক পর্যায়ে গত ৪ ও ৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী আদালতে ৬টি ও নওগাঁ আদালতে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এ অবস্থায় একতরফাভাবে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য স্থানীয় অফিসে বিবাদি পক্ষের লোকজন চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। জের ধরে বৃহস্পতিবার (৯ নবেম্বর) ভোরে পাঁজরভাঙ্গা চৌরাস্তার মোড়ে তার পথরোধ করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টাসহ তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। নিরাপত্তার কারণে বাধ্য হয়ে তিনি আত্মগোপনে আছেন বলে জানান। এদিকে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মামলার ১ নম্বর বিবাদি শেখ আব্দুল হালিমের মুঠোফোন ০১৭১১৬৪৭৩০৩ নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে রিসিভ না হওয়ার তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত আদালতে দায়েরকৃত ৫টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। অচিরেই মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।
×