প্রিয় জেএসসি পরীক্ষার্থীবৃন্দ,
অনেকেই সৃজনশীল গণিত নিয়ে হয়তো অনেক ভয়ে আছো। গণিত বিষয়টি সৃজনশীল হওয়ায় তোমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। বরং পূর্বের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির তুলনায় বর্তমান সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে গণিতে বেশি নম্বর পাওয়ার অনেক সুযোগ আছে। কারণ পূর্বে যেখানে কোনো অঙ্ক ভুল করলে পুরো নম্বর কাটা যেত। কিন্তু এখন সৃজনশীল গণিতে ধাপ ভিত্তিক নম্বর প্রদান করা হয়। তাই তোমরা প্রতিটি অংশে (ক,খ,গ,ঘ) যে কয়টি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই কয়টি ধাপের পুরো নম্বরই পাবে।
জেএসসি গণিতের মানবণ্টন:
সৃজনশীল রচনামূলক অংশে পাটিগণিত (১ম, ২য় ও ৩য় অধ্যায়) থেকে ৩টি, বীজগণিত (৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ অধ্যায়) থেকে ৩টি, জ্যামিতি (উপপাদ্য, সম্পাদ্য ও অনুসিদ্ধান্ত) থেকে ৩টি ও পরিসংখ্যান থেকে ২টি প্রশ্ন থাকবে। পাটিগণিত অংশ থেকে ২টি, বীজগণিত অংশ থেকে ২টি, জ্যামিতি অংশ থেকে ২টি ও পরিসংখ্যান অংশ থেকে ১টি করে মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের ৩টি অংশ থাকবে।
১.‘ক’ অংশ যর উত্তরে দুটি ধাপ থাকবে। নম্বর থাকবে (১ + ১)। একটি ধাপের উত্তর যদি কোনো কারণে ভুল হয়, কিন্তু অপর ধাপের সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাওয়া যাবে। সম্পূর্ণ উত্তরটি সঠিকভাবে দিতে পারোনি বলে আংশিক দেওয়া উত্তরটি কেটে দিবে না। কারণ এ ধাপেও তুমি নম্বর পাবে।
২.‘খ’ অংশ যার উত্তরে চারটি ধাপ থাকা বাঞ্ছনীয়। নম্বর থাকবে (১ + ১ + ১ + ১)। অর্থাৎ উত্তরের প্রতিটি সঠিক ধাপের জন্য ১ নম্বর পাবে। আগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রশ্নের উত্তর পর্যন্ত সঠিক না হলে কোনো নম্বর দেওয়া হতো না। কিন্তু বর্তমান সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে উত্তরের প্রতিটি সঠিক ধাপের জন্য ১ নম্বর পাবে।
৩. ‘গ’ অংশ যার উত্তরেও চারটি ধাপ থাকবে। নম্বর থাকবে (১ + ১ + ১ + ১)। অর্থাৎ উত্তরের প্রতিটি সঠিক ধাপের জন্য ১ নম্বর পাবে।
তোমাদের বুঝার সুবিধার্থে ১টি সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার সমাধান নম্বর নির্দেশিকাসহ দেয়া হলো:
প্রশ্ন: দুইটি সংখ্যার সমষ্টি ৩ এবং অন্তর ২। সংখ্যা দুইটি ী ও ু যেখানে, ী > ু
ক. বৃহত্তর সংখ্যাটির মান কত? খ. ৮ীু(ী২ + ু২) এর মান নির্ণয় কর। গ. প্রমাণ কর যে, (ী − ু)৩ + (ী + ু)৩ + ৬ী(ী২ – ু২) = ১২৫
সমাধান:
(ক)
দেওয়া আছে, সংখ্যা দুইটি ী ও ু যেখানে, ী > ু
প্রশ্নমতে, ী + ু = ৩ ... ... ... ... (র)
এবং ী – ু = ২ ... ... ... ... (রর)
(র) ও (রর) নং সমীকরণ যোগ করি,
ী + ু + ী – ু = ৩ + ২
বা, ২ী = ৫
বা, ী = ৫২
বৃহত্তর সংখ্যাটির মান = ৫২
[ দ্রষ্টব্য : প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা বৃহত্তর সংখ্যাটির মান সঠিক নিয়মে বের করতে পারলে ২ পাবে। উদ্দীপকের শর্তানুসারে সমীকরণ গঠন করতে পারলে ১ পাবে।]
(খ)
‘ক’ থেকে প্রাপ্ত, ী + ু = ৩ এবং ী – ু = ২
প্রদত্ত রাশি = ৮ীু(ী২ + ু২) = ৪ীু ২(ী২ + ু২)
= {(ী + ু)২ – (ী − ু)২} {(ী +ু)২ + (ী −ু)২}
= {(৩)২ – (২)২} {(৩)২ + (২)২}
= (৯ − ৪) (৯ + ৪)
= ৫ ১৩
= ৬৫ নির্ণেয় মান = ৬৫
[ দ্রষ্টব্য : প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা সমস্যাটিকে যেকোনো সঠিক পদ্ধতিতে সমাধান করতে পারলে ৪ পাবে। (৯ − ৪) (৯ + ৪) পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারলে ৩ পাবে। সূত্র দুইটিতে মান বসাতে পারলে ২ পাবে এবং সূত্র দুইটির যেকোনো একটি লিখতে পারলে ১ পাবে।]
(গ)
বামপক্ষ = (ী − ু)৩ + (ী + ু)৩ + ৬ী(ী২ – ু২)
= (ী − ু)৩ + (ী + ু)৩ + ৩.২ী (ী − ু) (ী + ু)
= (ী − ু)৩ + (ী + ু)৩ + ৩(ী − ু) (ী + ু).২ী
= (ী − ু)৩ + (ী + ু)৩ + ৩(ী − ু) (ী + ু) {(ী − ু) + (ী + ু)}
= {(ী −ু) + (ী + ু)}৩
= (২ + ৩)৩
= (৫)৩
= ১২৫
= ডানপক্ষ
বামপক্ষ = ডানপক্ষ (প্রমাণিত)
[দ্রষ্টব্য : প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা সমস্যাটিকে যেকোনো সঠিক পদ্ধতিতে সমাধান করতে পারলে ৪ পাবে। ী ও ু এর মান বসাতে পারলে ৩ পাবে। সূত্রটি লিখতে পারলে ২ পাবে এবং প্রদত্ত রাশিটিকে ভেঙে সূত্রে সাজাতে পারলে ১ পাবে। ]
সৃজনশীল বহুনির্বাচনি অংশে পাটিগণিত থেকে ১০টি, বীজগণিত থেকে ১০টি, জ্যামিতি থেকে ৮টি এবং পরিসংখ্যান থেকে ২টি করে মোট ৩০টি প্রশ্ন থাকবে। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
গণিতে A+ পেতে হলে যা করতে হবে :
*প্রথমে প্রশ্নটি মনোযোগ দিয়ে পড়বে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তরের জন্য তোমার খাতায় যে উত্তরপত্রটি দেওয়া আছে, তার নির্ধারিত আয়তক্ষেত্রটিতে কালো কালির বলপয়েন্ট কলম দ্বারা টিক ()চিহ্ন দিবে। মনে রাখবে, একই প্রশ্নোত্তরে একাধিক টিক চিহ্ন দেওয়া যাবে না।
সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্নটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর ঠিক করবে কোন কোন প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে পারো, তা পেনসিল দিয়ে চিহ্নিত করবে। যে প্রশ্নের উত্তরটি সবচেয়ে ভালোভাবে পারো সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রচনামূলক প্রশ্নের রচনামূলক অংশের উত্তর লেখা শুরু করবে।
অবশ্যই ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবে। তোমরা ইতিমধ্যে জেনেছ যে, প্রতিটি গণিত সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্নের তিনটি অংশ।
মনে রাখা প্রয়োজন:
* কোনো প্রশ্নের সমাধান সম্পূর্ণ না করতে পারলে আংশিক সমাধান কেটে দিবে না। কারণ আংশিক সমাধানেও নম্বর পাবে।
* ‘ক’ অংশের ভুল উত্তর ব্যবহার করে ‘খ’ অংশের সমাধান যথাযথভাবে করতে পারলে ‘খ’ অংশের পূর্ণ নম্বর পাবে। ‘গ’ অংশের জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য।
*কোনো সাজেশন অনুসরণ করবে না। কারণ সৃজনশীল গণিতে সাজেশন অনুসরণ করলে কোনোভাবেই ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়।
*বহুনির্বাচনি অংশের জন্য পাঠ্য বইয়ের খুটিনাটি সকল বিষয় পড়তে হবে। কারণ বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করতে পারলে অ+ পাওয়া সহজ হবে।
*আসন্ন মানের ক্ষেত্রে (প্রায়) এবং একক লিখতে ভুল করলে নম্বর কাটা যাবে।
পরিশেষে, তোমাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও সফলতা কামনা করছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: