ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রূপগঞ্জে গৃহবধূর হাত-পা ভেঙ্গে শরীর থেঁতলে দিয়েছে যৌতুকলোভী স্বামী ও শ্বশুর

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১১ নভেম্বর ২০১৭

রূপগঞ্জে গৃহবধূর  হাত-পা ভেঙ্গে  শরীর থেঁতলে  দিয়েছে যৌতুকলোভী স্বামী ও শ্বশুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ১০ নবেম্বর ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভরণপোষণ দাবি করায় ও দাবিকৃত যৌতুকের টানা না দেয়ায় পাষ- স্বামী ও শ্বশুর ঘরের ভেতর আটকে রেখে শারমিন আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূর হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ওই গৃহবধূর পুরো শরীর কোদালের গোড়া দিয়ে থেঁতলে দেয়া হয়। পরে পুলিশ গৃহবধূকে উদ্ধার করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকায় এ ঘটে ঘটে। বর্তমানে গৃহবধূ শারমিন আক্তারকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গৃহবধূ শারমিন আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার ভৈরব গ্রামের সাহিদ মিয়ার মেয়ে। বর্তমানে সাহিদ মিয়া ৪ মেয়ে, দুই ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও শহিদুল্লাহ মাস্টারের ভাড়াটিয়া। গৃহবধূর পিতা সাহিদ মিয়া জানান, তিনি বাদাম বিক্রি করে কোনরকম সংসার চালিয়ে আসছেন। গত সাড়ে ৬ বছর আগে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে সেলিম মিয়া (২৫) এর সঙ্গে শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়েও মেয়ের সুখের চিন্তা করে যৌতুক হিসেবে ৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন সাহিদ মিয়া। বিয়ের পর শারমিন আক্তারের সিয়াম নামে আড়াই বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তান হয়। সন্তান হওয়ার পর থেকেই স্বামী সেলিম মিয়া ও শ্বশুর মোজাম্মেল হকসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারমিন আক্তারকে বিভিন্নভাবে যন্ত্রণা দিয়ে আসছে। গত পাঁচ মাস আগেও মেয়ের সুখের চিন্তা করে যৌতুক হিসেবে জামাই সেলিমকে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন সাহিদা মিয়া। গত দুই মাস ধরে শারমিন আক্তারকে ফের ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা এনে দিতে না পারায় শারমিনকে সন্তানসহ বিতাড়িত করে স্বামী সেলিম মিয়া ও শ্বশুর মোজাম্মেল হক। বৃহস্পতিবার রাতে ভোরণপোষণের দাবিতে শিশু সিয়ামকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যান শারমিন আক্তার। পরে পাষ- স্বামী সেলিম মিয়া ও শ্বশুর মোজাম্মেল মিলে শারমিন আক্তারকে ঘরে বন্দী করে ফেলেন। এক পর্যায়ে তাকে বেঁধে বাঁ হাত ও দুটি পা ভেঙ্গে ফেলে। পরে কোদালের গোড়া দিয়ে পুরো শরীর থেঁতলে দেয়। স্থানীয় লোকজন গৃহবধূর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পাঠালে ওই ডাক্তারকেও বটি দিয়ে ধাওয়া দিয়ে বিতাড়িত করা হয়। খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে নির্যাতনের শিকার শারমিনকে উদ্ধার করে। পুলিশ আসার টের পেয়ে নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী অভিযোগ জানিয়েছেন, আড়াই বছরের শিশু সিয়ামের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলম হোসেন গৃহবধূ শারমিনের সঙ্গে স্বামী সেলিম মিয়ার মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তখন ওই ইউপি সদস্যর সিদ্ধান্ত মানেননি তারা। এছাড়া এলাকার কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে সেলিম ও তার বাবা মোজাম্মেল বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দেয়। এ জন্য কেউ প্রতিবাদ করতে যায় না। অত্যাচারী ও নির্যাতনকারী স্বামী ও শ্বশুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
×