ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ত্রয়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা

মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক সঙ্কট, নেই লেখাপড়ার পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১১ নভেম্বর ২০১৭

মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক সঙ্কট, নেই লেখাপড়ার পরিবেশ

নিখিল মানখিন ॥ দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা সহজীকরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা। এখানে ত্রয়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। ভর্তি পরীক্ষা, ভর্তি সংক্রান্ত সব কিছু স্বাস্থ্য অধিদফতরের মধ্য দিয়ে করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোর্স কারিকুলাম করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। আবার সার্টিফিকেট দেয় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও সেই দায়িত্ব পায়নি। অনেক কলেজে রয়েছে শিক্ষক সঙ্কট, নেই লেখাপড়ার পরিবেশ। স্বায়ত্তশাসন দিয়ে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সকল মেডিক্যাল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলে বিদ্যমান জটিলতা হ্রাস পাবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কিছু মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি কলেজকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পরিদর্শনের আগে কর্তৃপক্ষ রোগী ভাড়া করে নিয়ে আসে। কিছু মেডিক্যালে শিক্ষক ও চিকিৎসকও রয়েছেন ভাড়াটিয়া হিসেবে। এসব কলেজ চিহ্নিত করে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুনত্ব আনার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিবেশের ওপর জোর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ ও রোগীর সঙ্কট রয়েছে। কিছু মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পর্যন্ত নেই। হাসপাতাল, রোগী ও পর্যাপ্ত মেডিক্যাল উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যাল দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা ভালভাবে মনিটরিং করা হয় না। একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষাদানের তুলনায় চিকিৎসাদানে বেশি সময় দিতে হয় শিক্ষককে। অনেক শিক্ষক একাধিক মেডিক্যাল কলেজে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে কারো পক্ষে দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসক অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। নতুন কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব জানান, দক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টি এবং মানসম্মত কলেজ গড়তে হলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন রয়েছে। আর তা আন্তরিকভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নিম্নমানের বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আরেক সরকার এসে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। কলেজগুলোর ওপর শক্তিশালী ও স্বচ্ছ মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে দেশে দক্ষ চিকিৎসক ও মানসম্মত কলেজ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল খান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ত্রয়ী প্রশাসনে তখনও ছিল এখনও আছে। ত্রয়ী প্রশাসন মানে, বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল) কোর্স কারিকুলাম করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরীক্ষানীতি ও বদলি করে থাকে এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা নিয়ে তারা সনদ প্রদান করে। ত্রয়ী প্রশাসন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দরকার ছিল। সেই কারণে আমরা চেয়েছিলাম দেশের সকল মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু সেভাবে সব কিছু হয়নি, শুধু একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। ত্রয়ী প্রশাসন বিদ্যমান থাকায় সমন্বিতভাবে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের মান নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিছু বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কারণে পুরো চিকিৎসা সেক্টর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ ও রোগীর সঙ্কট রয়েছে। কিছু মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পর্যন্ত নেই। হাসপাতাল, রোগী ও পর্যাপ্ত মেডিক্যাল উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যাল দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা ভালভাবে মনিটরিং করা হয় না।
×