ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রসিক নির্বাচন ॥ আ’লীগ-বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন কারা?

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১১ নভেম্বর ২০১৭

রসিক নির্বাচন ॥ আ’লীগ-বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন কারা?

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ৯ নবেম্বর ॥ ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণার পর থেকে মহানগরজুড়ে প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে মেয়র পদে আ.লীগ-বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন কারা ? আ.লীগ এবং বিএনপি প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় এ প্রশ্নটি মুখে মুখে ফিরছে। প্রার্থী এবং ভোটাররাও এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে জোর লবিং চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পাশাপাশি তারা গণসংযোগও অব্যাহত রেখেছেন। রংপুরে ২১ ডিসেম্বরের ভোটে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীদের তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ২২ নবেম্বরের মধ্যে। অর্থাৎ এই নির্বাচনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে দলগুলোর হাতে দুই সপ্তাহের মতো সময় আছে। রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল ও মহানগর আওয়ামী প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার আগামী ১১ নবেম্বর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ বলেন, আগামী ১২ নবেম্বর আমরা রংপুরের নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় বসব। সেখানে স্থানীয় নেতা ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা থাকবেন। সেখানে সবার মতামত শোনা হবে। সবশেষে আমাদের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, যারা রাজনীতি করেন তাদের সবারই ইচ্ছা থাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার। যারা এখানে মনোনয়ন চাচ্ছেন তাদের সবাই যোগ্যতাসম্পন্ন। সব নেতাকর্মীর সঙ্গে হয়ত সবাইকে একভাবে পছন্দ নাও করতে পারে কিন্তু নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন দিন শেষে তার পক্ষেই কাজ করবেন সবাই। আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাঠে আছেন ১১ জন। তারা হলেন বর্তমান সিটি মেয়র এবং জেলা আ.লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং মহানগর আ.লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন, জেলা আ.লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, রংপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে আ.লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক এবং জেলা আ.লীগের সদস্য রাশেক রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল, আওয়ামী আইনজীবী সমিতির নেতা রথীশ চন্দ্র বাবু সোনা, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউজ্জামান বাবু এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আহাম্মেদ। এছাড়া, জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আবদুর রউফ মানিকও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর তদবির চালাচ্ছেন। অপরদিকে, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে তৎপর আছেন দৃশ্যত ৩ জন। তারা হলেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি কাওসার জামান বাবলা, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু এবং জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল ইসলাম নাজু। মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেন বলেন,শীঘ্রই দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকেই মেনে নেয়া হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বচন করবে না বলে তিনি জানান। জাতীয় পার্টির(জাপা) মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির নিশ্চিত করেছেন, জাপার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মহানগর কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। গত শনিবার দলীয় চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ তার হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দিয়েছেন। তবে, দলীয় চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ভাতিজা জাপার সাবেক এমপি হোসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি গণসংযোগকালে কোথাও জাতীয় পার্টির পরিচয় ব্যবহার করছেন না। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও জাপার অধিকাংশ নেতাকর্মী এবং ভোটার তার সঙ্গে আছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একেএম গোলাম মোস্তফাকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সদস্য কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন, বাসদের জেলা সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুসও প্রচার চালাচ্ছেন। মেয়র পদে আরও প্রচার চালাচ্ছেন জাসদ (আম্বিয়া) রংপুর মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ-নবী-মুন্না। তবে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সকল প্রার্থীই বলছেন, দলীয় মনোনয়ন না পেলে তারা নির্বাচন করবেন না। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই তারা কাজ করবেন। এ প্রসঙ্গে বর্তমান মেয়র সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু বলেন, আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় তিনি সিটির উল্লেখযোগ্য অনেক উন্নয়ন করেছেন। বাকি কাজ শেষ করতে তাকেই মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তিনি আ.লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালবাসেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন না। নৌকা মার্কা না পেলে তিনি নির্বাচন করবেন না। সাবেক পৌর মেয়র, জাপা নেতা আব্দুর রউফ মানিকও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল বলেন, আমাদের এখানে কে মনোনয়ন পাবেন এ সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। উনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা আমাদের দলের সবাই মেনে নেবে। নৌকা প্রতীক পেতে আগ্রহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, ভোট করার জন্য আমি নিজেই আগ্রহী। অনেক দিন ধরেই আমি কাজ করছি। আমি ভাল রেজাল্ট করব বলে আশাবাদী। সফি বলেন, রংপুর আগে ছিল এরশাদ সাহেবের ঘাঁটি, এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে আমরা যদি কোন ভাল, ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিত কাউকে সিলেক্ট করি জনগণ তার পক্ষে রায় দেবে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে বিজয়ের পক্ষে সকল বাস্তবতা আমাদের রয়েছে। তাই এখানে খুব সতর্কভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি আশাবাদী। বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিগত সিটি নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। তাই আশা করি, এ নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। আ.লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক এবং জেলা আ.লীগের সদস্য রাশেক রহমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গেলে আধুনিক চিন্তাচেতনাসম্পন্ন উদ্যমী এবং তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে দল এবং রংপুরবাসী মেয়র হিসেবে আমাকেই বেছে েিনবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি অবিচল আস্থাবান। কাজেই, নৌকা না পেলে নির্বাচন করব না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাপা ছাড়া আ.লীগ, বিএনপি বা কোন দলেই বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত মাঠ ঘুরে জানা গেছে, মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আ.লীগ এবং জাপার প্রার্থীর মধ্যে। আ.লীগের প্রার্থীর মধ্যে সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, আবুল কাশেম, রাশেক রহমান, সাফিয়ার রহমান সফি গণসংযোগে এগিয়ে আছেন। আধুনিক চিন্তাশীল এবং তরুণ রাজনীতিবিদ হওয়ায় যুব সমাজের একটি বড় অংশের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন টিভি টকশো ব্যক্তিত্ব রাশেক রহমান। ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক গণসংযোগের মধ্য দিয়ে ভোটারদের আলোচনায় চলে এসেছেন। উল্লেখ্য, গত ৫ নবেম্বর রসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ নবেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। প্রার্থিতা বাছাই করে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করা হবে ২৩ ও ২৪ নবেম্বর। প্রার্থিতা বাতিল হলে আপীল করা যাবে ২৫ ও ২৬ নবেম্বর। ৩০ নবেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর আপীল নিষ্পত্তি হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ৪ ডিসেম্বর। ২১ ডিসেম্বর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ওয়ার্ড আছে ৩৩টি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১১টি। তিন লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ পুরুষ এবং ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ নারী। গত ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র ১৯৬টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৭টি। পাঁচ বছর আগে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২।
×