ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মীরসরাই উপকূল

মহিষ পালনে অপার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১১ নভেম্বর ২০১৭

মহিষ পালনে অপার সম্ভাবনা

ঝুঁকিমুক্ত মাংস ও দুধের চাহিদা মিটিয়ে মহিষ পালনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে মীরসরাইয়ের উপকূলের ম্যানগ্রোভ এলাকাসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে। প্রয়োজন সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগ। মুহুরী প্রকল্পের একদল মহিষের পাল নিয়ে যাচ্ছিল আনোয়ারুল মিয়া। কিশোর বয়স থেকেই রাখাল হিসেবেই এলাকায় সুপরিচিত। এলাকার সকলেই তাকে মহিষ আনোয়ার বলেই জানে। অন্তত কয়েক শত মহিষ নিয়ে যাচ্ছিল মীরসরাইয়ের মুহুরী গেট হয়ে সোনাগাজীর পথে। দিনভর ফেনী নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের উপকূল মীরসরাইয়ের ইছাখালী কিংবা মঘাদিয়ার চরে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এমন মহিষের রাখালরা। গৃহস্থের শ’শ’ মহিষ-গরু বিচরণ করে দক্ষিণ উপকূলের ম্যানগ্রোভ বাগানে। সূর্য উদয়ে শ’শ’ মহিষ নিয়ে বিস্তৃত বাগানের দূর সীমানায় ছুটে চলে। সন্ধ্যায় মহিষ নিয়ে নির্দিষ্ট খোয়ারে ফিরে আসে। সবমিলিয়ে এ চরাঞ্চলে শতাধিক মালিকপক্ষের ছোট বড় মহিষের দল মিলে ১০ হাজার মহিষ। এসব মহিষের জন্য নেই কোন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কখনও কোন মহিষ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই প্রিয় গবাদি প্রাণীকে সুচিকিৎসার আগেই হারাতে হয়। এতে প্রতি মহিষে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয়। অথচ একটি মহিষের পেছনে অনেক মালিকের প্রতিমাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে। ইছাখালীর মহিষের মালিক করিম উল্লাহ বলেন কোন মহিষ অসুস্থ হয়ে পড়লে সদরে গিয়ে চিকিৎসক আসতেও দুদিন সময় নিতে হয়। প্রথম দিন খবর জানালে সুবিধা মতো ২ /১ দিন পরে তারা আসেন। আবার এ জনপদ থেকে অসুস্থ মহিষ সেখানে নেয়াও অসম্ভব। তাই বছরে ১০ থেকে ২০টি মহিষ মৃত্যুবরণ করে। এতে লাখ লাখ টাকার লোকসান হয় উদ্যোক্তাদের। মুহুরী প্রকল্পের আনোয়ার হোসেন জানান, এখানে মহিষের উন্নয়নে সুষম খাবার, ভ্যাক্সিনেশন আর কৃত্রিম প্রজনন-এই তিনটি বিষয়ও অত্যন্ত জরুরী। পৃথক চারণভূমি সৃষ্টির মাধ্যমে মহিষের পর্যাপ্ত সুষম খাবারের নিশ্চয়তা, কৃষকের সচেতনতা আর প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে মহিষ পালনে চরাঞ্চলের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। শহরভিত্তিক শিল্প সমৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত পরিচর্যা করা গেলে চরাঞ্চলেও দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমন উঠে গেলে ইছাখালীর বিভিন্ন চর দাবড়ে বেড়ায় কালো-ধূসর মহিষের পাল। চরভূমে জন্মানো ঘাস, হাইচা, কচুরিপানা, হরেক রকম সবুজ পাতা এখানের মহিষের খাবার। মহিষগুলো পালে পালে খাবার খেয়ে পানিতে গা ডুবায় খাল ডোবার জলে কেউ চলে যায় উপকূলের সমুদ্র ঘেঁষা জলাশয়ে। দিনের শেষে একসঙ্গে মিশে যায় বাতামে (একই সঙ্গে অনেক মহিষ) এসে। ফসল মৌসুমে লাঙ্গল টেনে কোনমতে বেঁচে আছে কেবল স্থানীয় জাতের অনুন্নত কাঁচা ঘাসনির্ভর এই মহিষগুলো বিভিন্ন চরে। তবে দিনে দিনে মহিষের মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি ও দুধের দাম বেশি থাকার কারণে সম্প্রতি মহিষের জাত উন্নয়ন ও মহিষ পালনে ঝুঁকছেন কৃষকরা। তাছাড়া মহিষের মাংসতে গরুর মাংস থেকে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি অনেক কম। তাই আমিষের ঘাটতি পূরণসহ দুধের অভাব পূরণে মহিষের পাল এর সামগ্রিক অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা প্রয়োজন। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×