ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনা-কলকাতা রেল

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১১ নভেম্বর ২০১৭

খুলনা-কলকাতা রেল

মৈত্রীর পর এলো বন্ধন; মৈত্রী শব্দের অর্থ বন্ধুত্ব, আর বন্ধুত্বেই থাকে বন্ধন। মৈত্রী এবং বন্ধন দুই দেশের ভেতর চলাচল করা রেলের নাম। প্রথমটি চালু হয়েছিল প্রায় এক দশক আগে, দ্বিতীয়টির উদ্বোধন হলো বৃহস্পতিবার। প্রথমটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী রেলের নাম, আর দ্বিতীয়টি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শহর খুলনার সঙ্গে কলকাতার রেল যোগাযোগ। এর ভেতর দিয়ে প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ় হলো এতে কোন সন্দেহ নেই। কলকাতা ও খুলনার মধ্যে ৫২ বছর পর নিয়মিত চালু হলো যাত্রীবাহী ট্রেন। এটি খুলনা অঞ্চলের প্রবীণ বয়সী নারী-পুরুষের জন্য এক আবেগময় ঘটনা। কেননা ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর খুলনা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের পরও এই রেল চালু করতে প্রায় অর্ধ শতক লেগে গেল! প্রসঙ্গত, যাত্রী ভোগান্তি কমাতে চলতি মাস থেকে কলকাতা-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের পশ্চিমবঙ্গের গেদে ও বাংলাদেশের দর্শনায় অভিবাসন ও ইমিগ্রেশন চেকিং তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে ট্রেন চলাচলের সময় অন্তত তিন ঘণ্টা কমে যাবে। বিমানবন্দরের মতো এবার কলকাতা ও ঢাকা স্টেশনে দুই দেশের অভিবাসন দফতর যাত্রীদের পরীক্ষা করবে। এই ব্যবস্থায় কলকাতা থেকে ঢাকা ছয় ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে। ভারতের পেট্রাপোল এবং বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে এক সময় যাত্রী ট্রেন চলাচল করত। কলকাতা থেকে এ লাইন দিয়েই ছুটত উত্তরবঙ্গ ও অসমমুখী ট্রেনগুলোও। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই লাইনে একটি সেনাদের ট্রেন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় তার পরে আর ট্রেন চলেনি। পরে দুই দেশের মধ্যে ওই লাইনটিও ছিন্ন করে দেয়া হয়। কিন্তু মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদার কথা মনে রেখে ২০০১ সালে ভারতের তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয় আলোচনার পরে পেট্রাপোল ও বেনাপোলের লাইনটি ফের সংযুক্ত করে। তখন থেকেই ওই লাইনে ট্রেন চালানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আর একপ্রস্ত কথা হয়। ঠিক হয়, এ বছরেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। শেষ পর্যন্ত অঙ্গীকার রক্ষা হলো। এটি সত্যিই আনন্দদায়ক সংবাদ। বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুটি দেশ একই সঙ্গে সার্ক, বিমসটেক, আইওরা এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা ভাষা চালু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী জোটের ক্ষেত্র সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তুকে আশ্রয়দান করে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুলনা-কলকাতা রেল চালু হওয়া তারই একটি দৃষ্টান্ত।
×