ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন ঘন্টার জন্য ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত হল মানিকমিয়া এভিনিউ!

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ১০ নভেম্বর ২০১৭

তিন ঘন্টার জন্য ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত হল মানিকমিয়া এভিনিউ!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মন্ত্রীর ঘোষণার প্রায় দেড়মাস পর ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত হল মানিকমিয়া এভিনিউ। তাও মাত্র তিন ঘন্টার জন্য। নানা আলোচনা সমালোচনার মুখে প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে এমন কথা বলছেন স্থানীয় লোকজন। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়লদুল কাদেরের ঘোষণা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েও অক্টোবর ও নবেম্বরের প্রথম শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত রাখতে পারেনি পুলিশ। অথচ বিশ্ব গাড়িমুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজধানীর এই সড়কে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার ব্যক্তিগড় গাড়ি মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ দিনভর এই সড়কে কোন প্রাইভেটকার চলবে না। সময়মতো তা বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির আংশিক পূরণ করা হল নবেম্বরের দ্বিতীয় শুক্রবার। সকালে মানিকমিয়া এভিনিউ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল ৮ থেকে ১১টা পর্যন্ত এই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধে করে দেয় পুলিশ। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের আড়ং মোড় থেকে সংসদ ভবনের ফটক পর্যন্ত মোটামুটি ৩০০ মিটার রাস্তার একপাশে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এর বদলে অন্য পাশ দিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গাড়ি যাওয়া আসার ব্যবস্থা করা হয় ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে। আসাদ গেইট বা রাপা প্লাজার দিক থেকে আসা খামারবাড়িমুখী যানবাহনগুলো ন্যাম ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে মানিক মিয়ায় ঢুকে উল্টো পথে এগিয়ে ব্যারিকেডের অংশ পার হয় এবং তারপর বাঁ দিকের অংশ দিয়েই যার যার গন্তব্যে চলে যায়। অর্থাত গাড়ি চলেছে ঠিকই। যা হয়েছে তা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. শফিকুর রহমান বলেন, এই প্রথমবারের মত কয়েক ঘণ্টা মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হল। এর ফলে কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তিনি জানান, সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিকল্প পথে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়। নানা সমস্যার কারণে বিগত দিনে গাড়ি বন্ধ রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। গত ২২ সেপ্টেম্বর ওই সড়কে ‘ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মাসে অন্তত একটি দিন একটি সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আমরা কাগজে লিখলাম, সুন্দর সুন্দর বক্তব্য দিলাম, বাস্তবতা যদি না থাকে তাহলে এসব কথা বলে লাভ নেই। শুধু মুখে নয়, আমরা কারমুক্ত দিবসের যথার্থতা যেন উপলব্ধি করি এবং বাস্তবতা যেন প্রয়োগ করি। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে সামনে রেখে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তিনি। সে অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম শুক্রবার পুলিশ ‘ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিষেধ’ লেখা ধাতব ব্যারিকেড বসিয়ে নির্দেশনা কার্যকরের প্রস্তুতি নেয়। প্রথম দিনে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সেদিন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কারণে তাদেও সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। নবেম্বর প্রথম শুক্রবারও ওই সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধের নোটিস দেখা যায়। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় গাড়ি চলতে কোনো সমস্যা হয়নি। সেদিন ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু খবরটি সবাই জানেন না। অনেকেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচলের প্রস্তুতি নিয়ে আসছেন। তাই খবরটি সবার মধ্যে প্রচার হওয়া জরুরী। প্রচার পেলে আমরা প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার রাস্তা বন্ধ রাখব। গেল সপ্তাহেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তার এক সপ্তাহের মাথায় পুলিশ মন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করল, যদিও মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার ওই সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ রাখার কোনো ঘোষণা আগে থেকে ছিলনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ২২ সেপ্টেম্বর ‘কার-ফ্রি ডে’ বা ‘ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস’ পালন করা হলেও বাংলাদেশে এ দিবস পালনের বিষয়টি তুলনামূলকভাবে নতুন। সরকারী ভাবে এবছ্রও প্রথম দিবসটি পালন করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বেসরকারি সংগঠন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সুবিধা ভোগ করে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ, অথচ এই গাড়িগুলো ৭৬ শতাংশ সড়ক দখল করে রাখে। আর প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় নামছে এক লাখ দশ হাজারের বেশি গাড়ি। অর্থাত ঢাকায় রাস্তায় যানজটের ভোগান্তির মূল কারণ হলো ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রাইভেটকার।
×