ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শৈল্পিক প্রেমের আখ্যান রোমিও জুলিয়েট

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ৯ নভেম্বর ২০১৭

শৈল্পিক প্রেমের আখ্যান রোমিও জুলিয়েট

বিনোদন আজ হাইজ্যাক হয়েছে স্মার্টফোন দ্বারা। তারুণ্যের মেধাবিকাশ কুক্ষিগত হয়েছে অগ্রসরমান প্রযুক্তির মধ্যে। যদিও ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ের প্রভাব রয়েছে। তারপরও বলতে হয় আজ এর অপব্যবহার শিল্প সাহিত্য সৃষ্টিতে অন্তরায়। বিগত দুই দশক ধরেই আমরা শিল্পের একটি সঙ্কটকাল পার করছি। যার প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, ভাল অর্থাৎ সর্বজন প্রশংসিত গান, নাটক সিনেমার অপ্রতুলতা। এর মধ্যে কিছু কিছু ভাল কাজ আমাদের বাঁচিয়ে রাখে যার সংখ্যা হাতেগোনা। ফলে তরুণ সমাজ শিল্প বিমুখ হচ্ছে। যার ফলাফল ভয়ঙ্কর। মঞ্চ হারাচ্ছে তার দর্শকপ্রিয়তা। মঞ্চ শিল্পের একটি অন্যতম শাখা। আচমকা কিছু ভাল মঞ্চ প্রযোজনা এখনও মঞ্চকে টিকিয়ে রেখেছে। তবে এর হাল শক্ত হাতে ধরতে না পারলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই শিল্প গল্পে পরিণত হওয়াটা অস্বাভাবিক হবে না। আশার কথা যে এই শিল্প টিকে থাকার নেপথ্যে কাজ যে হচ্ছে না তেমন না। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক নিয়ে চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ডিগ্রী ও মাস্টার্স ডিগ্রী চালু হয়েছে। তাই এই প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তর একটি ইতিবাচক দিক। যারা এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে বের হচ্ছে তারা নানাভাবে নিজেদের মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ মঞ্চ প্রযোজনা করছে। মঞ্চে আসছে নতুন মুখ। গত ৩১ অক্টোবর শিল্পকলার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক চায়না আনসারির অনুপ্রেরণায় ইংলিশ ক্লাবের উদ্যোগে মঞ্চায়ন হয় শেক্সপিয়ারের করুণ রসাত্মক নাটক ‘রোমিও-জুলিয়েট’। আবদুল আল কাইয়ূমের নির্দেশনায় নাটকটিতে অভিনয় করেন আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সহকারী নির্মাতা হিসাবে কাজ করে অপূর্ব গোমস্তা রিক। তরুণ নির্দেশক আবদুল আল কাইয়ূম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া বিভাগের প্রযোজক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত অনুষ্ঠান নির্মাণই তার মৌলিক কাজ। তার নির্দেশনায় ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাফকারের মেটামরফসিস, শেক্সপিয়ারের কমেডি অব র্এ্যারস, আন্তনচেকভের দ্য ম্যারেজ প্রপোজাল এর সফল মঞ্চায়ন হয়। তবে রোমিও-জুলিয়েট মঞ্চায়ন ছিল তার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একেবারে আনকোরা অপেশাদার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিল্পকলায় দর্শনীর বিনিময়ে শোতে যেমন ছিল উত্তেজনা তেমনি ছিল ভয়। কিন্তু কুশীলবদের নিরলস পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস, নির্দেশকের মেধা, কৌশল আর দক্ষতা এবং ডিজাইনিংয়ের যথাযথ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে একটি দর্শকনন্দিত সফল মঞ্চায়ন হয়েছে। তরুণনির্মাতা তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও মেধার পরিস্ফুটন ঘটিয়েছেন এই নাটকে। মিউজিক আর আলোর খেলায় দর্শক যেন নাটকের মাঝেই ডুবে গিয়েছিল। রোমিও-জুলিয়েটের গল্প নিয়ে বড় পরিসরে লেখার কিছু নেই। এ গল্প সবার জানা। তারপরও কাহিনী সংক্ষেপ হলো এটি একটি করুণ রসাত্মক কালজয়ী নাটক। ভেরোনা বিচে মন্টাগুয়ে ও ক্যাপুলেট পরিবারের মধ্যে পারিবারিকভাবে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পূর্বপুরুষদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নতুন প্রজন্ম বয়ে বেরাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় মন্টাগুয়ে পরিবারের বেনভোলিও আর ক্যাপুলেট পরিবারের তাইবাল্টের মধ্যে শহরে বন্দুকযুদ্ধ হয়। পুলিশ দুজনকেই সতর্ক করে দেয়। বেনভোলিওর রোমিওর সঙ্গে সৈকতে দেখা হয় এবং সেখানে তারা ক্যাপুলেটদের সান্ধ্য-পার্টির কথা জানতে পারে। তারা দুজন তাদের এক বন্ধুর মাধ্যমে পার্টিতে ঢোকার টিকেট পায়। পার্টিতে এক এ্যাকুরিয়ামের প্রশংসা করতে গিয়ে তার জুলিয়েটের সঙ্গে দেখা হয়। প্রথম দেখায় তাদের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। কিন্তু পারিবারিক শত্রুতা প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে তাদের মৃত্যু বিবাদমান দুই পরিবারকে একত্রিত করে। সবশেষে বলতে হয় এই মঞ্চ শিল্পকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয় তবে সর্বস্তরে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তবেই মঞ্চ ফিরে পাবে দর্শকপ্রিয়তা।
×