ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখছেন রোনাল্ডো

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ নভেম্বর ২০১৭

মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখছেন রোনাল্ডো

কি যে যাতনার মধ্যে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, তা তিনি নিজেই জানেন। গোল করা যার কাছে ডালভাত সেই মানুষটিই কিনা গোলের জন্য হা-পিত্যেশ করছেন! এই বছরই দুইবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন। একবার জানুয়ারিতে, আরেকবার গেল অক্টোবরে। অথচ সেই ফুটবলারটিই চলমান মৌসুমে গোল করতে ভুলে গেছেন। যে কারণে প্রতিনিয়ত সাফল্যের মধ্যে থাকা সি আর সেভেন এখন দেখছেন মুদ্রার উল্টো পিঠও। রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান অবশ্য দুঃসময়ে প্রিয় শিষ্যের পাশেই আছেন। অফফর্মে থাকা করিম বেঞ্জামাকেও আগলে রাখছেন তিনি। জিদান বলেন, মূলত এটা নিয়ে দুজনের কেউই খুশি নন। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারা দলের জন্য কি করছে, কি ধরনের সুযোগগুলো সৃষ্টি করে দিচ্ছে। এই ম্যাচে ইস্কো, এ্যাসেনসিও, কাসেমিরো গোল করেছে। কিন্তু রোনাল্ডো ও বেঞ্জামার সামনেও সুযোগ ছিল। আমাদের এটা নিয়ে বিচলিত হলে চলবে না। ফরাসী কিংবদন্তি বলেন, আমরা সবাই জানি রোনাল্ডো যখন গোল পায় সেই মুহূর্তটা সে দারুণ উপভোগ করে। আমরা সবাই জানি মৌসুমের শেষে সেই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি রিয়ালের হয়ে পার্থক্য গড়ে দেবে। নিষেধাজ্ঞার কারণে লা লিগার চলতি মৌসুমের প্রথম চার ম্যাচে খেলতে পারেননি সি আর সেভেন। যে সাত ম্যাচে খেলেছেন তাতে গোল পেয়েছেন মাত্র একটি। অর্থাৎ ১১ রাউন্ড শেষে সদ্য ‘দ্য বেস্ট’ এ্যাওয়ার্ড জয় করা এই তারকার নামের পাশে মাত্র এক গোল। এ প্রসঙ্গে জিদান আরও বলেন, আপনারা (সংবাদমাধ্যম) সবসময় নেতিবাচক দিকগুলোই দেখেন। আর আমি চিন্তা করি ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে। রোনাল্ডো গোলের জন্য পাস দিয়েছে। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এটির জন্য সে আনন্দিত। আমরা জানি সে গোল করতে ভালবাসে এবং গোল করতে পারলেই সে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। গোল না পেয়ে হতাশ রোনাল্ডো নিজেও। বিষয়টি জানিয়েছেন রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস। তবে সতীর্থের গোলে ফেরা নিয়ে আশাবাদী রিয়াল অধিনায়ক। লা লিগায় জিরোনা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টটেনহ্যাম হটস্পারের হারা রিয়াল রোববার রাতে ৩-০ গোলে লাস পালমাসকে উড়িয়ে জয়ে ফিরে। নিজেদের মাঠে লা লিগার এই ম্যাচে একটি করে গোল করেন কাসেমিরো, মার্কো এ্যাসেনসিও ও ইস্কো। বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রোনাল্ডোা। তবে বেশ ভাল খেলে দ্বিতীয়ার্ধে ইস্কো দিয়ে একটি গোল করিয়েছেন। লা লিগায় এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে গোলহীন থাকলেন রিয়ালের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক। পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার চলতি লিগে এখন পর্যন্ত করেছেন মাত্র এক গোল। রোনাল্ডোর মতোই অবস্থা রিয়ালের আক্রমণভাগের আরেক খেলোয়াড় করিম বেঞ্জামার। লিগে ছয় ম্যাচে করেছেন এক গোল। আশানুরূপ খেলতে না পারায় পালমাসের বিপক্ষে নিজেদের সমর্থকদের কিছু অংশের দুয়োর শিকার হন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ দুই সতীর্থ রোনাল্ডো-বেঞ্জামার উপর আস্থা হারাচ্ছেন না রামোস। তিনি বলেন, রোনাল্ডো ও বেঞ্জামা গোল করবে। রোনাল্ডো যখন গোল করছে না, নিশ্চিতভাবে সে হতাশ। তারা কম গোল করায় আমরা উদ্বিগ্ন নই। কারণ, তারা পার্থক্য গড়ে দেয়। জয়টা হলো ব্যাপার। গোল আসবে। অথচ গত মৌসুমে কি দুর্দান্ত ফর্মেই না ছিলেন রোনাল্ডো। যে কারণে নতুন আদলে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার (দ্য বেস্ট) হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে কোনরকম পাত্তা না দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কার শোকেসে ঢুকিয়েছেন সি আর সেভেন। গত ২৩ অক্টোবর ইংল্যান্ডের লন্ডনের প্যালাডিয়ামের ব্লুমসবুরি বলরুমে ফিফার ২০১৭ বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দেয়া হয়। রোনাল্ডো জিতবেন অনুমিতই ছিল। কিন্তু প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মেসিকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে হারাবেন এটা হয়ত কেউ ভাবেননি। ফিফার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কোচ, অধিনায়ক ও সাংবাদিকরা মিলে এবার ৪৫৯ ভোট দিয়েছেন। সেখানে রোনাল্ডো পেয়েছেন ৩৪০ ভোট আর দ্বিতীয় হওয়া মেসি পেয়েছেন মাত্র ৫৫ ভোট। মেসির এত বিশাল ব্যবধানে হার অবাক করার মতোই। ভোটের হিসাবে নির্ধারণ হয় পয়েন্ট। সেখানে রোনাল্ডো ১৮৮৮ ও মেসি পান ৮২৩ পয়েন্ট। বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়া নেইমারও খুব বেশি ভোট পাননি। তৃতীয় হওয়ার পথে তিনি পেয়েছেন মাত্র ১৫ ভোট। এ হিসেবে তিনি পয়েন্ট পেয়েছেন ২৯৮টি। শতকরা হিসেবে রোনাল্ডো, মেসি ও নেইমার পেয়েছেণ যথাক্রমে ৪৩.১৬ শতাংশ, ১৯.২৫ শতাংশ ও ৬.৯৭ শতাংশ ভোট। এছাড়া চতুর্থ স্থানে থাকা জুভেন্টাসের জিয়ানলুইজি বুফন পেয়েছেন ৮ ভোট এবং বার্সাতে মেসির সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ পেয়েছেন ৪ ভোট। উরুগুয়ের স্ট্রাইকার হয়েছেন নবম। তবে এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর নিশ্চিতকরেই হাতছাড়া হবে শ্রেষ্ঠত্ব। গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করা রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম সফল খেলোয়াড় ছিলেন রোনাল্ডো। এ কারণে প্রথমবারের মতো লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে রোনাল্ডোর পাশাপাশি অধিকাংশ পুরস্কারেই ছিল রিয়ালের আধিপত্য। রিয়াল মাদ্রিদ্র ও পর্তুগালের হয়ে ২০১৬-১৭ মৌসুমে রোনাল্ডো ৪৮ ম্যাচে করেছেন ৪৪ গোল। এর মধ্যে আছে গত ৩ জুন কার্ডিফে জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে ৪-১ গোলের জয়ের ম্যাচে করা দুটি অসাধারণ গোল। গত বছর ২০ নবেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ জুলাই পর্যন্ত ফুটবলারদের পারফর্মেন্স বিবেচনায় বর্ষসেরা নির্বাচন করা হয়েছে। ক্যারিয়ারে তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা প্রাপ্তিতে ১২ ম্যাচে ১৬ গোল, পর্তুগালকে প্রথমবারের মতো ইউরোর শিরোপা জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া এসবই রোনাল্ডোকে ২০১৭ সালের সেরা ফুটবলারের খেতাব জয়ে সহযোগিতা করেছে। রোনাল্ডো প্রথম বর্ষসেরা পুরস্কার জয় করেন ২০০৮ সালে। ওই বছর তিনি ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের দেয়া ব্যালন ডি’অর পুরস্কারও জয় করেছিলেন। এর পরপরই বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যৌথভাবে গত ছয় বছর বর্ষসেরা ফুটবলারের এ্যাওয়ার্ড ব্যালন ডি’অর প্রদান করে আসছিল। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রোনাল্ডো জয় করেছিলেন ব্যালন ডি’অর। এ বছর জানুয়ারিতে আবারও পুরস্কার দুটি আলাদা হওয়ায় জানুয়ারিতে ফিফার বিচারে সেরা পুরুষ খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছিলেন রোনল্ডো। মাত্র আট মাসের ব্যবধ্যানে আবারও তিনি এই পুরস্কার জয় করেছেন। কিন্তু আচমকাই সময়টা মন্দ যাচ্ছে সি আর সেভেনের।
×