ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ভালবাসায় মুগ্ধ বিদেশী এমপিরা

সিপিএ সম্মেলনের সর্বসম্মত বিবৃতি ॥ রোহিঙ্গা ফেরত নিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ নভেম্বর ২০১৭

সিপিএ সম্মেলনের সর্বসম্মত  বিবৃতি ॥ রোহিঙ্গা ফেরত নিন

উত্তম চক্রবর্তী ॥ নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিন্দা ও দ্রুত সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংসদীয় সংস্থা কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্স সিপিসির ৬৩তম সম্মেলন। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিঃশর্তভাবে দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে তাদের স্থায়ী নিরাপত্তাসহ পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে গৃহীত সর্বসম্মত এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। বিবৃতিতে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন সিপিএ ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ যৌথভাবে আয়োজিত সিপিএ’র সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজুলেশন নেয়ার বিষয়ে জল্পনা ও ঐকমত্য থাকলেও সংস্থাটির বিধিগত জটিলতায় শেষ পর্যন্ত রেজুলেশন নেয়া যায়নি। সিপিএ’র বিধি অনুয়ায়ী কোন বিষয়ে রেজুলেশন নিতে হলে ৬০ দিন আগে প্রস্তাব আকারে তা দাখিল কতে হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেহেতু সাম্প্রতিক ঘটনা সে হিসেবে এ বিষয়ে সিপিএর রেজুলেশন নেয়ার সুযোগ নেই। তাই এ বিষয়ে একটি সুপারিশ গ্রহণ করে সম্মেলনের সমাপনী দিন মঙ্গলবার একটি বিবৃতি প্রদান করেছে সিপিএ। ৬৩তম সিপিএর সাধারণ সভায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের মানবতাবিরোধী সঙ্কট দ্রুত সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি জরুরীভাবে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয়ার প্রস্তাব জেনারেল এসেম্বলিতে গৃহীত হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিএ সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনের সমাপনী পর্বে বাংলাদেশসহ সদস্য দেশগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে বিবৃতিটি উত্থাপন করা হয়। পরে সর্বসম্মতভাবে বিবৃতিটি গ্রহণ করা হয়। সম্মেলন থেকে এই বিবৃতিটি সিপিএভুক্ত সকল সংসদ, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে পাঠানোর জন্য সিপিএ সেক্রেটারি জেনারেলকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমারে এই উদ্বেগজনক ঘটনা অব্যাহত থাকলে সিপিএ’র পরবর্তী সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে তা উত্থাপন করতে বলা হয়েছে। সিপিএ চেয়ারপার্সন ও স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাপনী অধিবেশনে চার পৃষ্টার এই বিবৃতিটি উত্থাপনের পর অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত প্রতিনিধিরা টেবিল চাপড়ে সিপিএ নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানান। এ সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা ও ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া ফ্লোর নিয়ে আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সিপিএ’র বিবৃতি অনুযায়ী চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সম্মেলন শেষে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সিপিএ সম্মেলনে কোন নির্ধারিত এজেন্ডা না থাকলেও সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের পদক্ষেপ ও সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবের পক্ষে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে একটি বিবৃতি গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এই সংকটের দ্রুত সমাধান হবে বলে সিপিএ আশা করছে। আর কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা সমস্যা সমাধানে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নাগরিকরা যে মানবেতর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার দ্রুত সমাধান হতে হবে। সেখানে রোহিঙ্গা নিধনযোগ্য চলছে। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজ ভূমে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদেরকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের নিরাপত্তা, জীবন-জীবিকা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, স্যানিটেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশে পাশে থাকার জন্য কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। এ বিষয়ে সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সুপারিশ, বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা, ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)’র ১৩৭তম সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবনার আলোকে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হোক। এদিকে সিপিএ সম্মেলন মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। দিনব্যাপী সাধারণ অধিবেশন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিং-এ সিপিএ’র বিদায়ী চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, নতুন চেয়ারপার্সন ক্যামেরুনের ডেপুটি স্পীকার এ্যামেলিয়া মোনজোয়া লিফানকা, সিপিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্পীকার সফলভাবে সিপিএ সম্মেলন শেষ করতে পারায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সিপিএ ও আইপিইউ সম্মেলনের সফলভাবে আয়োজন থেকে আমাদের অর্জন অনেক। এটা আমাদের গণতন্ত্র ও সংসদের অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বিশ্ববাসী স্বচক্ষে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখার সুযোগ পেয়েছে। এই সম্মেলন আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্পীকার বলেন, সরাসরি ভোটে আমি এই সংস্থার চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছিলাম। গত তিন বছর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমার অর্জন অনেক। এখানে থেকে অনেক কিছু দেখার ও শেখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশও এখান থেকে অনেক পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে ভারত-পাকিস্তানসহ সবাই ॥ ভারত-পাকিস্তানসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে অবস্থান নিয়েছে সিপিএভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা। ৬৩তম সিপিসি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং মিয়ানমারকে তাদের দেশের নাগরিকদের ওপর বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছে। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। ভারত এর বিশেষ নিন্দা জানায়। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। ভারত চায় রোহিঙ্গা সমস্যাটি যেহেতু মিয়ানমারের সৃষ্ট তাই বিষয়টি তাদের সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়া জরুরী। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য। বিশেষ করে শেখ হাসিনা যেভাবে তাদের আশ্রয় ও খাবার, চিকিৎসা দিচ্ছেন তা প্রশংসার যোগ্য। তিনি মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবার জন্য আহ্বান জানান। রোহিঙ্গারা যেভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই অবিলম্বে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিক। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সংসদ সদস্য ড. নাফিসা শাহ সাংবাদিকদের জানান, আমরা চাই এ উপ মহাদেশে শান্তি বিরাজ করুক। মিয়ানমার সরকার তাদের দেশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত নিক। এ বিষয়ে আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য মিয়ানমার সরকারের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের উভয় সংসদে রেজুলেশনও গ্রহণ করেছি। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত হয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে পাকিস্তানের এই আইনপ্রণেতা বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যেভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে, যেভাবে তাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করেছে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। পক্ষান্তরে রোহিঙ্গা আশ্রয় দেবার জন্য তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, গত রবিবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা ইস্যুতে সিপিসি সদস্যদেরকে একটি প্রেস ব্রিফ্রিং করেন। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুটির ওপর সিপিএ দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য সৃষ্টি হয় এবং এটিকে রেজুলেশন হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব ওঠে। বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশ বিশেষভাবে মিয়ানমারের বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য সিপিএ নির্বাহী কমিটির প্রতি আহ্বান জানায়। এজেন্ডায় না থাকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজুলেশন হয়নি ॥ সিপিএ সম্মেলনে বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা ইস্যুতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে রেজুলেশন বা বিবৃতি দেয়ার সুযোগ নেই। সিপিএ’র সংবিধান অনুযায়ী কোন ইস্যু এ সংস্থার সম্মেলনে এজেন্ডাভুক্ত করতে হলে কমপক্ষে ৬০ দিন আগে নোটিস দিতে হয়। সম্মেলন ঘোষণার অনেক পরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে এসেছে। কাজেই এই ইস্যুতে কমনওয়েলথভুক্ত অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিই সোচ্চার হলেও শেষ পর্যন্ত এটি এজেন্ডাভুক্ত হয়নি। এ প্রসঙ্গে সিপিএ’র বিদায়ী চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এজেন্ডায় আনার সুযোগ না থাকলেও যেহেতু আমি সিপিএ চেয়ারপার্সন এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার, তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সম্মেলনের কোন একটি ফোরামে আলোচনার চিন্তা করি। সেকারণে গত ৫ নবেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিপিএ ডেলিগেটসদের সামনে এই ইস্যুতে একটা বিশেষ ব্রিফিং করেছেন। এটা আমাদের কারণেই করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, সিপিএ’র বিধান অনুযায়ী আমাদের মূল প্রতিপাদ্য যেটা ছিল সেটারও উপরই আলোচনা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিসি’র সম্মেলনের সমাপনী দিনে জেনারেল এসেম্বলিতে ২৪টির মতো ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর তা গ্রহণ করা হয়। এজেন্ডা হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত না হলেও সিপিএ’র বিদায়ী চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার সমাপনী বক্তব্যে এ ইস্যুতে জোরালো বক্তব্য রাখেন, সেখানে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে তাদের নিজ নিজ পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা এবং মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয় সেজন্য স্ব স্ব দেশ থেকে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের আতিথেয়তায় মুগ্ধ ডেলিগেটরা ॥ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন সিপিএ’র সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের আতিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অংশগ্রহণকারী ডেলিগেটরা। তারা বলেন, বাংলাদেশের মতো অতিথি পরায়ণ দেশ খুব কমই আছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টিকেও তারা বাংলাদেশের উদারতা ও মানবিকতাবোধ ও মানবাধিকারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলেও অভিহিত করেন। কানাডার সিনেটর সালমা আতাউল্লাজান বলেন, বাংলাদেশকে আগে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবেই জানতাম। কিন্তু এদেশের মানুষের প্রাণশক্তি অফুরান। আপনারা সাহসী জাতি। আপনাদের অতিথি পরায়ণ হৃদয় আমাদের মুগ্ধ করেছে। সেন্ট হেলেনা দ্বীপপুঞ্জের ডেরেক থমাস বলেন, আমি এর আগে শুধু বাংলাদেশের নাম শুনেছি। কিন্তু তেমন কোন ধারণা ছিল না। তবে এদেশে এসে খুব ভালো লাগছে। এখানকার মানুষগুলো খুব মিশুক। এ ছাড়া আপনাদের আতিথেয়তা অসাধারণ। দক্ষিণ আফ্রিকার মালামা প্রদেশের এমপি পিড্ডি মা মাকুলা বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, আমি বাংলাদেশকে খুব ভালবাসি। এখানকার মানুষগুলো খুব সহজ সরল। কাদামাটির মতো তাদের মন। যতদূর জেনেছি তাদের মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। মালয়েশিয়ার এমপি ও কমনওয়েলথ উইমেন পার্লামেন্টারিয়ানের চেয়ারপার্সন ড. ডাটো নোরানী আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের আতিথেয়তা আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে এটাই আমার প্রত্যাশা। গায়ানার ড.বার্টন ড্রেক এমপি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তা বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জও। তাই অবিলম্বে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ক্যামেরুন সংসদের মাইনরিটি চীফ হুইপ বানাদজেম জোসেফ বলেন, এদেশে এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাদেশিক পরিষদের হুইপ ফিলেমন ফালাগা বলেন, উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। নারী নেতৃত্বের রোল মডেল বাংলাদেশ। সিপিএ সম্মেলন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করায় এদেশের মানুষ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেষ দিনেও সোচ্চার অনেকেই ॥ এজেন্ডায় স্থান না পেলেও মঙ্গলবার সম্মেলনের সমাপনী দিনেও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিরা। ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ও দেশটির স্বনামধন্য অভিনেত্রী রুপা গাঙ্গুলীও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কী বলি, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্পীকারের কী অবস্থান সেটাই হচ্ছে কথা। যেদিন ঘটনা ঘটছে সেদিন থেকেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিমুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিদির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এরই মধ্যে ভারত বর্ষের পক্ষ থেকে সাড়ে ৯ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। আরও সাহায্য এবং প্রশাসনিক সাহায্য যেটা লাগবে, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গেই আছি। যেখানে জাতি নিধন হচ্ছে তাতে আমরা সমর্থন করি না। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেখুন প্রতিটি দেশের তো একটা লেজিসলেটিভ নিয়ম কানুন আছে। অন্য কোন দেশ বাইরে থেকে গিয়ে তাদের ঘারের ওপর নির্দেশ চাপাতে পারে না। তবে এটুকু আমরা বলতে পারি, এটা অন্যায় হচ্ছে। ব্রিটেনের প্রতিনিধি দলের প্রধান ও হাউস অব লর্ডসের সদস্য জর্জ ফোকেজ বলেন, বাংলাদেশ মানবতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমরা পশ্চিমারা শরণার্থীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিই। অথচ বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নিয়েছে। তাদের আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করছে। এ জন্য অনেক অর্থও খরচ করতে হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ও এ দেশের জনগণ অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে কানাডার সংসদ সদস্য আলেক্সান্ডার ম্যান্ডেজ বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতা ও উদারতার ক্ষেত্রে বিশ্বে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গা সমস্যাকে নাটকীয় ও জটিল সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ সমস্যার সমাধানে কানাডা সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। এ জন্য আমরা রিফিউজি হিসেবে সবাইকে না হলেও একটি অংশকে কানাডায় আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া ওদের বর্তমান চাহিদা পূরণে কানাডা সরকার সহযোগিতা করছে।
×