ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকদের প্রিয় হয়ে উঠছে কেঁচো জৈব সার

প্রকাশিত: ০২:৩১, ৭ নভেম্বর ২০১৭

ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকদের প্রিয় হয়ে উঠছে কেঁচো জৈব সার

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ জেলার কৃষকদের কাছে ক্রমেই কেঁচো জৈব সার প্রিয় হয়ে উঠছে। সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ৩টি গ্রামের কৃষকরা এখন জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে কেঁচো জৈব সার প্রয়োগ করে উৎপাদন করছেন বিভিন্ন শাক সবজিসহ ফসল। সেই সাথে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ইতোমধ্যে এটি সদর উপজেলা ছাড়িয়ে অন্য ৪ উপজেলায় ছড়িয়ে গেছে। বালিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা একসময় শুধুমাত্র রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতেন। এতে জমির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় পরিবেশ বান্ধব কৃষি সম্প্রসারনের লক্ষ্যে আরডিআরএস বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তায় সুশাসন প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার বালিয়া দেবিপুর ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নে ১০৫ টি কেঁচো সার উৎপাদন প্লান্ট স্থাপন করেন। পরে ওই গ্রামের ২ শতাধিক কৃষক সিমেন্টের রিং ও বিশেষায়িত কেঁচো দিয়ে প্রথম শুরু করেন কেঁচো জৈব সার তৈরি কাজ। এজন্য সিমেন্টের তৈরি রিংয়ে গোবর দিয়ে সেখানে ২শ’ থেকে ২শ’ ৫০টি কোঁচো ছেড়ে দিয়ে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে কেঁচোগুলো বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মল ত্যাগ এবং মুখের বিশেষ লালা দিয়ে তৈরি করে কেঁচো জৈব সার। ওই সার জমিতে প্রয়োগ করে আশানুরূপ উৎপাদন পেয়ে ওই সারের চাহিদা বেড়ে যায়। পরের বার বগুলাডাঙ্গী গ্রামের ৩শ’ ও বানিয়াপাড়া গ্রামের ২ শতাধিক পরিবারে নিজ বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করতে থাকে। এ সার প্রযোগ করলে জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। জমির স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণ ভাল থাকে এবং উৎপাদন আগের চাইতে বৃদ্ধি পায়। বড়বালিয়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন (৪০) ও ফাতেমা (৪৫) জানান, তারা পিয়াজ-মরিচ, আলু ও লালশাক ক্ষেতে কেঁচো জৈব সার প্রয়োগ পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন পেয়েছেন এবং কেঁচো দিয়ে উৎপাদিত জৈব সার বিক্রয় করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচেছন। ছোট বালিয়া গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম ১ বিঘা জমিতে এ সার প্রয়োগ করে লাউ ও করলার চাষ করেন। তাতে খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ফলনকৃত লাউ-করলা বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ফলনে তিনি খুব খুশি। সনেকা বেগম নামে এক কৃষাণি জানান, বাড়িতে রিং বসিয়ে মহিলারাই এটি দেখাশুনা করতে পারে। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার টাকার সার বিক্রি করেছেন। এছাড়াও ছোট বালিয়া গ্রামে ২ টন জৈব সার প্রস্তুত হয়। প্রস্তুতকৃত সার নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করে ওই গ্রামের কৃষকেরা মাসে ২৪ হাজার টাকা আয় করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২শ, রানীংশংকৈল উপজেলার দেড়শ’ ও হরিপুর উপজেলার ৫০ বাড়িতে কেঁচো জৈবসার উৎপাদন শুরু হয়েছে। আরডিআরএস বাংলাদেশ ঠাকুরগাঁও ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মো:মাহফুজুর রহমান জানান, এই প্লান্টে সিমেন্টের রিং, ঢেউটিন ও বিশেষায়িত কেঁচো দিয়ে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে জৈব সার । হিউমাস সমৃদ্ধ এ জৈব সার মাটির উরবর্তা ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, মাটির লবনাক্ত কমায়, পানি ধারন ক্ষমতা বাড়ায় এবং এটি বিষমুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে,এম মাউদুদুল ইসলাম জানান, এ জেলার জমিতে ব্যাপক জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে। জমির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় জৈব সারের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার বালিয়া ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ৬টি গ্রামে ১০৫টি জৈব সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। গ্রামের কৃষান কৃষাণিরা বাড়িতে বসে গোবর থেকে কেঁচো জৈব সার তৈরি করে রাসায়নিক সার ছাড়াই ফসল উৎপাদন করছেন। অন্যদিকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট সার বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এখানকার কৃষকদের লাভ দেখে অন্যন্য উপজেলার চাষিরাও জৈবসার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে কেঁচো জৈব সার সদর উপজেলা থেকে রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগির ঠাকুরগাঁও জেলা জৈব কৃষির আওতায় আসবে এবং মাটির উন্নয়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।
×