ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরের রানীরবন্দর তাঁতপল্লী আবার জেগে উঠছে

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৭ নভেম্বর ২০১৭

দিনাজপুরের রানীরবন্দর তাঁতপল্লী আবার জেগে উঠছে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ বর্তমানে দেশে তাঁতের পন্যের বাজারে চরম ধস নেমেছে। বাজারে নতুন নতুন ডিজাইনার পোশাকে ছেঁয়ে গেছে। এরপরও দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত বস্ত্রপণ্যর কদরই আলাদা। আদিকাল থেকে এই পণ্যের খ্যতি ধরে রেখেছে দিনাজপুরের রানীরবন্দর এলাকার তাঁতপল্লী। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলার ১৩টি গ্রাম নিয়ে ‘রানীরবন্দর’ তার নিজস্ব সুনাম ধরে রেখেছে। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালে, মশারি ও চাদর জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। রানীরবন্দরের এলাকায় এক সময় গড়ে উঠেছিল ছোট-বড় দুই শতাধিক তাঁতশিল্প কারখানা। এ তাঁতশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ সহস্রাধিক মানুষ জড়িত ছিল। কিন্তু ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ এলাকার অধিকাংশ তাঁত নষ্ট হয়ে যায়। সুতা ও কাপড় তৈরির সরঞ্জামের মূল্য বৃদ্ধি, পুঁজির স্বল্পতা আর বাজারজাত করনের সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে এ তাঁতশিল্পে ধস নামে। এর কারনে সে সময় বেশির ভাগ তাঁত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন তাঁতের মাকুর ‘ঠুক-ঠুক’ শব্দ ছিল না। এক সময় মাকুর ঠুক ঠুক শব্দে সেখানকার মানুষের ঘুম ভাঙত না। কিন্তু এখন আবার তাঁতপল্লী জেজে উঠতে শুরু করেছে। তাঁতিরা তৈরি করছে টেবিল ক্লথ, বেড কভারসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় ‘হ্যান্ড টাচ কোম্পানি’ সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে চালু রয়েছে ছোট- বড় প্রায় দেড় শ’ তাঁত। এক তাঁতি বলেন, ১০ বছর আগেও আমাদের দুই ভাইয়ের ৭০টা তাঁত ছিল। বর্তমানে আছে মাত্র ১০টা। পুঁজি কম, বাজারজাতকরণে অসুবিধা এবং সুতা কেনার জন্য বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়। এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম।’ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টার রানীরবন্দর লিয়াজোঁ অফিসার মনজুরুল হক বলেন, ‘আমরা তাঁতিদের ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছি। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছি। ক্যাটাগরি অনুযায়ী একটি তাঁতের জন্য ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, সুতার সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সরকারীভাবে কোনো প্রকল্প গ্রহন করা হলে, এ অঞ্চলের তাঁতশিল্প আবার জেগে উঠবে।
×