ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়েদের বারবার প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ নভেম্বর ২০১৭

মেয়েদের বারবার প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ

মেয়েদের যে সমস্ত কমন অসুখ-বিসুখ হয় তার মধ্যে ইউটিআই বা প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ অন্যতম। এমন নারী বোধ হয় পাওয়া যাবে না যার পুরো জীবনে অন্তত একবার এ সমস্যা হয়নি। অনেকের একবার ইউটিআই হলে বার বার হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। বছরে তিনবার বা এর বেশি প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ হলে একে বলা হয় রিকারেন্ট ইউটিআই এবং তা হতে পারে একই জীবাণু অথবা নতুন কোন জীবাণু দ্বারা। সাধারণভাবে পুরুষের চেয়ে নারীর প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ বেশি হয়। এর কারণ হিসাবে বলা হয় যে মেয়েদের মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য কম এবং এর মুখের অবস্থান যোনিপথ এবং মলদ্বারের কাছাকাছি। এ দুটি স্থানে স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর জীবাণু থাকে, আর খুব সহজেই সেখান থেকে জীবাণু মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে কম পরিমাণে পানি পান, দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা, অপরিচ্ছন্ন থাকা, নোংরা পানি ব্যবহার, যৌনমিলনের আগে ও পরে প্রস্রাব না করা বা পরিচ্ছন্ন না হয়েই ঘুমিয়ে পড়া এসব বিষয় প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ছোট মেয়েদের ক্ষেত্রে মূত্র নির্গমনের পর পানি দিয়ে পরিষ্কারের সময় বার বার হাত মূত্রনালীর মুখ থেকে মলদ্বার ছুঁয়ে আবার মূত্রনালীর মুখ স্পর্শ করার কারণে এবং মেয়েদের এস্ট্রোজেন হরমোনজনিত সুরক্ষা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার জন্য ঘনঘন ইউটিআই হতে পারে। যোনিপথে যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের সঙ্গে প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণের যোগ রয়েছে এবং অনেক সময় যৌনবাহিত রোগ হলে তাকে ইউটিআই মনে করে রোগী চিকিৎসকের কাছে আসেন। যাদের বার বার ইউটিআই হয় তাদের মূত্রতন্ত্রের গঠনগত কোন সমস্যা আছে কি-না তা দেখে নেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও মূত্রতন্ত্রের কোথাও পাথর আছে কি-না সেটা জানাও জরুরী। মেনপজ বা স্থায়ী ?তু বন্ধ হলে এস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে যোনিপথ ও মূত্রতন্ত্রের স্বাভাবিক সুরক্ষা কমে যায়। পানি খাওযার পরিমাণও হ্রাস পায়। তাছাড়া বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণেও মেনপজ পরবর্তী নারীদের বার বার ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি কোন অসুখের জন্য স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ হলে ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ, তাড়না, মূত্রনালীতে জ্বালা, তলপেটে অন্বস্তি থেকে শুরু করে প্রচন্ড ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রস্রাব ঘোলা হতে পারে অথবা প্রস্রাবে রক্তও যেতে পারে। চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে মূত্রতন্ত্রের উপরি অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। তখন রোগীর কাঁপানো জ্বর এবং কোমরে ব্যথার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। ইউটিআই বা প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রস্রাব পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। বার বার প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ রোধে করণীয় হলোÑ প্রস্রাবের বেগ চেপে না রেখে প্রস্রাব করে ফেলতে হবে। প্রস্রাব করার পর টয়লেট পেপার দিয়ে চেপে মুছতে হবে, কখনও ঘষবেন না এবং পায়খানার রাস্তা থেকে প্রস্রবের রাস্তার দিকে কখনও মুছবেন না। পরিমিত পানি পান করতে হবে। গরমের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ও লবণ বেরিয়ে যাওয়ার কারণে কয়েক গ্লাস পানি বেশি খেতে হবে। এক্ষেত্রে লেবুর শরবত, অন্যান্য ফলের রস, ডাব ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলতে হবে। যাদের এ সমস্যা রয়েছে তারা প্রচুর পানি পানের পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন, শাক-সবজি, সালাদ, ফল, ইসবগুলের ভুসি ইত্যাদি বেশি করে খাবেন। তবে ইসবগুলের ভুসি ভিজিয়ে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে খাবেন। গরমের দিনে তাজা দই খেতে পারেন। যৌনমিলনের আগে পানি খেয়ে নিন এবং আগে ও পরে প্রস্রাব করে পরিষ্টার হয়ে নেবেন। যৌনমিলনে শুষ্কতা এড়াতে কে-ওয়াই জেলি ব্যবহার করতে পারেন। তবে শুক্রাণু নাশক কোন ওষুধ ব্যবহার করবেন না। মাসিক বা রজঃস্রাবের সময় যৌনমিলন করবেন না। ইউটিআই প্রতিরোধের পাশাপাশি তা যৌনবাহিত রোগ এড়াতে সহায়ক হবে। যাদের মেনপজ হয়ে গিয়েছে তাদের বার বার ইউটিআই বা প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যোনিপথে এবং মূত্রনালীর মুখে এস্ট্রোজেন ক্রিম ব্যবহার করতে হতে পারে। আপনার ডাক্তার প্রতিবেদক
×