ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈশ্বরদীর পলি ক্লিনিকে প্রসূতির প্রাণহানি

প্রকাশিত: ০১:০৩, ৬ নভেম্বর ২০১৭

ঈশ্বরদীর পলি ক্লিনিকে প্রসূতির প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ রবিবার রাত ১২টায় ডাক্তারের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় আবারও ঈশ্বরদীর পলি ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমে সিজারিয়ান আশা (২০) নামের এক প্রসূতির রক্তক্ষরণে প্রাণহানি ঘটেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার মধ্য রাতে ওই ক্লিনিকে হামলা চালিয়েছে নিহত প্রসূতির স্বজনরা। পরে ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন মধ্যস্থতা করলে ভাংচুর বা বড় ধরণের ঘটনা ঘটেনি। তবে এসময় ক্লিনিকে কর্মরতরা সকলেই সটকে পড়ে। ঈশ্বরদীর পলি ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমে এ ঘটনা ঘটে। ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আসমা খান এই পলি ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমের মালিক। এখানে তিনি নিজেই সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এর আগেও একই ধরণের ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রসূতির প্রাণহানি ঘটলেও জেলা সিভিল সার্জন অফিস হতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রাজাপুরের গড়মাটি সরদার পাড়া গ্রামের কৃষক মিন্টু হোসেনের স্ত্রী আশা খাতুন এবং বড়াইগ্রামের অর্জুনপুর-শিবপুরের মকবুল শেখের মেয়ে বলে জানা গেছে। আশার বাবা মকবুল শেখ জানান, প্রসূতি আশার পেটে ব্যথা উঠলে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে আশাকে ঈশ্বরদী হাসপাতালে ডা: আসমা খানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় আসমা আলট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য বলেন। আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখার পর ডা: আসমা তাকে সিজারের জন্য তাঁর পলি ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। রোগীর অভিভাবকরা হাসপাতালে ভর্তির কথা কললে ডা: আসমা অত্যন্ত দূর্ব্যবহার করেন এবং রোগী বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। অথচ ঈশ্বরদী হাসপাতালে সিজারের আধুনিক সকল ব্যবস্থা থাকা স্বত্তেও উপায়ান্তর না পেয়ে রোগীর অসহায় আত্মীয়-স্বজনরা ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ক্লিনিকে ভর্তি করেন। বিকেল ৪টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর আশা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। অপারেশনের পর হতেই মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং আশা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি কর্মরত আয়াকে জানালে সে ইনজেকশন দেয়। রোগীর আত্মীয় রীনা বেগম জানান, ডাক্তার আসমাকে খবর দেয়া হলেও সে রোগীর কাছে না এসে নীচে প্রাকটিস করতে থাকেন। রাত আটটার দিকে এসে আসমা ১ ব্যাগ রক্ত লাগবে বলে চলে যান। রক্ত এক্সচেঞ্জ করলে এবি গ্রুপের রক্ত দেয়া যেতে পারে ক্লিনিকের লোকেরা জানান। রোগীর লোকজন সে সময় বলেন, রক্ত দেয়ার জন্য লোক বাড়ি হতে রওনা হয়েছে, আপনারা এখন দিয়ে দেন, লোক আসলে রক্ত নিয়ে নিবেন। কিন্তু তাতেও তারা রক্ত দেয়নি। রাত সাড়ে নয়টার পর রক্ত দেয়া শুরু হয়। রীনা আরো জানান, আশার অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে। এ অবস্থায় ডাক্তার আসমাকে বারবার ফোন দিয়ে ডাকা হলেও তিনি আসেনি। রীনা জানান, এই ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক কোন ডাক্তার বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বীকৃত নার্স নেই। শুধু শারমিন আক্তার রীতা ও সোমা নামে দুজন আয়া রয়েছে বলে তিনি জানান। তারাই ইনজেকশন দেয়া থেকে শুরু করে ডাক্তার ও নার্সের কাজ করে। এমনকি ওই সময় এখানে কোন অক্সিজেনও ছিল না বলে রীনা জানিয়েছেন। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে আশা রাত ১২টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। প্রসূতি মারা যাওয়ার পর আসমা আসেন বলে জানা গেছে। আশার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই তার আত্মিয়-স্বজনরা ওই ক্লিনিকে এসে হামলা চালায়। সূত্র জানায়, ঘটনার এক পর্যায়ে ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুনের মধ্যস্থতায় ৮০ হাজার টাকায় ঘটনাটি ‘মিমাংসা’ করে নিহতের লাশ ও ভূমিষ্ট শিশুকে তার স্বজনদের নিকট বুঝিয়ে দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন জানান, রোগির স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করেন। ক্লিনিকের স্টাফ সারোয়ার হোসেন জানান, আমরা জরিমানার পুরো টাকা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুনের হাতে দিয়েছি। তবে কোন অবহেলায় রোগী মারা যায়নি। চিকিৎসায় কোন গাবেলতি করা হয়নি। এ ব্যাপারে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডা: আসমা খানের খোঁজে ক্লিনিকে এবং হাসপাতালে যেয়ে তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরে দুপুর তাঁর মোবাইলে রিং দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টু এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। বারবার তাকে সাবধান করা সত্বেও একের পর এক তিনি অঘটন ঘটিয়েই চলেছেন।
×