ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গলাচিপায় টিনের ছাপড়া ঘরে জেএসসি পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ৫ নভেম্বর ২০১৭

গলাচিপায় টিনের ছাপড়া ঘরে জেএসসি পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অস্থায়ী ভাবে নির্মিত দু’টি টিনের ছাপড়া ঘরে চলছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা। বর্ষা হলে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আশঙ্কা নিয়েই খোলা মাঠে নির্মাণ করা ছাপড়া ঘরের নিচে বসে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এমন আশঙ্কায় ভূগছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অভিভাবকরাও। বিদ্যালয়ের একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেও একই ভাবে নেয়া হচ্ছে পরীক্ষা। যেখানে পরীক্ষার্থীদের মাথার ওপর যখন তখন খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। শ্রেণীকক্ষের সঙ্কটে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন। দুই কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের জন্য দু’টি পাকা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। কিন্তু কবে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চরকাজল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আটটি বিদ্যালয়ের ৫৫৩ জন পরীক্ষার্থী জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ছাত্রী ২১০ জন। বাকিরা ছাত্র। কিন্তু বিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ। তাই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে খোলা মাঠে বাঁশ ও পুরোনো টিন দিয়ে দু’টি অস্থায়ী ছাপড়া ঘর নির্মাণ করেছেন। ছাপড়া ঘরের চারপাশে টানিয়ে দেয়া হয়েছে ডেকোরেটর থেকে ভাড়ায় আনা কাপড়। ছাপড়া ঘর দু’টিতে ১ নবেম্বর বুধবার থেতে শুরু হওয়া জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি ছাপড়া ঘরে ৮০ জন ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এদিন ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা নেয়া হয়। বর্ষা হলে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও চরকাজল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জামাল হোসেন জানান, পরীক্ষার প্রথম দিনেই পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে বর্ষা হলে তারা যেন স্কুল ভবনের বারান্দায় আশ্রয় নেয়। বর্ষা থেমে গেলে আবার পরীক্ষা শুরু হবে। তিনি আরও জানান, পুরোনো টিন দিয়ে ছাপড়া ঘরের চাল দেয়া হয়েছে, যা দিয়ে কোনমতেই বর্ষা ঠেকানো যাবে না। চরআগস্তি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আঃ মোতালেব খান জানান, তার বিদ্যালয় থেকে ৬৫ জন ছাত্রছাত্রী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। যাদের সকলেই ছাপড়া ঘরের নিচে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। সামান্য রোদেই টিনের চাল গরম হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরীক্ষার্থীদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। ছাপড়া ঘরের পাশেই রয়েছে ১৯৬০ সালে নির্মিত বিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি ভবন। যা বয়সের কারণে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনটির চারটি কক্ষে ১২০ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব, চরবিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাসিরউদ্দিন নেছার জানান, পুরো ভবনটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে যে, পরীক্ষার্থীদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া, পরীক্ষার্থীদের মাথার ওপর যখন তখন খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। একই ধরণের আশঙ্কার কথা জানান পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়ানো মোঃ ফারুক খান, আলম খানসহ কয়েকজন অভিভাবক। তারা জানান, সন্তানদের কেন্দ্রে পাঠিয়ে তারা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। পরীক্ষার্থীরাও জানিয়েছে তাদের উদ্বেগের কথা। এসব বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, উপজেলায় মোট পাঁচটি জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোতে প্রায় ৫ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। এরমধ্যে স্থান সঙ্কটের কারণে কেবলমাত্র চরকাজল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেই ছাপড়া ঘর তৈরি করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। সেখানে অর্থ সঙ্কটের কারণে উপকেন্দ্র করাও সম্ভব হয় নি। তারপরেও শিক্ষকদের সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×