ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিমুল ইসলাম ও হোসাইন ইমরান

র‌্যাগ ডে-তে প্রাাণের উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৫ নভেম্বর ২০১৭

র‌্যাগ ডে-তে প্রাাণের উচ্ছ্বাস

বান্ধবী কানে কানে একটি কথা বলব...একটু এদিকে আয় না! কোন কথা নয় বরং কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে বান্ধবীকে আবীরের ছটায় রঙিন করে আনন্দে মেতে উঠল পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মারিয়া আলম। গল্পটা ৫৫ একরের নব্য প্রতিষ্ঠিত গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩য় ব্যাচের বিদায় উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছিল ২৪ ও ২৫ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী আনন্দ আয়োজনের। যার প্রথম দিন ছিল কালার ফেস্ট ও দ্বিতীয় দিন ছিল কনসার্ট। ২৪ অক্টোবর সকাল ১০ টায় শিক্ষার্থীরা মেতে উঠল রং খেলায়। নানা রঙের আবীরের ছোড়াছুড়িতে মলিন করে নিল তাদের বিদায়ী ব্যাচকে। কাঁধে হাত রেখে নাচ-গানে ও চিকা মারার আনন্দে সিনিয়র জুনিয়রের এই সম্পর্ক বলে দিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সুখ, দুঃখ ও বর্ণিল গল্পের প্রতিফলন। নিজেদের বিভাগের বড় ভাই বোনদের সময় দিয়ে বেলা ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ টি বিভাগের সকল শিক্ষার্থীরা একযোগে শুরু করল আনন্দ আয়োজন। সঙ্গে ছিল শিক্ষার্থীদের ফ্ল্যাশ মব। রাস্তার ধারে হতবাক করে শিক্ষার্থীরা রং ছুড়ে নেচে গেয়ে তৈরি করছে ফ্ল্যাশ মব। আয়োজকদের একজন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুন্না সাইদুল বলল, প্রথমবারের মতো বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়েই এই আয়োজন, যার ভিডিও উপস্থাপন করব মূল অনুষ্ঠানে। আবীরের ছটা আর কার্তিকের উজ্জ্বল রোদে পুরো ক্যাম্পাস যেন রঙিন আর বর্ণিল। পুরাতন শিক্ষার্থীদের এক যুগের উল্লাস যেন বলে দেয় ক্যাম্পাসকে আবারও ভালবাসার স্বচ্ছ প্রমাণ। ক্যাম্পাসের জয় বাংলা চত্বর, হেলি প্যাড, লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ, আবাসিক হল কোন কিছুই বাদ পড়েনি এই আনন্দ থেকে। বেলা বাড়তে বাড়তে সকলের কাদা ছোড়াছুড়ি যেন মনে করিয়ে দেয় কবিগুরুর সেই গান... আয়, আরেকটু আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সিকদার মাহবুব বলল, জীবনে প্রথমবারের মতো কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কালার ফেস্টের আনন্দ উপভোগ করলাম। সত্যিই জীবনের জয়গান গাওয়ার মতো বিশাল জায়গা একমাত্র আমাদের এই ক্যাম্পাস। কালার ফেস্টের আনন্দ থেকে বাদ পড়েনি ক্যাম্পাসের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। ক্যাম্পাসের মূল আয়োজন ছিল ২৫ অক্টোবর। ১৩ ব্যাচের বিদায়ের এই আয়োজনের নাম ছিল ‘উন্মীলিত’১৩ যার মূলমন্ত্র ছিল “উচ্ছ্বাস ও স্বচ্ছতায় সম্মিলিত আত্মা।” সেই আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে ক্যাম্পাসে এসেছিল দেশের দুই জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘এল আর বি’ ও ‘চিরকুট’। ২৫ তারিখ বেলা ৩ টায় শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নাচ, গান, কৌতুকসহ মন মাতানো নানা পরিবেশনা। মন কাড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থীদের বাঙালী পরিবেশনা। রাত ১০ টায় দেশের গান নিয়ে আনন্দ শুরু করল ব্যান্ড দল ‘চিরকুট’। ‘কানামাছি’, ‘আহা জীবন’, ‘দুনিয়া’ গানের তালে তালে আনন্দ মাতোয়ারা হাজার হাজার শ্রোতা। শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় লোকজন সবার উল্লাসে মুখরিত হতে থাকে ৫৫ একরের ক্যাম্পাস। উল্লসিত উপস্থিতির মাত্রা আরও বেড়ে গেল ‘এল আর বি’র আইয়ুব বাচ্চুর গানে গানে। ‘ সেই তুমি’, ‘এক আকাশের তারা’ সহ অনেক জনপ্রিয় গানের মুখরতায় উন্মাদ ছিল সকলে। আয়োজন শেষ হয় ক্যাম্পাসের বাসে দলবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে। এভাবেই শেষ হলো একটি র‌্যাগের গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে আরও একটি দিন যুক্ত হলো আনন্দ আর উন্মাদনায়।
×