ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াক্ফের মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করতে এগিয়ে আসুন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৫ নভেম্বর ২০১৭

ওয়াক্ফের মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করতে এগিয়ে আসুন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইসলামী আর্থিক ব্যবস্থা, যাকাত, ওয়াকফ, সাদকা, করজে হাসানার মাধ্যমে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বিশেষ করে ওয়াকফের মতো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণ সাধনে তিনি সম্পদশালীদের এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে ‘রিভাইভাল অব ওয়াকফ ফর সোসিও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা উদ্বোধনের সময় তিনি এ আহ্বান জানান। আইডিবি গ্রুপের ইসলামিক রিসার্চ এ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালায় বাংলাদেশ, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, নাইজিরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবেষক, প-িত ও বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, ইসলামিক রিসার্চ এ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. খলিফা মোহাম্মদ আলী। ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স ইউনিভার্সিটির ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. কবির হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিম। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথির ভাষণের শুরুতে স্বাধীনতা অর্জনে লাখো শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করায় আমরা গর্ববোধ করি। বক্তব্যটি মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করায় তিনি ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী ভিশনকে এগিয়ে নিতে সরকার সম্ভাবনাময় সম্পদগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ইসলামী আর্থিক ব্যবস্থায় ইসলামী ব্যাংকিং, ইসলামী মাইক্রো ফাইন্যান্স, যাকাত, ওয়াকফ, সাদকা, করজে হাসানার মতো বিষয়গুলো সমাজের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক উদ্দেশ্যকে সুন্দরভাবে সম্পৃক্ত করেছে। স্বল্প সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূর করতে তিনি সবার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। ওয়াকফের মতো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণ সাধনে তিনি সম্পদশালীদের এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মোঃ আবদুল হামিদ আরও বলেন, ওয়াকফ ব্যবস্থাটি দারিদ্র্য দূর করে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করার সরকারী উদ্যোগ এবং এসডিজি অর্জনকে সহজতর করবে। তিনি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কাজের অংশ হিসেবে এ ধরনের অধিকতর কর্মসূচী গ্রহণের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, অনেকগুলো ইসলামী ব্যাংক ক্যাশ ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা করছে, যেখানে কয়েক হাজার আমানতকারী তাদের অর্থ জমা রেখেছেন। ধনী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যাকাত ও ওয়াকফ ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মসূচী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। সভাপতির ভাষণে আরাস্তু খান বলেন, সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কর্মসূচীর সঙ্গে মিল রেখেই এ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়াকফ একটি শক্তিশালী আর্থসামাজিক কর্মসূচী, যার দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থিক ন্যায়বিচার ও সুষম বণ্টনের সক্ষমতা রয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইসলাম ধর্মমতে ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে কোন অর্থ বা সম্পদ উৎসর্গ করা হলে তাকে ওয়াকফ বলা হয়। বাংলাদেশে সরকারীভাবে ওয়াকফ প্রশাসক এসব সম্পদ দেখভাল করে। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগ ও ইসলামী ব্যাংকগুলোতেও ওয়াকফ তহবিল করা হয়েছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকসহ আটটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ধারার ব্যাংক রয়েছে। ইসলামী অর্থনীতির মূল লক্ষ্য মানবজীবনের সার্বিক কল্যাণ করা। এজন্য বিশ্বব্যাপী যাকাত, সাদকাহ, ওয়াক, করজে হাসানাসহ বিভিন্ন আর্থিক পণ্য চালু আছে। ইসলামী ব্যাংকগুলোতে ওয়াকফ খাতে ১০৪ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকেই আছে ৮০ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের ২৯ হাজার ৩৪১ গ্রাহক এ পরিমাণ টাকা ওয়াকফ খাতে দিয়েছেন। এসব অর্থ দুস্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে।
×