ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ॥ দায়িত্ব মিয়ানমারেরই

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ॥ দায়িত্ব মিয়ানমারেরই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমার সরকারকেই রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। রাখাইনে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্নে দেরির জন্য মিয়ানমার বাংলাদেশকে দায়ী করার মধ্যে শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন হেনশ। বাংলাদেশ সফররত প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, উদ্বাস্তু ও অভিবাসন ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সিমন হেনশ বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দায়দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। প্রক্রিয়া শুরুর দায় তাদের। মানুষগুলো যেন স্বেচ্ছায় ফিরতে পারে সেজন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত এলাকা দেয়ার বিষয়টি তাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, রাখাইনের এই সমস্যা একটি জটিল ও মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দুই মাসে ছয় লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে আমরা এখানে এসেছি। সামগ্রিকভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এক প্রশ্নের উত্তরে সিমন হেনশ বলেন, বিপুল মানুষের একসঙ্গে পালিয়ে আসা নিঃসন্দেহে একটি গুরুতর বিষয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে। ঢাকায় আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। শরণার্থী শিবিরগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি বেদনাদায়ক। ছয় লাখ মানুষ ভয়ানক পরিস্থিতিতে রয়েছেন। মিয়ানমারকে অবশ্যই নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারে। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বহু শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। শরণার্থীদের খাবার ও আশ্রয়ের সমস্যা রয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা অভূতপূর্ব। সেখানে অনেক সংস্থা শরণার্থীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এত মানুষকে আমরা বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। এই জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের আরও কাজ করে যেতে হবে। মিয়ানমার সরকার অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ ত্রাণ পাওয়ার জন্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে গড়িমসি করছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সিমন হেনশ মিয়ানমারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা মোটেও সত্য নয়। কেননা, ত্রাণ সহায়তা বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া হয় না। এটা আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দেয়া হয়। তারাই ত্রাণ ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তাই মিয়ানমারের অভিযোগ সঠিক নয়। সিমন হেনশের বক্তব্যের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিথার নেওয়ার্ট বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে হোয়াইট হাউস গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ওয়াশিংটনের আলোচনার মধ্যে এই বিষয়টি উপরের দিকে রয়েছে। এর আগে শুক্রবার সিমন হেনশ কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি দেখেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোর ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি স্কট বাসবি, দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি টম ভাজদা, পূর্ব-এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ডিরেক্টর প্যাট্রিসিয়া মাহোনি। রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশ বরাবরই বলে আসছে, মানবিক কারণে আপাতত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হলেও তাদের অবশ্যই মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ সমস্যার পেছনে বাংলাদেশের কোন ভূমিকা নেই, সমস্যার সৃষ্টি ও কেন্দ্রবিন্দু মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানে নিহিত। আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমার ১৯৯২ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে যুক্ত করাসহ কয়েকটি প্রস্তাব রাখা হয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবের কোন জবাব না দিয়েই গত ৩১ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেরির জন্য উল্টো বাংলাদেশকে দোষারোপ করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সুচির দফতরের মহাপরিচালক জ তাই। ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিথার নেওয়ার্ট ও ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট উপস্থিত ছিলেন।
×