ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হামলা ও ভাংচুরের পর ডুয়েট বন্ধ, হল ত্যাগের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ১ নভেম্বর ২০১৭

হামলা ও ভাংচুরের পর ডুয়েট বন্ধ, হল ত্যাগের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে ঢাকা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) সেমিস্টার পরীক্ষা পিছানোর দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিস ও গাড়িসহ ব্যাপক ভাংচুর করেছে। ছাত্ররা এসময় সড়কও অবরোধ করেছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ও হামলায় অন্তত ১০/১২জন শিক্ষক আহত হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের দাবী শিক্ষকদের মারধরে ৭ ছাত্র আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। ডুয়েট’র ছাত্র কল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গাজীপুরে ঢাকা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন বর্ষের সেমিস্টার পরীক্ষা ২ নবেম্বর হতে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এসব পরীক্ষার রেজাল্ট আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিকেলে উপাচার্যের কাছে এসব পরীক্ষা পেছানোর দাবী জানায়। শিক্ষার্থীদের দাবী প্রত্যাখাণ করে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হলে ছাত্রদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাসে আবাসিক সংকুলান না হওয়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হট্টোগোলের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করে। এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মূল গেইটে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে বাঁধা দেয় এবং পরিচয়পত্র দেখে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা গেইটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-শিমুলতলী সড়কে অবস্থান নিয়ে ওই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানালে ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের বাকবিতন্ডা হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের পর এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করতে উত্তেজিত তিন শিক্ষার্থীকে ডুয়েট’র ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের কক্ষে নিয়ে আসা হয়। এদিকে, ওই তিন শিক্ষার্থীকে কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। এসময় তারা গেইটে অবস্থানরত শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে ডুয়েট’র ছাত্র কল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান এবং নিয়াজ মোরশেদ ও মাজহারুল ইসলামসহ অন্ততঃ ১০/১২ জন শিক্ষক আহত হয়। উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের হামলার মুখে শিক্ষকরা এক পর্যায়ে গেইট ছেড়ে প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে নির্বিচারে ভাংচুর করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষ ও গাড়িসহ ৭টি গাড়ি, ৪টি মটরসাইকেল, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ভবন ও কক্ষের দরজা জানালার কাঁচ এবং আসবাবপত্র ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ছাত্রনেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবীতে বুধবার সকাল হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখে। এব্যাপারে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নাসির উদ্দিন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষা পেছানোর দাবী জানালে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এঘটনায় রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক ক্যাম্পাস সংলগ্ন ছাত্রদের মেসে হানা দিয়ে কয়েক শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এতে সাত শিক্ষার্থী আহত হয়। এছাড়াও শিক্ষকরা রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে বাধা দেয়। শিক্ষকরা বিশ্বদালয়ের গেইট এলাকা থেকে তিন শিক্ষার্থীকে ধরে ডুয়েট’র ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে শিক্ষকরা ওই শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এসময় কোন শিক্ষকের উপর হামলা করে নি। তবে ঘটনার সময় হুড়োহুড়িতে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আহত শিক্ষার্থীরা হলো- সিএসই বিভাগের ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের বাদশাহ ও মামুন, একই বিভাগের ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের রুহুল আমিন, ইইই বিভাগের ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের জহিরুল, একই বিভাগের ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের রাজু, আর্কিটেকচার বিভাগের ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের রাশেদ এবং আইপিই বিভাগের ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের মিজান। ডুয়েট’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন জানান, বিশ্ববিদালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার একাডেমিক কাউন্সিলের ৫৭ তম (জরুরী) সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাত্রদের বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় এবং ছাত্রীদের বৃহষ্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ শুরু করেছে। পরিস্থিতি মেকাবেলা ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
×