ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে ইজিবাইক দুর্ঘটনায় মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

জামালপুরে ইজিবাইক দুর্ঘটনায় মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ ইজিবাইকের মোটরের সাথে উড়না পেঁচিয়ে জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নবম শ্রেণির প্রভাতী শাখার বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী মায়িদা আফরোজ অন্তু দীর্ঘ এক মাস ২০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার মারা গেছে। জানা গেছে, মেধাবী ছাত্রী মায়িদার গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে। তার বাবা জুলফিকার আলী স্থানীয় রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদে কর্মরত আছেন। তার দুই ছেলে আর একমাত্র মেয়ে ছিল মায়িদা। মায়িদার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মায়িদা ঈদুল আজহার ছুটিতে ছিল। তখন সে গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদরের শরিফপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে তার পরিবারের সাথে ছিল। ছুটি শেষে বিদ্যালয় খোলার কথা ছিল ১০ সেপ্টেম্বর। এর আগের দিন ৯ সেপ্টেম্বর সকালে মায়িদা তার মা সুলতানা রাজিয়া আর সহোদর ভাইয়ের সাথে বাড়ি থেকে ইজিবাইকে জামালপুর শহরে আসছিল। পথে বানারের পাড় সেতু পার হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার আসনের নিচে ইজিবাইকের মোটরের সাথে উড়নার প্যাঁচ লেগে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই উড়না গলা-ঘাড়ে পেঁচিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা কবলিত হয় সে। স্থানীয় লোকজন ও স্বজনেরা মায়িদাকে প্রথমে নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পনের দিন পর মায়িদা মারা যায়। মায়িদার শ্রেণিশিক্ষক সহকারী শিক্ষক আবিদুর রেজা জানান, তিনি সোমবার সকালে মায়িদার জানাজা নামাজে অংশ নেন। স্থানীয় মুকুল বাজারে বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন। শিক্ষক আবিদুর রেজা আরও জানান, ইজিবাইকে উড়না পেঁচিয়ে মায়িদার ঘাড়ের স্পাইনাল কড ভেঙে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ অক্টোবর তার ঘাড়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছিলেন চারদিনের মধ্যে কোনো সমস্যা না হলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের তিনদিনের মধ্যে মায়িদা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে ১৫ অক্টোবর ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কক্ষে নেওয়া হয়। এর পনেরদিন পর মায়িদা ২৯ অক্টোবর মারা যায়। তিনি আরও জানান, মায়িদা খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। গত বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় সবগুলো বিষয়ে জিপিএ-এ প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাস করে। সেজন্য তাকে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। নবম শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষায়ও মায়িদা ভালো ফলাফল করেছিল। এদিকে সোমবার দুপুরে মায়িদার বিদ্যালয় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের মাঝে গভীর শোক লক্ষ্য করা গেছে। বিদ্যালয়ের সবাই মর্মাহত। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেধাবী ছাত্রী মায়িদার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রীরা সবাই এই মোনাজাতে অংশ নেন। মেয়ের অকালমৃত্যুতে শোকাহত বাবা জুলফিকার আলী এ প্রতিনিধিকে বলেন, আপনি সংবাদ লিখে কি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। ইজিবাইকে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন? আপনারা তাদের বিরুদ্ধে লেখেন না কেন? বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া বলেন, মেধাবী ছাত্রী মায়িদার মুত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। এভাবে কারও মুত্যু কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। তিনি ইজিবাইকে উড়না বা কাপড় পেঁচিয়ে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন ও ত্রুটি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। তিনি আরও জানান, আজকে মায়িদার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাতের পর ইজিবাইকে উঠে সতর্ক থাকার জন্য ছাত্রীদের ধারণা দেওয়া হয়েছে। মায়িদার এভাবে অকাল মৃত্যুতে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে একটি শোক-ব্যানারও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ এম তাহের বলেছেন, ইজিবাইকে উড়না বা কাপড় পেঁচিয়ে বেশির ভাগই নারীরা দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে থাকে। গলায় উড়না বা কাপড়ের প্যাঁচ লেগে সাধারণত দেহের মেরুদন্ডের ঘাড়ে অংশে চোট ও চাপ লেগে ভেঙে যায়। ঘাড়ের রগও ছিড়ে যায়। এতে করে রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। কেউ বেঁচে থাকলেও আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করে বেঁচে থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, ইজিবাইকে এ ধরনের দুর্ঘটনা দিনে দিনে বাড়ছেই। সংবাদপত্রে এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ে। ইজিবাইকের ত্রুটি চিহ্নিত করে এবং এর চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
×