ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারী খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই’

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

‘এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারী খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারী খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বাণিজ্যবিষয়ক নীতিমালা সংস্কার আবশ্যক বলে মতপ্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডিসিসিআই ও ইউএনডিপি-বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘ইমপ্যাক্ট বাংলাদেশ ফোরাম’র অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, অর্থনীতির সঠিক বিকাশের জন্য সব শিল্প খাতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টিতে সরকার যথেষ্ট সচেতন রয়েছে। ফোরামে ‘প্রবৃদ্ধি ও এসডিজির জন্য অবকাঠামো নির্মাণ’, ‘কনভেনিং ফর ইমপ্যাক্ট : ব্যবসায়িক নেতৃত্ব এবং এসডিজি পার্টনারশীপ’, ‘ক্যাটালাইজিং ইমপ্যাক্ট : তথ্য ও নীতিমালা’ এবং ‘এসডিজিতে পরিবেশবান্ধব জুট পাল্প পেপারের প্রভাব’ বিষয়ক চারটি প্যারালাল সেশন হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বিশেষ অতিথি ছিলেন। এম এ মান্নান বলেন, অর্থনীতির সঠিক বিকাশের জন্য সব শিল্প খাতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টিতে সরকার যথেষ্ট সচেতন রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে বেশ উন্নতি করেছে এবং আমাদের বেসরকারী খাত সব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের পক্ষ হতে এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে নানাবিধ আইন প্রণয়ন কিংবা বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রায়ই বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে ইউএনডিপিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আরও সচেতন হতে হবে। যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় দেশ আরও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বাণিজ্য নীতিমালাসমূহে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় আমাদের বেসরকারী খাত কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নতি লাভ করতে পারেনি। বাংলাদেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য ইউএনডিপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের উদ্যমী বেসরকারী খাতের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি শক্তিশালী অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৪.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপির প্রবদ্ধি ৭.৪০% হওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকার দেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন হিসেবে পদ্মা সেতু নির্মাণ, পায়রা বন্দর নির্মাণ, রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণসহ বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে এ প্রকল্পগুলো শেষ হওয়ার মাধ্যমে দেশে অবকাঠামো খাতের প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হবে। ইউএনডিপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর কাওকো ইউকোসোকা বলেন, এসডিজিতে বাংলাদেশে ১৩ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান হবে। বেসরকারী খাত কর্তৃক জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্যপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ডিসিসিআই ও ইউএনডিপি একযোগে কাজ করবে। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে টেকসইযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী হতে হবে, পাশাপাশি জিডিপিতে বিনিয়োগের অবদানকে ৪০%-এ উন্নীত করতে হবে এবং ২০৩০ সালের শেষ নাগাদ এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, শিল্প খাতে জ্বালানি নিশ্চিতকরণ, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, পরিবেশ ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের প্রতি জোরারোপের আহ্বান জানান। বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদের সঞ্চালনায় ‘প্রবৃদ্ধি ও এসডিজির জন্য অবকাঠামো নির্মাণ (আঞ্চলিক যোগাযোগ)’ বিষয়ক প্যারালাল সেশনে পিপিপি কার্যালয়ের সিইও সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, বাংলাদেশ ফ্রাইট ফরওয়ার্ডস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আনাম, কে-লাইন, জাপানের জেনারেল ম্যানেজার সাতুষি কানামোরি অংশ নেন। এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবিরের সঞ্চালনায় ‘প্রবৃদ্ধি ও এসডিজির জন্য অবকাঠামো নির্মাণ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টার)’ শীর্ষক সেশনে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. এম মাসরুর রিয়াজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ডিএমডি এ এস এম মাইনউদ্দিন মোনেম এবং ইউং কনসালন্টেস, ঢাকার সিইও জাকির হোসেন অংশগ্রহণ করেন। মাইনউদ্দিন মোনেম বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য জমি প্রাপ্তি ও অধিগ্রহণ বিষয়টি প্রচুর সময়সাপেক্ষ বিষয় এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে সকল ধরনের সেবা প্রাপ্তির অভাব ও রেগুলেটরি সমস্যার কারণে আমাদের উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় ‘কনভেনিং ফর ইমপ্যাক্ট : ব্যবসায়িক নেতৃত্ব এবং এসডিজি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক সেশনটি সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ডিএমডি হুমায়রা আজম, গ্রিন ডেলটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইও ফারজানা চৌধুরী, এইচএসবিসির সিইও ফ্রানসোইস ডি মারিকোর্ট এবং রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনের জেনারেল ম্যানেজার ক্রিস্টফ ভোজিল অংশগ্রহণ করেন।
×