ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে খালেদা জিয়ার চট্টগ্রাম যাত্রা;###;পথে পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের শোডাউন;###;চট্টগ্রাম থেকে আজ কক্সবাজার যাচ্ছেন

মিডিয়ার গাড়িতে হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

মিডিয়ার গাড়িতে হামলা

শরীফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম থেকে ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার সময় ব্যাপক শো-ডাউন করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীসহ জড়ো হয়ে খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন স্লোগানসহকারে স্বাগত জানান। এ সময় খালেদা জিয়াও হাত নেড়ে তাদের পাল্টা জবাব দেন। এদিকে বিকেল ৫টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়ি ফেনী সার্কিট হাউসে পৌঁঁছলে অনতি দূরে বহরে থাকা কয়েকটি গণমাধ্যমের গাড়িতে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ৮ থেকে ১০টি গাড়ি ভাংচুর করে। এই হামলার জন্য সরকারী দলকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে। তিনি বলেন, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সফরের সময় রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ ও নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই সফরকে নস্যাৎ করার জন্য সরকারী দলের লোকেরা হামলা চালায়। তবে এই সফর অব্যাহত থাকবে। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফেনীর নিমচর এলাকায় হামলাকারীদের ছোড়া ঢিলের আঘাতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামছুদ্দিন দিদারের গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে যায়। ফেনী সার্কিট হাউস থেকে সন্ধ্যা ৭টায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। চট্টগ্রাম পৌঁছার আগে বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নির্বিঘেœ চলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় পুলিশ সড়কে চলাচলকারী অন্যান্য যানবাহনগুলোকে সরিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়ার বহরের গাড়িগুলোকে সামনে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। রাতে সার্কিট হাউসে পৌঁছে খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তিনি সাংগঠনিক বিষয়েও কথা বলেন বলে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খালেদা জিয়া ফেনী সার্কিট হাউসে পৌঁছার পর গণমাধ্যম কর্মীদের বহনকারী গাড়িগুলো লালপুরের সেভেন স্টার হোটেলের সামনে যেতে থাকে। এ সময় কে বা কারা সেখানে এসে গণমাধ্যমের গাড়িগুলোতে ভাংচুর চালায়। এ অবস্থা দেখে পেছনে থাকা গণমাধ্যমের অন্য গাড়িগুলো নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়। তবে এরপরও আশপাশের এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে আরও কয়েকটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে। এ কারণে লালপুরের সেভেন স্টার হোটেলে সাংবাদিকদের খাবার ব্যবস্থা থাকলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে কোন সাংবাদিক ওই হোটেলে প্রবেশ করেননি। এর আগে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে থাকা দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর গাড়িতে হামলা হয়েছে বলে তিনি নিজেই অভিযোগ করেন। বিএনপি অভিযোগ করেছে খালেদা জিয়ার সফর উপলক্ষে ফেনীতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ শনিবার দিনভর শো-ডাউন ও ভাংচুর করেছে। খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা লোকজনকে বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে। দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাঁড়াতে দেয়নি বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। সকাল থেকে ফেনী-নোয়াখালী সড়ক, ফেনী বসুরহাট সড়ক, পরশুরাম বাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় ফেনী নোয়াখালীর মধ্যে যান চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনী সার্কিট হাউসে অভিযোগ করেছেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় যুবলীগ ছাত্রলীগের দুই শতাধিক কর্মী ফেনী-নোয়াখালী সড়কের বেকের বাজার নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ সময় ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীরা নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা দিতে আসার সময় লোকজনকে পথেই আটক করে রাখে। তারা নোয়াখালীর সেবার হাট ও ফেনী বসুরহাট সড়কের দুধমুখা বাজারে গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। এ সময় তারা বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হেনস্তা করে। যুবলীগ ছাত্রলীগ জঙ্গী মিছিল করে ত্রাসের সৃষ্টি করে। পরশুরাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু তালেব জানান, পরশুরাম থানার ওসি আবুল কাসেম চৌধুরী তাকে টেলিফোনে ফেনীতে যানবাহন কিংবা অন্য কোনভাবে বিএনপি কর্মীদের নিয়ে যেতে নিষেধ করে দেয়। এদিকে বিকেল ৫টায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়িবহর সার্কিট হাউসে পৌঁছলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জেলা সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন মিস্টার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক রেহানা আখতার রানুসহ জেলা নেতৃবৃন্দ তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ দলের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া ফেনী সার্কিট হাউসে প্রায় দুই ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেন। শনিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের উদ্দেশে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে সড়কপথে রওনা দেন। রাতে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন। আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সাকির্ট হাউস থেকে রওনা দিয়ে তিনি কক্সবাজার যাবেন এবং কক্সবাজার সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করবেন। সোমবার তিনি উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবেন। গুলশানের বাসা থেকে যাত্রাপথে রাজধানীর বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, কাকরাইল, নয়া পল্টন, মতিঝিল, হাটখোলা, যাত্রাবাড়ী, কাঁচপুর ব্রিজ মোড়, সোনারগাঁও মোড়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, ভবের চর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, নিমসার, চান্দিনা, ময়নামতি সেনানিবাস মোড়, কুমিল্লার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রামের মিঞাবাজার, ফেনীর মহিপালসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতাকর্মী মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। খসররুজ্জামান খসরু, তৈমুর আলম খন্দকার, মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দীপু, নজরুল ইসলাম আজাদ, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল হাই, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, কুমিল্লার দাউকান্দির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. খন্দকার মারুফ হোসেন, হোমনায় অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, দেবীদ্বারে আবদুল আউয়াল খান, ব্রাহ্মণপাড়ায় সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, আলেখার চরে হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসিন, বিশ্বরোডে কুমিল্লার সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, আবুল কালাম, মোবাশ্বের আলম ভুঁইয়া, মোরতাজুল করীম বাদরু, চৌদ্দগ্রামের মিঞাবাজারে কামরুল হুদা, ফেনী সদরে রেহানা আখতার রানু, ভিপি জয়নাল তাদের সমর্থকদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে শুভেচ্ছা জানান। কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে বিদেশে অবস্থান নেয়া সাবেক সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা তার ছবি নিয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। ফলে ওইসব স্থানে ব্যাপক যানজটেরও সৃষ্টি হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কাঁচপুর ব্রিজের আগেই ব্যাপক যানজটের মুখ পড়ে। প্রায় ঘণ্টাখানেক তার গাড়ি বসেছিল। এ সময়ে তার নিরাপত্তা কর্মীরা গাড়িটি ঘিরে রাখে। নেতাকর্মীদের স্রোত ডিঙ্গিয়ে সামনে এগুতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়ি ধীর গতিতে চলার কারণে ফেনীতে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে মোহাম্মদ আলী বাাজারসংলগ্ন দেবীপুর স্থানে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাত্রা কালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর ফেনীর মোহাম্মদ আলীতে প্রবেশ করলে তাঁর গাড়ি বহরে অতর্কিত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় চ্যানেল আই,৭১ টেলিভিশন, ডিবিসি ও বৈশাখী টেলিভিশনের গাড়িসহ অন্তত ৫টি গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় ৭১ টেলিভিশনের সাংবাদিক শফিক আহাম্মেদ ও বৈশাখী টেলিভিশনের গোলাম মোর্শেদসহ অন্তত ৮ জন মৃদু আহত হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া তাৎক্ষণিক এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গাড়ি বহরে হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। কিন্তু বিএনপির এ গণজোয়ারকে থামাতে পারেনি। আমরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে ত্রান বিতরণ করে ঠিক ফিরে আসব। উল্লেখ্য, ২৮ অক্টোবর শনিবার কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গ ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। যাত্রা বিরতিকালে ফেনী সার্কিট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করবেন সেখানে। পরে ৩০ অক্টোবার ফেরার পথে আবারও তাঁর ফেনীতে যাত্রা বিরতির কথা রয়েছে। খালেদা জিয়ার নিন্দা ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ফেনীতে গণমাধ্যমের গাড়িবহরে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি হামলায় আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং সেই সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন।
×