ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

জাপানে নির্বাচন পরিবর্তন আসন্ন সংবিধানে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

জাপানে নির্বাচন পরিবর্তন আসন্ন সংবিধানে

শিনজো এ্যাবে। জাপানের অর্থনীতিতে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। জাপানীদের ভাষায় এ্যাবেনোমিক্স। এ্যাবেনোমিক্সের সাফল্যে তার বিজয় প্রত্যাশিত ছিল। তবে জাপানের রাজনীতির সমীকরণটা এত সহজ নয়। তাবড় তাবড় হোমরা চোমড়ারা হোঁচট খেয়েছেন। নির্বাচিত হয়েও পার করতে পারেননি পূর্ণ মেয়াদ। দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে গদি ছাড়তে হয়েছে অনেককে। তাই জাপানের রাজনীতির হিসাবটা একটু জটিল। এবারের বিজয়টি এ্যাবের ক্ষমতাকে সংহত করলেও তার সামনে চ্যালেঞ্জ বহুমাত্রিক। ভোটগণনা শুরুর পর থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল নিম্নসভায় ৪৬৫টি আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে আসছে এ্যারের নেতৃত্বে এলডিপি জোট। এ্যাবের সমর্থনের জোয়ারে ভেসে যাবেন বিরোধীরা। এই বিজয় তাকে এগিয়ে রাখবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। পাশাপাশি দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদে। এ বিজয় তাকে আরও সাহায্য করবে তার দীর্ঘদিনের একটি উদ্দেশ্য পূরণে। তা হচ্ছে সংবিধানের একটি সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন। জাপানের সংবিধানের আর্টিকেল ৯-এ দেশরক্ষা বাহিনী সংক্রান্ত ধারাটির পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। উত্তর কোরিয়ার অব্যাহত হুমকির মুখে ‘শান্তিকামী’ অবস্থান বজায় রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। এই পরিবর্তনের জন্য নিম্নসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আবশ্যক। এ্যাবের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত। এ্যাবের এবারের পথ গোলাপ ছাওয়া ছিল না। নির্বাচন-পূর্ব জরিপে এ্যাবের সরকার নিয়ে জনগণের হতাশার চিত্রটি ছিল পরিষ্কার। জাতি বিভক্ত ছিল অ্যাটিকল-৯-এর প্রস্তাবিত পরিবর্তন ঘিরে। লিবারেলদের পরিচালিত গত সপ্তাহের জরিপের ফল বলছে শতকরা ৫১ জন এ্যাবে বিরোধী আর তার পক্ষে ৩১ জন। নির্বাচনী ফলাফল জরিপের বিপরীতচিত্র দেখানোর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ভোটারদের হাতে ভাল বিকল্প না থাকা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক টোবিয়াস হ্যারিসের মতে বেশিরভাগ আসনে বিরোধীদের একাধিক প্রার্থীও এলডিপিকে বিজয়ী হতে সাহায্য করছে। রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক নাওটো নোনাকাও এ বিষয়ে একমত। এদিকে এলডিপি থেকে বেড়িয়ে যাওয়া টোকিওর প্রথম নারী গবর্নর ইরিকো কাইকের ভূমিকাও প্রকারান্তরে এলডিপির পক্ষেই গেছে। নোনাকা বলেন, প্রতিটি আসনে এলডিপি ও তাদের শরিক কুমেতোর ছিল একজন প্রার্থী। বিরোধীরা ছিলেন বিভক্ত। যার সুবিধা শেষ পর্যন্ত পেয়েছে ক্ষমতাসীনরা। নোনাকা আরও বলেন, জাপানের অর্থনীতি এখন তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। কর্মহীনদের সংখ্যা এখন সর্বনিম্ন। অনেকেই এ্যাবেনোমিক্সের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ একথা বলার উপায় নেই। অপরদিকে বিরোধী দলগুলোকে নতুন করে তাদের ভূমিকার মূল্যায়ন করতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে ও প্রচারাভিযান চলাকালীন বিরোধীরা এ্যাবে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কোন অর্থনৈতিক বা সামাজিক কর্মসূচী প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা সাধারণত চাকরি, অর্থনীতির মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেন। বিরোধীরা প্রচারাভিযানে যতটা এ্যাবে বিরোধিতা করেছেন ততটা স্পষ্ট কোন দিকনির্দেশনা উপস্থাপনে ব্যর্থ ভোটারদের সামনে। আবার এও সত্যি বিরোধীদের সমর্থন কমে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে এ্যাবের সবগুলো উদ্যোগ জনগণ সমর্থন করছে। অ্যাশাই পরিচালিত জরিপ বলছে আর্টিকেল ৯ সম্পর্কিত এ্যাবের প্রস্তাব সমর্থন করছে ৩৭% যেখানে বিরোধিতা করছে ৪০% ভোটার। ফলাফল বলছে এই ইস্যুতে জাতির বিভক্তি গভীর। নোনাকা বলেন, এই ইস্যুতে এ্যাবের সমর্থক বিরোধী দল ‘কিবো নো টেন’ নির্বাচনী প্রচারে তাদের গতি হারিয়েছে। আর জরিপ মিথ্যে প্রমাণ করে সিডিপি উঠে আসছে মূল বিরোধী দলের ভূমিকায়। প্রসঙ্গত সিডিপি এ্যাবে প্রস্তাবিত সংশোধনীর কট্টর বিরোধী। নোনাকো আরও বলেন। ক্ষমতাসীনদের সংবিধান সংশোধনীর ব্যাপারে জনমত বিবেচনায় নিতে হবে। অর্ধেকের বেশি ভোটারের ধারণা এখনও আর্টিকেল ৯ এ পরিবর্তন করার সময় হয়নি। সিডিপি যদি নির্বাচনে বৃহত্তম বিরোধী দলের স্থান দখল করে তবে এ্যাবেকে সংবিধান সংশোধন করতে হোঁচট খেতে হবে। ক্ষমতাসীনরা পূর্বেই জানিয়েছে সংবিধান সংশোধন বিষয়ে তার বিরোধীদের সম্মতি নিয়েই এগিয়ে যাবেন। ইতোপূর্বে ২০১২ তে এলডিপি প্রস্তাবিত সংশোধনী কেবল সম্মিলিত আত্মরক্ষার অধিকার নয় জাপানের মার্কিন জোটের সঙ্গে সামরিক অভিযানে যোগদানের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু এ বছরের মে’তে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে কেবল রক্ষী বাহিনীর আইনগত অবস্থান পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এ্যাবের মতে এতে তেমন কোন মৌলিক পরিবর্তন হবে না সংবিধানের মূলনীতির। বছর ধরেই জরিপ জানাচ্ছিল বেশিরভাগ জনগণ বৈধ এসডিএফ (সেলফ ডিফেন্স ফোর্স) গড়ে তোলার পক্ষে যদিও আর্টিকেল ৯ বলছে ‘ভূমি, সমুদ্র এবং আকাশ পথে কোন সৈন্য বাহিনী নয় এবং যুদ্ধে দক্ষতা অর্জনের কোন প্রচেষ্টা বৈধ বিবেচিত হবে না।’ তবে এ্যাবে এসডিএফের ওপর জনআস্থা বিবেচনায় তার সংশোধনী উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন। এ্যাবে জানেন আর্টিকেল পরিবর্তনের রেফারেন্ডমে অন্তত অর্ধেকের বেশি ভোটারের সমর্থন প্রয়োজন। জরিপ বলছে অন্তত অর্ধেক ভোটার এই পরিবর্তন বিরোধী। কারণ তাদের ধারণা বিষয়টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর জাপানী কূটনীতির মৌলনীতি বিরোধী। সমালোচক, ঔপন্যাসিক হিরুকি আজুমা বলেন, ‘এসডিএফকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ যুদ্ধ পরবর্তী জাপানের ইতিহাস অস্বীকার করা বলে আমি মনে করি না। তবে আপাতদৃষ্টিতে প্রস্তাবটিকে যতই নিরীহ মনে হোক তা জাপানের জন্য ভবিষ্যতে মঙ্গল বয়ে আনবে এটি মানতেও আমি রাজি নই।’ এখন অপেক্ষা শিনজো এ্যাবের পরবর্তী পদক্ষেপের।
×