ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের পাশে আছে জর্দান ॥ রানী রানিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের পাশে আছে জর্দান ॥ রানী রানিয়া

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে রাখাইনে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতনের যে বর্ণনা শুনতে পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে এই ঘটনা ‘আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও’ হার মানিয়েছে। নিজ দেশে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অমানবিক। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিশ্ববাসীর উচিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো। জর্দান নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে রয়েছে এটি জানাতে আমি এখানে এসেছি। রাখাইনে সে দেশের সেনাদের চালানো পাশবিকতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে বক্তব্য দিতে গিয়ে জর্দানের রানী রানিয়া আল আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, কক্সবাজারের এ এলাকায় এখন স্থানীয়দের চেয়ে আশ্রিত লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ। নিজেদের নানা দিকে ক্ষতির পরও নির্যাতিত রোহিঙ্গদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এতে বোঝা যায়, যা বিশ্ব দরবারে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তিনি নিপীড়িত মানবতা রক্ষায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আশ্রিতদের অধিকাংশই নারী-শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের উচিত এদের বিশেষ যতœ নেয়া। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নিরলস কাজ চালাতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কর্মকা- পরিদর্শন করতে তার ৪ ঘণ্টার এই সফরে বেলা ১১টার দিকে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির বোর্ড সদস্য রানী রানিয়া আল আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল জর্দানের রাজধানী আম্মান থেকে সরাসরি বেলা ১১টা ৯ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। এরপর তার গাড়িবহর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দিয়ে বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে ক্যাম্পে পৌঁছে। সোমবার বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে জর্দানের রানী উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের অবস্থা দেখেন। সেখানে জাতিসংঘের একাধিক সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, রোহিঙ্গা বস্তি ও স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে খেলা করে তাদের আনন্দ দেন। এরপর তিনি ১২টা ৫৫ মিনিটে ক্যাম্পে তৈরি মঞ্চে উঠে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য শেষে মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে উঠে ১টা ১৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজারের দিকে রওনা হয় তার গাড়িবহর। তার আগমন উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করে প্রশাসন। কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, জর্দানের রানীর কক্সবাজার আগমন উপলক্ষে সর্বেচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। জর্দানের রানী রানিয়া আবদুল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমটিরি (আইআরসি) একজন বোর্ড সদস্য। একই সঙ্গে তিনি জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোর পরার্মশক। রানী রানিয়া আল আব্দুল্লাহ কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছে রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ইউএনএইচসিআর পরিচালনাধীন রোহিঙ্গা শিশুদের স্কুল পরিদর্শনের সময় ছোট ছোট শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংকালে বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যে মানবিকতা দেখিয়েছে, তার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জর্দান সরকার ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে। জর্দান সরকার মিয়ানমারের এমন হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানায়। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেটা হয়েছে সেটা জাতিগত নিধন। এসময় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামানসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার পরিচালকবৃন্দ। উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা অভিযান শুরুর পর ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের দুরবস্থা দেখতে এর আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের স্ত্রী এমিনে এরদোগান।
×