ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

বিপ্লবের একশ’ বছরে রবীন্দ্রনাথের রাশিয়ার চিঠি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

বিপ্লবের একশ’ বছরে রবীন্দ্রনাথের রাশিয়ার চিঠি

১৯১৭ সালের বলশেভিক পার্টির বিপ্লবের পর সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার নবঅভ্যুত্থান বিশ্ব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী কাল পর্ব। রাশিয়ার জার সরকারের অসহ্য শাসন-শোষণের সীমাহীন মাত্রায় সাধারণ জনগোষ্ঠীর যে বিক্ষোভ, বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে তার ঐতিহাসিক নেতৃত্বে ছিলেন লেনিন। সোভিয়েত রাশিয়ার বিপ্লব অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার আগেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সহিংস উন্মত্ততা যা প্রতিটি দেশের জন্য ছিল এক সর্বগ্রাসী মহাসঙ্কট। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রতিকূল আগ্রাসন ১৯১৪ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী যে সংঘাতময় অরাজক অবস্থার তৈরি করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা অত সহজ ব্যাপার ছিল না। এক দেশের প্রতি অন্য দেশের সশস্ত্র আক্রমণের সেই অনভিপ্রেত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সোভিয়েত রাশিয়ার ভূমিকা ছিল একেবারে ভিন্নমাত্রার। ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধের উন্মত্ততায় লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ১৯১৭ সালের ৭ নবেম্বর লেনিন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার অভ্যুত্থান ঘটান। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ঐতিহাসিক উপাদান ভেতর থেকে বিকাশ লাভ না করায় জার সরকার প্রবর্তিত আর্থ-সামাজিক অবস্থার পুরোপুরি রদবদল করা সম্ভব হয়নি। বরং যুদ্ধপূর্ববর্তী অবস্থার তুলনায় নতুন সোভিয়েত রাশিয়ার আর্থ-সামাজিক চেহারার অসঙ্গতি দৃশ্যমান হতে থাকে। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক ধনবাদী দেশ সোভিয়েত রাশিয়ার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় যা পুরো পরিস্থিতিকে বেসামাল অবস্থায় নিয়ে যায়। ফলে প্রায় ৩ বছর রাশিয়ায় চলে গৃহযুদ্ধের মতো অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ। ১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বন্ধ হলেও তার রেশ চলতে থাকে পরবর্তী দুই বছর ধরে। ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যুর পর স্ট্যালিন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার হাল ধরেন। ২ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯২৬ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার অস্থিতিশীল আর বিপন্ন সমাজ কাঠামো বলশেভিক পার্টির আদর্শিক পরিক্রমায় যা মার্কসীয় অর্থনীতিকে অনুসরণ করে এগুচ্ছিল তা অনেকটাই স্থিতি অবস্থায় পৌঁছে। এর মাত্র ৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৩০ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসেন রাশিয়া ভ্রমণে। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার বিদ্যমান ব্যবস্থা কবিকে কতখানি মুগ্ধ আর বিস্মিত করেছিল তার যথার্থ স্বাক্ষর ‘রাশিয়ার চিঠি।’ হিসাব মতে ১৩ বছর হলেও যুদ্ধোত্তর এবং বিপ্লবোত্তর রাশিয়াকে তার প্রত্যাশিত আর আকাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছাতে আরও কয়েক বছর লেগেছিল। তার পরেও নিজ চোখে দেখার বাস্তব অভিজ্ঞতায় রবীন্দ্রনাথ যে রাশিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন সেখান থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি কিভাবে অত তাড়াতাড়ি দেশটি সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর একটি বিশেষ অবস্থানে নিজেকে অধিষ্ঠিত করে। পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করা বিশ্বকবির মনে হয়েছিল রাশিয়া একেবারে অন্য ধাঁচের। সবার থেকে আলাদা। মূল প্রভেদ বৈষম্যহীন সমাজে সবমানুষকে তার যোগ্যতা এবং অধিকারের মাপকাঠিতে একটি সমান অবস্থানে নিয়ে আসা। চিঠির শুরুতেই উল্লেখ থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ অসহায়, নির্বিত্ত, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের করুণ আর্তি। যা প্রতিটি দেশের সাধারণ মানুষের সহজ এবং স্বাভাবিক চিত্র। আর এখানেই বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার সামাজিক সমতার ভিত্তিতে সাধারণ জনগণের বৈষয়িক এবং অবস্থানগত পর্যায় তার মর্মমূলে যে সাম্যের বাণী সেটাই তাকে নিয়ে যায় এক বিশেষ মুগ্ধতার জায়গায়। মানুষের প্রতি মানুষের সম্মানবোধ, অধিকার চেতনা, মানবিকতা সব মিলিয়ে একেবারে মূল শেকড় থেকে রাশিয়া তার জনগণের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে সমতার ভিত্তিতে। মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার মতো অধিকারকে সর্বোতভাবে বজায় রেখে আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকেও সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিস্মিত আর বিমোহিত চিত্তে সোভিয়েত ইউনিয়নকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছে শিক্ষাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান মাধ্যম যা সর্বমানুষের মধ্যে প্রচলন করতে পেরে মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবধান ঘোচানোর শক্তি অর্জন করা হয়েছে। এ শিক্ষা শুধু অক্ষরজ্ঞান কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক নয় বরং প্রায়োগিক শিক্ষা ব্যবস্থা যা প্রতিদিনের জীবন নির্বাহের চালিকাশক্তি। তাকেও আয়ত্তে আনতে সচেষ্ট হয়েছে সাধারণ জনগণ। জাতিকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে দেয়। কৃষি অর্থনীতির শুধু আধুনিকীকরণই নয় ভূমিতে সমষ্টিক ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিক মুনাফার চাইতে বেশি গুরুত্ব পায়। প্রতিটি মানুষকে তার যোগ্যতার মাপকাঠিতে উপার্জনক্ষম করে বিনোদনের মাত্রায়ও তাদের সম্পৃক্ত করার যে উদ্যোগ আর আয়োজন তা কবিকে শুধু বিমোহিতই করেনি বরং তাদের নতুন অভিযাত্রায় সহযাত্রী হতেও নিজ দেশের পিছিয়ে পড়া জনগণকে উৎসাহিত করেছেন। সব শ্রেণীর মানুষ মিলে মিশে একাত্ম হয়ে যে চিত্তের জাগরণ এবং আত্মমর্যাদার আনন্দে বিভোর তাকেও কবি নানাভাবে অভিনন্দন জানান। আর এই শ্রেণী সমতাকে তিনি ভারতবর্ষ তো নয়ই ইংল্যান্ডের শ্রেণী বিভক্ত সমাজের সঙ্গেও এর আকাশ-পাতাল ফারাক বলে উল্লেখ করেন। কবি শ্রীনিকেতনে যা করতে চেয়েছেন রাশিয়াজুড়ে তাই হয়েছে। যদিও তিনি তা করতে পারেননি। এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থাও এত আধুনিক এবং সমতাভিত্তিক যার সঙ্গে আমাদের দেশকে তুলনা করলে সত্যিই চোখে পানি এসে যায়। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেও নাকি এরা আমাদের চেয়ে পশ্চাদগামী ছিল। বিজ্ঞানের সর্বশেষ অর্জনকে তারা প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গ করে যুগের সঙ্গে যেভাবে তাল মিলিয়েছে পাশাপাশি দেশ ও জাতির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতও নিরন্তর এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে দূরদর্শী এবং সমাজ সচেতন রবীন্দ্রনাথের অতি প্রাসঙ্গিক ভবিষ্যদ্বাণীও ছিল। সরাসরি তার বক্তব্য তুলে ধরছি ‘এর মধ্যে যে গলদ কিছুই নেই তা বলিনে; গুরুতর গলদ আছে। সে জন্য এদের একদিন বিপদ ঘটবে। সংক্ষেপে সে গলদ হচ্ছে, শিক্ষাবিধি দিয়ে এরা ছাঁচ বানিয়েছে কিন্তু ছাঁচে ঢালা মনুষ্যত্ব কখনও টেকে না সজীব মনের তত্ত্বের সঙ্গে যদি বিদ্যার তত্ত্ব না মেলে তা হলে হয় একদিন ছাঁচ হবে ফেটে চুরমার, নয় মানুষের মন যাবে মরে আড়ষ্ট হয়ে, কিম্বা কলের পুতুল হয়ে দাঁড়াবে।’ রাজধানী মস্কোর এক অভিজাত হোটেলে কবির থাকার ব্যবস্থা ছিল। সেখান থেকে সবুজ ঘন অরণ্যভূমি থেকে বহুদূরে গ্রামের কুটির সারি তাঁর আনন্দের খোরাক হয়েছে। গ্র্যান্ড হোটেলটি ছিল আয়তনে অনেক বড় কিন্তু ভেতরের আসবাবপত্র অত্যন্ত সাধারণ মানের। কবির ভাষায় নবাবী আমলের চেহারা দেখা যাচ্ছে কিন্তু যেন ছেঁড়া জামায় সোনার বোতাম লাগানো। ধনের প্রাচুর্য কোথাও নেই কিন্তু এমন সর্বব্যাপী নির্ধনতাও পৃথিবীর আর কোন জায়গায় আছে কিনা জানি না। প্রয়োজনীয় এবং অতি আবশ্যক ধন সম্পদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়ানো আত্মসম্মানবোধ এবং অধিকারের মাত্রা সেখানেই উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই সহাবস্থানে নিজেদের দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে। মস্কোয় ধনের বৈষম্যকে সবচেয়ে নিন্দনীয় বলে মনে হয়। কবির ভাষায় ‘এখানে এসে সবচেয়ে যেটা আমার চোখে ভাল লেগেছে সে হচ্ছে এই ধন গরিমার ইতরতার সম্পূর্ণ তিরোভাব।’ শ্বেত রাশিয়ার না আসলে বোঝাই যেত না সমস্ত পুরনো আবর্জনা ধুয়ে মুছে সাফ করে নিত্য নতুন আবিষ্কার আর অর্জনকে কিভাবে জীবন আর সমাজের অংশীদার করা যায়। যা শুধু বিস্ময়েরই নয় অনেক দুর্লভ অভিজ্ঞতাও নিজের চিত্তকে আনন্দাবেগে ভরিয়ে তোলে। যা বলা যায় শুধুমাত্রই তীর্থ দর্শন। রাশিয়ায় না আসলে জীবনটা প্রায়ই অসম্পূর্ণ হয়ে থাকত বলে কবির বদ্ধমূল ধারণা। রাশিয়ার বিপ্লব সর্বমানুষের দ্বারে পৌঁছে আপন মহিমায় নিজেদের সর্বগামিতা প্রমাণ করছে। তবে চিরদিন টিকবে কিনা সেটা নিয়েও রবীন্দ্রনাথের সংশয় ছিল। রবীন্দ্রনাথ রাশিয়া যাবার চার বছর আগে ১৯২৬ সালে কলকাতায় এক দেশ কাঁপানো ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয় যা দেখে তিনি শিউরে উঠেছিলেন। রাশিয়ায় খ্রীস্টান, ইহুদী, মুসলমান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস। এ নিয়েও কবির কৌতূহল হলো নিজ দেশের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে। কিন্তু রাশিয়ানদের জবাব এসেছিল এভাবেÑ জাতিভেদ, বর্ণভেদ কিংবা ধর্মীয় বিভাজন এক সময় তাড়িত করলেও কয়েক বছরে সে সবকে তারা জয় করতে সমর্থ হয়েছে। সত্য সংবাদ প্রকাশের যে স্বাধীনতা এবং অধিকার সেটাও আজ সোভিয়েত জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার সাধারণ মানুষের যে সুস্থ, স্বাভাবিক আর আধুনিক জীবনযাত্রা তার সঙ্গে নিজ দেশের জনমদুঃখী চাষীদের প্রতিদিনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের তুলনা করতে গিয়ে অসহায় এবং নিঃসম্বল প্রজাদের প্রাণহীন জীবনকে অসাড় আর নির্জীব বলে মনে হয়। এ দেশের জনগণই আজ পর্যন্ত সচেতন কিংবা জাগ্রত হলো না কিভাবে তাদের মঙ্গল হতে পারে। যে অশিক্ষা আর ধর্মমোহের মধ্য দিয়ে রাশিয়ার জারের রাজত্ব সেটাও সে দেশের জনগণকে পর্বত প্রমাণ বাধায় তাদের সমস্ত অধিকার আর স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। সেখানে পৌরুষ আর ব্যক্তিত্ব হয়েছিল ভূলুণ্ঠিত। কিন্তু বর্তমানে একনায়কের আধিপত্যের মধ্যেও শিক্ষা সম্প্রসারণ কার্যক্রম তাদের মূর্খ আর মূঢ়তা থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি দিয়েছে। কারণ হিসেবে কবি ব্যক্তি বা দলগত সম্পদ কিংবা ক্ষমতা লিপ্সার অভাবই সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের অন্যতম নিয়ামক শক্তিকেই বিবেচনায় এনেছেন। যে দৃঢ় শক্তি বলে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া রাষ্ট্রের সার্বিক সার্বভৌমত্বই লাভ করেনি সাধারণ মানুষকেও দিয়েছে এক অনন্য জীবনযাত্রার অপার সম্ভাবনা। মার্কসীয় অর্থনীতিকে নিয়ামক ধরে উৎপাদন ব্যবস্থার যে বিকাশমান ধারা তা সর্বসাধারণের মধ্যে প্রত্যেক্ষভাবেই প্রয়োগ করা হয়েছে যা পুরো সমাজ কাঠামোকেই নতুন মাত্রা দিয়েছে। আর সেই কারণে পুরনো সব বিধিবিধান থেকে শুরু করে সমস্ত সামাজিক আবর্জনাকে মূল শেকড় থেকে উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। সাবেকী আমলের ভূমি ব্যবস্থা ও চিরায়ত অভ্যাসের সর্ববিধ আরাম আয়েশ তিরোহিত করে ভাঙ্গনের যে উৎসাহ আর উদ্দীপনা সেটাই রূপান্তরিত রাশিয়াকে তার প্রত্যাশিত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। নারী জাতিকেও এক নতুন মাত্রায় রাশিয়ার বলশেভিক সরকার অধিষ্ঠিত করেছে। কর্মস্থলে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র, বিশ্রামাগার, রান্নার যাবতীয় সাজসরঞ্জামসহ প্রাসঙ্গিক অনেক কিছু নারী পেশাজীবীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তারা নিশ্চিন্তে, নিরাপদে, নির্বিঘেœ তাদের প্রতিদিনের কর্ম এবং জীবন প্রবাহ অতিবাহিত করতে পারে। ১৯১৭ সালের ৭ নবেম্বর তৈরি হওয়া নতুন পথযাত্রা অক্টোবর বিপ্লব হিসেবেই সারাবিশ্বে স্বীকৃত। সর্বসাধারণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, সংগ্রাম আর মুক্তির মধ্য দিয়ে যে যুগান্তকারী সফলতা আসে তার মুগ্ধতার জায়গা মূলত অসহায়, পিছিয়ে পড়া পুরো জনগোষ্ঠী। এমনকি তা বিপ্লবের প্রাণশক্তিও বটে। ধন আর দৈন্যের মধ্যে এমন কোন ফারাক নেই যা পর্বত প্রমাণ ব্যবধান তৈরি করতে পারে। তার পরেও নতুন সমাজের নব ব্যবস্থাপনার যে ত্রুটিবিচ্যুতি কবিকে ভাবিয়ে তুলেছিল সেটাই ক্রমান্বয়ে সার্বিক কাঠামোকে তার বৈপ্লবিক অবস্থান থেকে বেসামাল করে দেয়। সেই কারণে অর্ধশত বছরেরও বেশি রাজত্ব করা বিরাট সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্ব থেকে পুরো ব্যবস্থায় ফাটল ধরায়। তারই অনিবার্য পরিণতিতে একসময় বিশ্ব তোলপাড় করা সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। লেখক : সাংবাদিক
×