নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরের নকলায় বিস্ফোরক তৈরীর বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ উদ্ধারের মামলায় গ্রেফতার হয়েছে প্রধান আসামী নব্য জেএমবি সদস্য আবুল কাশেম ওরফে আবু মোসাব (২২)। সোমবার বিকেলে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ কঠোর নিরাপত্তায় গ্রেফতারকৃত আবুল কাশেমকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মমিনুল ইসলাম। এর পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা কাশেমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজ হেফাজতে নেন। কাশেম নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের হুজুরীকান্দা গ্রামের মৃত ছাফিল উদ্দিনের ছেলে ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চন্দ্রকোনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আমিনুর রহমান নব্য জেএমবি সদস্য আবুল কাশেমের রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গোপন সূত্রে সংবাদের ভিত্তিতে প্রযুক্তিগত সহায়তায় অভিযান চালিয়ে রবিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য এবং তার সাংগঠনিক নাম আবু মোসাব।
এ বিষয়ে রবিবার রাত ৯টায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতার হওয়া আবুল কাশেম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে সে জেএমবির সদস্য এবং তার সাংগঠনিক নাম আবু মোসাব। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফেসবুকে ২ জন নতুন বন্ধুর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে।
কিছুদিন ফেসবুকিং করে ঘনিষ্ঠতার এক পর্যায়ে ওই দু’জন তাকে এক জঙ্গী সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং ইসলামের শত্রুদের নিধনের জন্য তার সদস্য হওয়ার অনুরোধ জানায়। তাদের অনুরোধে প্রাথমিকভাবে সে সাড়া দিলে তারা তাকে ফেসবুক ছেড়ে একটি বিশেষভাবে এনকোডেড মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়। পরে ওই সংগঠনের সিনিয়রদের নির্দেশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সে চন্দ্রকোনা বাজারে ফয়েজ উদ্দিনের ভাড়াকৃত ঘরটি মাসিক ৬শ টাকা ভাড়ায় সাবলেট নেয়। জঙ্গী সংগঠনের এক সদস্য গত মার্চ মাসের কোন এক রাতে ছোট ট্রাকে করে বিস্ফোরক তৈরীর জন্য ১৯ কন্টেইনার রাসায়নিক তরল পদার্থ চন্দ্রকোনা বাজারে নিয়ে ওই ভাড়াকৃত দোকানে মজুদ করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় কোন জনসমাগমে সুবিধাজনক সময়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে কোরবানীর ঈদ ও দুর্গাপূজা উৎসবের পূর্ব থেকেই পুলিশের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় তাদের কার্যক্রম পিছিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে আরও সুবিধাজনক সময়ে ওই কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরও জানান, রবিবার ভোরে আবুল কাশেম চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে তার সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় রওনা হবে- পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রযুক্তিগত সহায়তায় শেরপুর জেলা পুলিশের আভিযানিক দল ওই তথ্য পায়। পরে বিশেষ আভিযানিক দলটি প্রযুক্তিগত সহায়তায় তার যাত্রাপথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কালিহাতী থানার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দুপুর পৌণে ১টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে।
তাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নব্য জেএমবি কানেকশনের আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিস্ফোরক তৈরীর রাসায়নিক পদার্থ উদ্ধারের পরপরই আবুল কাশেম আত্মগোপনে চলে যাবার পরও নব্য জেএমবি কানেকশনেই ছিল এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: