ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ সড়ক গড়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ সড়ক গড়ার প্রত্যয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে রাস্তাও নিরাপদ করতে হবে। আমাদের বাঁচতে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে রা¯তা নিরাপদ করতেই হবে। আমরা অবশ্যই পারব, তবে এজন্য সবার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য সমন্বিত ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ‘সাবধানে চালাবো গাড়ি, নিরাপদে ফিরবো বাড়ি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রবিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালন করা হয়। এ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৮ সালে ৪৪২৭ সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় এবং এ সকল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৬৫ জন। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে যানবাহন মালিক ও চালক এবং পথচারী, যাত্রী ও জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য নিয়মিত সভা, ওয়ার্কশপ ও জনসচেতনতা কর্মসূচী অব্যাহত আছে। ফলে দুর্ঘটনার হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৬ সালে ২ হাজার ৫৬৬ সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৬৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৮৩৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭৯৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। এ পরিসংখ্যানের ওপর আলোকপাত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসছে। তবে এতে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান। আমরা চাই না সড়কে আর কোন প্রাণ অকালে ঝরে যাক। তিনি গাড়ি চালকদের উদ্দেশে বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালনা যেমনি দুর্ঘটনা ঘটায় তেমনি নিজের জীবনও ঝুঁকিতে থাকে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। আধুনিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার অন্যতম বিবেচ্য হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা। ২০১১-২০২০ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ২০৩০ এর অনুসমর্থনকারী হিসেবে বাংলাদেশে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেক নামিয়ে আনতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। মন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক একসময় মৃত্যুফাঁদ হিসেবে পরিচিত ছিল। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটসমূহ প্রশস্তকরণ ও সড়ক বিভাজক স্থাপনের ফলে এখন এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা নেই বললেই চলে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রকৌশলগত সমাধানের পাশাপাশি ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতনতাও জরুরী বলে মন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। উল্টোপথে গাড়ি না চালিয়ে আইন অনুযায়ী গাড়ি চালানোর অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ট্রাফিক আইন মেনে চললে সাধারণ মানুষও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। এছাড়া, রাস্তায় চলাচলের নিয়মকানুন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে ওবায়দুল কাদের সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহকে ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচী বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। তিন দিনের অতিবৃষ্টিতে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনা করার আগে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করার আহ্বান জানান সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, তিনদিন ধরে ঢাকায় জলজট ও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে সমালোচনাও হচ্ছে, সেটা হোক। সমালোচনা আমি প্রত্যাশা করি। কিন্তু সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করে সমালোচনা করুন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি রাস্তায় থাকি এবং সবই দেখি। আমাদের দেশে অনেকে সাংবাদিক বা এমপি নন কিন্তু গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান। এসব স্টিকার নীলক্ষেতে পাওয়া যায়। অনেক সময় দেখি এমপির স্টিকার লাগিয়ে বাজারে এসেছেন। জানতে চাইলে তারা বলেন, তিনি বাসার কাজের লোক। এরাই সড়কের নিয়ম ভঙ্গ করেন। আমি অনেক বলেছি, আমার কথা শোনেননি। এখন দুদক ধরছে, এবার বুঝুন। সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ বছর ২২ অক্টোবর প্রথমবার দিবসটি সরকারীভাবে পালিত হয়। জনসাধারণকে সচেতন করতে এ দিনটি পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সম্পর্কিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী দিবসটি খ-শ্রেণীর মর্যাদাভুক্ত করা হয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান মহাসড়ক এবং যানবাহন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন সেক্টরে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ যাত্রী এবং ৮০ শতাংশ পণ্য মহাসড়ক পথে পরিবহন করা হয়। বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, বিআরটিএর প্রধান প্রকৌশলী ইবনে হাসান আলী, হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আতিকুর রহমান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ সড়ক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, হাইওয়ে রেঞ্জ পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। বাস টার্মিনালসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের ইন্টারসেকশনে ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়। এছাড়া, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালসমূহ এবং জেলা পর্যায়ের প্রধান প্রধান টার্মিনালে সন্ধ্যার পরে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
×