ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে সংবাদসম্মেলনে নাগরিক কমিশন

বর্মী সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

বর্মী সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারে গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত নাগরিক কমিশন সদস্যরা বলেছেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছে। এ রকম নিষ্ঠুর অত্যাচার পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই হয়েছে। দু’দিনের তদন্ত শেষে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্যরা এই মন্তব্য করেন। রবিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কমিশনের সদস্য সচিব সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে করা আনান কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতা আমাদের নজরে এসেছে। আনান কমিশনের প্রতিবেদনে স্বাভাবিক চলমান গণহত্যার উল্লেখ নেই, তবে প্রচ্ছন্ন সন্ত্রাসের কথা রয়েছে। নাগরিক কমিশনের প্রতিবেদনে আনান কমিশনের সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতা অতিক্রম করে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বর্মী সরকার, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেচনার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। তিনি জানান, আরও ১০ হাজার রোহিঙ্গার জবানবন্দী সংগ্রহ করা হবে। এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বয়ান, বাংলাদেশ ও বার্মার বিভিন্ন সরকারী দলিলপত্রের ভিত্তিতে নাগরিক কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশন চেয়ারম্যান আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, সাবেক মেজর জেনারেল একে মোহাম্মদ আলী সিকদার, মমতাজ লতিফ, সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস বক্তব্য রাখেন। কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, সরেজমিন তদন্তে আমরা দুই শতাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। আমরা সেভাবে প্রতিবেদন তৈরি করব। আমাদের কমিশন কোন চাপ প্রয়োগকারী বা লবিস্ট সংস্থা নয়। তারপরও আমাদের বিশ্বাস আমাদের তদন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, আমরা মানবতা অবমাননার চির অবসান চাই। চাই মানবতার হত্যাকারীদের বিচার। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাই। শুধু বাংলাদেশের পক্ষে তা সম্ভব নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী সন্তান আসীফ মুনীর, শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী এ্যারোরা দত্ত, ব্যারিস্টার বিব বড়ুয়া, ব্যারিস্টার তাপস কুমার বল, শহীদ সন্তান তৌহিদ রেজা নূরসহ নাগরিক কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, নাগরিক কমিশনের চেয়ারম্যান আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা ও কমিশনের সদস্য সচিব আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নেতৃত্বে নাগরিক কমিশন দল শনিবার সারাদিন ও রবিবার দুপুর পর্যন্ত উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। জামায়াতী এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে-শাহরিয়ার কবির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জামায়াত মতাদর্শী এনজিও সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে এখনও জামায়াত মতাদর্শী এনজিও সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে যে তিনটি এনজিওর কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে, তারাও ভিন্ন কৌশলে সেখানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য মানবিক সাহায্য করা নয়। রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গীবাদের উস্কানি ছড়ানো। শনিবার রাতে ডিসির সম্মেলন কক্ষে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নাগরিক কমিশন। কমিশন সদস্য শাহরিয়ার কবির মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এর আগে শনিবার দিনের বেলায় কমিশন তদন্ত দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। সেখানে নির্যাতিত অনেক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন কমিশন সদস্যরা।
×