ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে মালয়েশিয়ার হার ২-১ গোলে

দশ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার ভারতের

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

দশ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার ভারতের

রুমেল খান ॥ এশিয়া কাপ হকির ফাইনাল খেলাটা নতুন কিছু নয় ভারতের জন্য। শিরোপা জেতাটাও তাই। আগের সাত ফাইনাল খেলে দু’বার জিতেছিল তারা। কিন্তু মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে রবিবার অনুষ্ঠিত অষ্টমবারের মতো ফাইনাল খেলতে গিয়ে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা এত সহজ ছিল না তাদের জন্য। কেননা প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলতে আসা মালয়েশিয়া তাদের প্রচন্ড বেগ দিয়েছে। সেই চাপ সামলে ঠিকই তারা কষ্টার্জিত জয় কুড়িয়ে নেয় ২-১ গোলে। ভারতের গোলদুটি করেন রমনদীপ সিং এবং ললিত উপাধ্যায়। মালয়েশিয়ার একমাত্র গোলটি করেন শাহরিল সাবাহ্। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়া হলো না মালয়েশিয়ার। তাদের হারিয়ে দশ বছর পর আবারও এশিয়া কাপ হকির শিরোপা (অপরাজিত) পুনরুদ্ধার করে ট্রফি জিতে উল্লাসে মেতে উঠলো ‘চাক দে ইন্ডিয়া’র ভারত। এর আগে ২০০৩ ও ২০০৭ সালে টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। মালয়েশিয়া এবারই প্রথম ফাইনাল খেলে রানার্সআপ হলো। তারা সবচেয়ে বেশি চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে (সর্বাধিক ৫ বার; ১৯৮২, ১৯৯৪, ১৯৯৯, ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে)। রবিবারের ফাইনালে ফেভারিট ছিল ভারত, আর আন্ডারডগ মালয়েশিয়া। ভারতের র‌্যাঙ্কিং ৬, মালয়েশিয়ার ১২। এই আসরে ভারত সুপার ফোরের ম্যাচে মালয়েশিয়াকে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল। ফলে ফাইনালে জিতে প্রতিশোধ নিতে পারলো না মালয়বাহিনী। তবে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই রানার্সআপ হওয়াটাও নিশ্চয়ই কম কৃতিত্বের নয় তাদের জন্য। খেলাশেষে চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে পুরস্কৃত করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, এশিয়ান হকি ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী তৈয়ব ইকরাম এবং ফেডারেশনের সভাপতি ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার। ফাইনালের আগে দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। এতে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৬-৩ গোলে হারিয়ে পাকিস্তান তৃতীয় স্থান অধিকার করে। চতুর্থ হয় কোরিয়া। সবমিলিয়ে সাত ম্যাচ খেলে মাত্র এক ম্যাচে জিতে পাকিস্তান টুর্নামেন্ট শেষ করে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। কোরিয়া গত আসরের চ্যাম্পিয়ন এবং সর্বাধিক চারবারের শিরোপাধারী। সর্বশেষ (২০১৩) আসরেও তৃতীয় হয়েছিল পাকিস্তান। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তৃতীয় হলো তারা। এখানেই শেষ নয়, ২০১৩ আসরের সেমিফাইনালে এই দক্ষিণ কোরিয়ার কাছেই ১-২ গোলে হেরে ফাইনালে যাবার স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছিল পাকিদের। মালয়েশিয়ার ইপোতে সেই হারের শোধ তারা তুললো এবার বাংলাদেশের ঢাকায়। যদিও এবার সুপার ফোরে একবার মুখোমুখি হয়েছিল দু’দল। ম্যাচটিতে কেউই জিততে পারেনি (১-১)। ফাইনাল এবং তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের আগ পর্যন্ত এক ম্যাচে দুই দল মিলে সর্বোচ্চ গোল হয়েছিল ৯টি। তাও মাত্র একটি ম্যাচে। গত ১২ অক্টোবর ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়া ৭-২ গোলে হারায় ওমানকে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের স্কোরলাইন ছুঁয়ে ফেলে কোরিয়া-ওমান ম্যাচের মোট গোলসংখ্যাকে। মজার ব্যাপা- গ্রুপপর্বের ওই ম্যাচের বিজয়ী দল ছিল কোরিয়া এবং তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের বিজিত দলও সেই কোরিয়াই। রবিবারের স্থান নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানের এজাজ আহমেদ হ্যাটট্রিক করেন। এটা এই আসরের চতুর্থ হ্যাটট্রিক। প্রথমটি করেছিলেন পাকিস্তানেরই আবু মাহমুদ, ১১ অক্টোবর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে। ওই ম্যাচে পাকিস্তান জেতে ৭-০ গোলে। দ্বিতীয়টি করেন মালয়েশিয়ার ফাইজাল সারি। ১২ অক্টোবর ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে মালয়েশিয়া ৭-১ গোলে চীনকে হারায়। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন ফাইজাল। তৃতীয়টি ১৯ অক্টোবরের। স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ পেনাল্টি শূটআউটে ৪-৩ (৩-৩) গোলে হারায় চীনকে। ওই ম্যাচে চীনের দু তালাকে হ্যাটট্রিক করেন। উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩২ বছর পর আবারও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপ হকির আসর। এই আসরে বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থান লাভ করে। এর ফলে পরবর্তী এশিয়া কাপের আসরে বাছাইপর্বে না খেলে সরাসরি মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এই আসর আয়োজন উপলক্ষে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল আলোচিত ফ্লাডলাইট স্থাপন ছাড়াও স্টেডিয়াম, গ্যালারি, প্রেসবক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কার করে। এশিয়ান হকি ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী তৈয়ব ইকরাম বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের আয়োজন এবং ভেন্যুর ভূয়সী প্রশংসা করেন। সবমিলিয়ে এই আসরটি বাংলাদেশ তথা বিশ্ব হকিপ্রেমীদের হৃদয়ে যে আলোড়ন তুলেছে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
×