ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের একটি ইট ভাটার ধোয়ায় চার স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০০:৪২, ২২ অক্টোবর ২০১৭

বরিশালের একটি ইট ভাটার ধোয়ায় চার স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেষা সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চর উলালঘুনী এলাকার “জিটিএল” নামের ইটভাটার কারনে দুইটি গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার হুমকির মুখে পরেছে। পাশাপাশি ইটভাটার ধোয়ার কারনে চরবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উলালঘুনী সরকারী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে চরম ভোগান্তির শিকার হলেও ইটভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অদ্যবর্ধি কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ওইসব স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, ইটভাটার ধোয়ার সাথে সাথে আগুনের ফুলকি এসে উড়ে পরে বিদ্যালয়গুলোতে। তাই দীর্ঘদিন ধরে ইটভাটা বন্ধের দাবীতে নানা কর্মসূচী পালন করা সত্বেও রহস্যজনক কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় রাঢ়ীমহল গ্রামের বাসিন্দা এসএম সাইফুল আলম সায়েম, জামাল হোসেনসহ একাধিক বাসিন্দারা বলেন, গোলাম তারেক লাবু প্রায় ২০ বছর পূর্বে ওই ইটভাটা চালু করেন। নগরীর ৪নং ওয়ার্ডের উলালঘুনী মৌজায় স্বল্প পরিমান জমির ওপর সীমিতভাবে ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করা হলেও ক্রমেই তার পরিধি বাড়িয়ে দেয়া হয়। কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন কবলিত তীরের কৃষি জমির মালিকদের ভুল বুঝিয়ে মাটি কেটে ইট প্রস্তুত শুরু করে প্রভাশালী গোলাম তারেক লাবু। এতে রাস্তার পরের কৃষি জমিতে সৃষ্টি হয় বড় বড় দীঘি। সেই সব দীঘির তীর কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন কবলিত হয়ে দ্রুতই বিলীন হয়ে যায় রাস্তার পরের দুই থেকে তিন একর কৃষি জমি। ইটভাটার কারনে শুধু ওই জমিই নয়, ১০ ফুটেরও অধিক প্রশস্থ রাস্তাসহ শত একর কৃষি জমি, ভিটে, বাগান, ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের কবলে পরে ইটভাটাটি সরিয়ে আনতে আনতে রাঢ়ীমহল মৌজার আবাসিক ঘণ জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসে পৌঁছেছে। স্থানীয়রা আরও জানান, ইটভাটার ছোবলে কীর্তনখোলার গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চরউলালঘুনী মৌজার কয়েকশ’ একর কৃষি জমি। এছাড়াও হুমকির মুখে পরেছে রাঢ়ী মহল ও উলালঘুনী মৌজার আবাসিক এলাকার শতাধিক পরিবার। নগরীর ৪নং ওয়ার্ড উলালঘুনী এলাকার বাসিন্দা সামসুজ্জামান সান্টু জানান, ওইসব এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দারা চর উলালঘুনীর কৃষি জমির উৎপাদিত ধানের ইরি ও আমন চাষ করে বছর পার করতো। এছাড়া বাড়তি হিসেবে মুসুরী, মুগ, কলাই চাষ করে তা বিক্রি করে বাড়তি অর্থ আয় করতো। ইটভাটার কারনে সকল চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার বিভিন্ন ফলদ গাছে এখন আর ফল ধরেনা। খেজুর, বট, পাকুর, তালসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এখন আর নেই। ওইসব গাছ ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জমি, ফসল, গাছপালা হারিয়ে এখন ভিটে বাড়ি হারানোর হুমকিতে রয়েছে। বর্তমানে ইটের জন্য উমর আলীর বাড়ি ঘেষে ভেকু যন্ত্র দিয়ে গভীর থেকে মাটি কাটার কাজ চলছে। এতে ওই বাড়ির ১৫/২০টি ঘর ভূমি ধ্বসসহ কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গনে হুমকিতে পরেছে। স্থানীয়রা ইটভাটার মাটি কাটার কাজে প্রতিবাদ করলেও মাটি উত্তোলন বন্ধ করা হয়নি। উল্টো ইটভাটার মালিক গোলাম তারেক লাবু হুমকি দিয়ে জানিয়েছেন, প্রশাসনের বড় বড় কর্তা ব্যক্তি ও বিএনপি-আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাকে ম্যানেজ করেই তিনি কাজ করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, শুস্ক মৌসুমকে সামনে রেখে ইটভাটা জুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। যে জমিতে একসময় ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হতো। সেই জমিতে ইট তৈরি করে রাখার মাঠ করা হচ্ছে। ফসলি জমি ক্ষত বিক্ষত করে মাটি কেটে স্তুপ করা হচ্ছে। গাছ দিয়ে ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হলেও নদীর তীর ঘেষে নির্মান করা হয়েছে কাঠ চেরাইয়ের স্ব মিল। কোন রাখ ঢাক ছাড়াই তীরে রয়েছে বড় বড় খন্ডের কাটা গাছের বিশাল স্তুপ। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল অফিসের সহকারী পরিচালক এএইচএম রাশেদ বলেন, ওই ইটভাটা নিয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×