নিজস্ব সংবাদদাতা, মোংলা ॥ মংলা বন্দরের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না। বন্দরটির উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দীর্ঘদিনেও গড়ে ওঠেনি। বন্দর-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে এখানকার প্রধান সমস্যা সমুদ্র থেকে জেটিতে জাহাজ চলাচলের চ্যানেলের প্রয়োজনীয় নাব্যতা না থাকা এবং শুল্কায়ন জটিলতা। আর এ দুই সংকটে ব্যবসায়ীরা পদে পদে হোঁচট খাচ্ছেন। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বন্দরের এ খড়গ কেটে যাবে শিগ্রই। চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিন হাজার কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্প পাল্টে যাবে মংলা বন্দর। এছাড়া বন্দরে বেশি ড্রাফটের জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতেল অ্যাংকরেজ এরিয়াগুলোতে ৭৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান বলেন, চ্যানেলে ডুবে যাওয়া র্যাক (বড় জাহাজ) এখন নাব্যতা রক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। ডুবে যাওয়া র্যাকগুলো তুললে চ্যানেলের গতিপথই বদলে যেতে পারে। এ কারণে এটিকে অন্যতম সংকট হিসেবে চিহ্নিত করে র্যাকগুলো উত্তোলনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছাকাছি সমুদ্রবন্দর হবে ‘মংলা বন্দর’। তখন এ বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি খরচ চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অনেক গুণ কমে যাবে। সংগত কারণেই ব্যবসায়ীরা অর্থ সাশ্রয়ে এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। তখনকার চাপ সামলানোর জন্যই বন্দর উন্নয়নে নানামুখী প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, মংলায় বহির্নোঙর থেকে জেটি পর্যন্ত ১৩১ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রায় ১৭টি ডুবে যাওয়া র্যাক রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি র্যাক ‘অধিক বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে বন্দরের পাঁচটি জেটির কার্যক্ষমতার অর্ধেকটা ব্যবহূত হচ্ছে। বাকি অর্ধেক এখনো অব্যবহূত থাকছে। আগামী দিনের চাপের কথা চিন্তা করে পাঁচটি জেটির সম্পূর্ণ ব্যবহার এবং আরও চারটি নতুন জেটি ও দুটি ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মংলা বন্দরের চিফ প্ল্যানিং কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, নাব্যতা নিশ্চিত করতে পশুর চ্যানেলে ইতিমধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়েছে। কিন্তু এতে সাড়ে ৭ থেকে ৮ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে আসতে পারে না। ফলে অ্যাংকরেজ এরিয়াগুলো, আকরাম পয়েন্ট ও হারবাড়িয়ায় বেশি ড্রাফটের জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতে আরও ৭৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, মংলা বন্দরের উন্নয়নে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত বছর তিন হাজার কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্পের এমইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্পে জাহাজ থেকে সরাসরি বন্দরে পণ্য নামাতে এসটুএস (শিপ টু শোর) কনটেইনার হ্যান্ডলিং, আধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল, বহুতলবিশিষ্ট গাড়ি রাখার মাল্টি স্টোরেজ কার পার্ক নির্মাণ, ১১টি সার্ভে ও টাগবোট ক্রয়, চার লেনের সড়ক উন্নয়নসহ আটটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে মংলা বন্দর।
তবে বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখানকার দীর্ঘদিনের শুল্কায়ন জটিলতা দূর করা জরুরি।
মংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান হোসেন খান জানান, মংলা বন্দরে রাজস্ব বোর্ডের আদেশ ‘ত্বরিত খালাস পদ্ধতি’ এখানে অমান্য করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায়ই জাহাজজট ও বহির্নোঙরে ২৫ দিন অপেক্ষার মতো উদাহরণ আছে। এর পরও আমদানি-রপ্তানিকারক ও শিপিং কোম্পানিগুলো মংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহ দেখায় না। এর অন্যতম কারণ ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানি। ফলে ইতিমধ্যে মংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনাগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্দরকে আমদানিকারকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে শুল্ক জটিলতা দূর ও পণ্যের কায়িক পরীক্ষার নামে হয়রানি বন্ধ করা খুবই জরুরি। এ ছাড়া হার্ডওয়্যার, ধাতব পণ্য, আসবাবপত্রসহ পস্তাবিত প্রায় ৫০টি পণ্য বাধ্যতামূলক মংলা বন্দর দিয়ে আমদানির নির্দেশ দেওয়া হলে আমূল পাল্টে যাবে মংলা বন্দর।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: