ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মোঃ জয়নাল আবেদিন

অভিমত ॥ বিশ্বমানবতা এবং শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২২ অক্টোবর ২০১৭

অভিমত ॥ বিশ্বমানবতা এবং শেখ হাসিনা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের দলে।’ সেদিন প্রমাণ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা এবং বাঙালী জাতির বিশাল আত্মার অধিকারী। আজ আবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন আজকের বিশ্বে শেখ হাসিনাই শ্রেষ্ঠ। তিনি প্রমাণ করলেন বাঙালী জাতি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি, বাঙালীর বিশাল অন্তর আছে, ভালবাসা আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে জাতিসংঘে ভাষণে বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যা নিয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন,’ কী অপরাধ ছিল সাগরে ডুবে যাওয়া সিরিয়ার ৩-বছর বয়সী নিষ্পাপ শিশু আইলান কুর্দির? কী দোষ করেছিল ৫-বছরের শিশু ওমরান, যে আলেপ্পো শহরে নিজ বাড়িতে বসে বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে? শরণার্থী সমস্যাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য সেদিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন। সেদিন কুর্দি শিশুর সাগরে ভেসে উঠার চিত্রটি প্রতিটি বিশ্ববাসীকে নাড়া দিয়েছিল। সেদিন বিশ্ববাসী বলেছিলÑ ঐঁসধহরঃু যধং নববহ ফৎড়হিবফ রহঃড় ঃযব গবফরঃবৎৎধহবধহ ঝবধ. যে মানবতা সেদিন সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিল তা ভাসতে ভাসতে বঙ্গোপসাগর হয়ে আজ নাফ নদীর তীরে এসে ভিড়েছে! তীরে দাঁড়িয়ে মমতাময়ী মায়ের মতো তাঁকে কোলে তোলে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যিনি নিজের দেশেই প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামে পাহাড়ী ধস, দেশব্যাপী বন্যা, হাওরের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁর ১৬ কোটি মানুষের অন্ন জোগাড় করতে। পর্যাপ্ত চাল মজুদ করে বাংলার জনগণকে বার বার আশ্বস্ত করেছেন। এবার জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা সাগরের ঢেউয়ের চেয়েও ভয়ঙ্কর মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢেউ দেখেও তিনি বিচলিত হননি। শরণার্থীদের আশ্বস্ত করে বিশ্বের শান্তির দূত বললেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে ২-৪-৫ লাখ শরণার্থীকেও খাবার দিতে পারব।’ এই না বঙ্গবন্ধুকন্যা, এই না বঙ্গমাতা, বিশ্বমাতা! কার সাহস আছে, কে বলতে পারত এমন একটি কথা? এখন বলতে হবেÑঐঁসধহরঃু রং হড় সড়ৎব ফৎড়হিবফ রহঃড় ঃযব ঝবধ ড়ৎ বাবহ রহ ঃযব ৎরাবৎ ঘধভ, ঝযবরশয ঐধংরহধ ঢ়ঁষষবফ রঃ ঁঢ়. আজকে বিশ্বের দিকে তাকান। সেই ইরান, ইরাক ও কয়েত যুদ্ধ থেকে শুরু করে পাকিস্তান আফগানিস্তান হয়ে সিরিয়া, ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং আজকের মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, জাতিগত নিধন! আমরা বিশ্ববাসী আজ কোথায় দাঁড়িয়ে? আর বিশ্বে কোন নেতা, জাতিসংঘ? কোথায় আপনারা? সত্যিই চিন্তার বিষয় যে, এ আবার কোন খেলা, কার খেলা? এই খেলা কি এবার বাঙালী জাতিকে হারিয়ে দেয়ার কোন খেলা? জঙ্গীবাদ যেখানে সারা বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে। এক কথায় বলতে বিশ্বকে পরাজিত করেছে। সেখানে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদকে শেখ হাসিনা কঠোর হস্তে দমন করে বাঙালী, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে করেছেন শংকামুক্ত। আজ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তিনি যেভাবে ভূমিকা নিয়েছেন তাও প্রশংসার দাবিদার। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ধন্যবাদ পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, প্রাক্তন সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিয় ডাঃ দিপুমনি আপাকে তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ এমন একটি প্রস্তাব সংসদে পেশ করার জন্য। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে অবশ্যই মিয়ানমারকে ফেরত নিতে বাধ্য করাতে হবে। তা না হলে, আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। আজকে মানবিক কারণে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মমতাময়ী নেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আশ্রয় দিয়েছেন। নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে নেত্রী তাদের কাছে ছুটে গিয়েছেন, তাদের করুণ কাহিনী শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি, বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। তারাও নিজের জীবন ফিরে পেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু দিন যত যাবে ততই এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো, তাদের পুনর্বাসন করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে, তারাও নাখোশ হতে শুরু করবে এবং আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সুযোগে তাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটবে প্রতিক্রিয়াশীল কিছু রাজনৈতিক দল। এই রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে আইএস-এর উত্থান যাতে দানা বাঁধতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা জরুরী। অচিরেই তাদের ফেরত পাঠানোর সব ব্যবস্থাকল্পে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে সকল মহলের সচেতনতা ও সহযোগিতার হাত দরকার। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাপারটি আমাদের জন্য খুব নিরাপত্তাহীন। এই লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য শেখ হাসিনাকে আল্লাহ অবশ্যই পুরস্কৃত করবেন। মানবতার জয় হোক। জয়তু শেখ হাসিনা। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×