ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস! ;###;দুই দিন পেরিয়ে গেলেও গঠিত হয়নি তদন্ত কমিটি ;###;তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে রিপোর্ট করলেও প্রতিবাদলিপি প্রেরণ;###;উপাচার্য বলছেন, ‘প্রশ্ন রাতে নয়, সকালে ফাঁস হয়েছে’

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ॥ নীরব রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৩:১০, ২১ অক্টোবর ২০১৭

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ॥ নীরব রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতেই ফাঁস হয়ে যায়। আর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ (স্নাতক) সম্মান শেণির ভর্তি পরীক্ষা। প্রশ্ন ফাঁসের দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। যদিও পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্ন ফাঁসের যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রিপোর্টারের কাছে রয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি মানতে নারাজ প্রশাসন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, ‘প্রশ্ন রাতে নয়, সকালে ফাঁস হয়েছে।’ এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হবার পরে জালিয়াতির দায়ে আটককৃতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই পরীক্ষার আগের রাতেই ইংরেজি অংশটির প্রশ্ন পেয়ে যান। তাছাড়া, পরীক্ষার দিন সকালে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করতে দেখা যায়। এ কারণে পরীক্ষার দিন অনেক শিক্ষার্থী ১০/১৫ মিনিট পরে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন। যদিও পরীক্ষার গার্ডকে তারা বলেছিলেন, বৃষ্টির জন্য দেরি হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই ই-মেইল ও ফেইসবুকে অনেক শিক্ষার্থীর হাতে প্রশ্ন চলে আসে। পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠিতব্য প্রশ্নের সঙ্গে আগের রাতে পাওয়া প্রশ্নপত্রের হবহু মিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে রাতেই অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন লাগলে ফোনে যোগাযোগ করেন। আর এই প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও জানা গেছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৫৩ ও ক্যাম্পাসের বাইরে ৩৩ কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে দশটি কেন্দ্র থেকে এটিএম কার্ডের মতো দেখতে ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করায় ১৫ জনকে আটক করা হয়। আটককৃত ১০ জনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষায় জালিয়াতের বিষয়ে তারা মিটিং করে। সেখানে সবাই ছিল অপরিচিত। তারা জানান, প্রত্যেক গ্রুপে ৮-১০ জন সেই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। একজন বলছেন, আমাদের ১০ জন গ্রুপের একটি মিটিং হয়েছে। আর এই ১০ জনের মধ্যেই কেবল আমি ধরা খেয়েছি। বাকি নয় জন জালিয়াতি করে ধরা খায়নি। এ বছর ঘ ইউনিটে ১ হাজার ৬১০টি আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করে। অর্থাৎ প্রতি আসনের বিপরীতে লড়েছে প্রায় ৬০ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। তীব্র এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় উদ্বীগ্ন অনেক শিক্ষার্থী। প্রশ্ন ফাঁসের খবর পত্রিকার পাতায় দেখে কান্নায় ফেঁটে পড়েন অনেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি জালিয়াতি হয়েছে। যদি পরীক্ষা আবার না হয় তাহলে বৃহৎ একটি জালিয়াতকে ঢাবিতে প্রশ্রয় দেয়া হবে। এবং এদের দ্বারাই বিশ^বিদ্যালয়ের সব অপকর্ম সম্পন্ন হবে।
×