নিজস্ব সংবাদাতা, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে জলাবদ্ধতার আরও অবনতি হয়েছে। চার শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে আছে। হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। নিম্নচাপ, টানা প্রবল বর্ষন ও আমাবশ্যার প্রভাবে সকল নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে কোড়ামারা, কালশিরা, ডুমুরিয়া, উজলকুড়, গোপালকাঠি, যাত্রাপুর, বিষ্ণুপুর, রাধাবল্লভ, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মোল্লাহাট, কচুয়াসহ জেলার ১৩-টি স্থানে সড়ক ও বেড়িবাঁধ ধ্বসে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। কাচা-পাকা সড়কের অংশবিশেষ নদীতে চলে গছে অনেক স্থানে। বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা ঝড়ো হাওয়ার কারনে অসংখ্য গাছ ও বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে পড়েছে।
ফলে সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ মারত্মক ব্যাহত হচ্ছে। সহস্রারাধিক পুকুর ও মৎস্য ঘের ভেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষেত, রাস্তাঘাট জলে তলিয়ে আছে। শহরের রাস্তায়ও জমেছে পানি। পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ রান্নাবান্না করতে পারছেনা। বসত ঘরে পানি উঠে ফ্রিজ-টিভিসহ দামি আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। এসব স্থানে সরকারী-বেসরকারী অফিস, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্টান, স্কুল-মাদ্রাসা, বাড়ি-ঘর, পানবরজ ও ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মাছ চাষের নামে সরকারী খালে অবৈধ বাঁধ দেওয়ায় গ্রামে গ্রামে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার নিয়েছে।
সাইনবোর্ড-কচুয়া সড়কের খলিশাখালি এলাকায় গাছ পড়ে তিনটি ট্রান্সফরমার-সহ দু’টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। ফলে কচুয়া উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট-বরিশাল-খুলনা সড়ক যোগাযোগ ব্যহত হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৬১ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্টান অঘোষিত বন্ধ ছিল বলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মুজিবর রহমান বলেন, ‘সদর উপজেলা কমপক্ষে ৮টি স্থানে বাঁধ ও সড়ক ভেঙ্গে তীব্র স্রোতে রাতে পানি ঢুকছে। পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ রান্নাবান্না করতে পারছেনা। মৎস্য ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।’ প্রায় একই কথা জানান, চিতলমারী, মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যথাক্রমে মুজিবর রহমান শামিম, সাহিনুল আলম সানা, শেখ শরিফুল কামাল কারিম ও মাহফুজুর রহমান।
মোড়েলগঞ্জের বহরবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রিপন তালুকদার জানান,ওই ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী বাজার হতে শুরু করে দেড় কিলোমিটার ইট সোলিং রাস্তা ও কাটাখাল ব্রীজ এলাকা হতে সূর্যমুখী খাল পর্যন্ত আধা কি.মি. রাস্তা ধ্বসে গেছে। পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার জানান ওই ইউনিয়নে শতশত একর ফসলের ক্ষেত ও মৎস্য ঘের ডুবে রয়েছে। খাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যানম্যান মাস্টার আবুল খায়ের জানান, পানির চাপে তার ইউনিয়নে ৩ কি:মি: ইট সোলিং ও ৬ কি.মি কাচা রাস্তা ধ্বসে পড়েছে। বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শংকর চক্রবর্ত্তী জানান, তার এলাকায় ২টি স্থানে বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। কাড়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ বশিরুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় ৩টি স্থানে বাঁধে উপচে পানি ঢুকে কমপক্ষে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ষাটগম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, তার এলাকায় অসংখ্য মৎস্য ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে।
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, টানা ভারী বর্ষণে জেলার ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাছের খামার, পানের বরাজ, ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে এবং গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে নদী-খালের অবৈধ বাঁধ দ্রুত কেটে দেওয়ার এবং ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করতে বলা হয়েছে।